মো.মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ডিজিটাল চক্র সক্রিয় রয়েছে। দিন দিন এদের সক্রিয়তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে এ চক্রের একাধিক সদস্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে থেকেও ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচার চালাচ্ছে। চক্রটি এসব সদস্যরা বিদেশে বসেই সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট কিংবা ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রশাসনের নজর এড়াতে দেশে কনটেন্ট বা ভিডিও তৈরি করে বিদেশ থেকে আপলোড করছে তারা। বিদেশে যারা এই ধরণের সরকার বিরোধী অনলাইন অপতৎপরতার সাথে জড়িত তাদেরকে শনাক্ত করে দেশে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিদেশে বসে দেশের বিরুদ্ধে যারা ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার ও বিষোদ্গার করছে, তাদের তালিকা তৈরির জন্য প্রবাসীদের প্রতি সম্প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্প্রতি সরকারি সফরে আবুধাবির একটি হোটেলে আরব আমিরাতপ্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজিত সংবর্ধনায় মন্ত্রী এ আহ্বান জানান। ওই সংবর্ধনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিদেশে বসে দেশ ও সরকারবিরোধী প্রচার বন্ধে এবং প্রবাসে আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখা প্রবাসীদের দায়িত্ব।
জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে এ ধরনের চক্রের বিষয়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। দেশে-বিদেশে নাম পরিচয় গোপন করে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী চক্রান্তকারীদের অপপ্রচারকারী ঠেকাতে অনলাইনে ‘রিয়াল টাইম মনিটরিং’ করছে আইনশৃঙ্খল বাহিনীর একাধিক বিশেষায়িত দল। সাইবার অপরাধ কমিয়ে আনতে র্যাব-পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। র্যাবের ‘সাইবার নিউজ ভেরিফিকেশন সেন্টার’ অপপ্রচারকারী চক্রের সন্ধানে নিয়মিত কাজ অব্যাহত রেখেছে বলেও জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে বা দেশের বাইরে যেই অপপ্রচার চালাবে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তদন্ত করে গ্রেফতার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। দেশে সাইবার লিংক বন্ধ করার পাশাপাশি বিদেশ থেকে অপপ্রচার বন্ধেরও চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে বিদেশে শনাক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে কূটনৈতিক চ্যানেলে রাষ্ট্রদূতদের চিঠি দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এছাড়া ন্যাশনাল সেন্টার ব্যুরোর (এনসিবি) মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়ে কয়েকজন গুজব রটনাকারীকে দেশে ফেরত পাঠাতেও বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে এ চক্রে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল অঙ্গনে হাই-প্রোফাইল কিছু ব্যক্তিও। আবার কিছু সংগঠনও বিভিন্ন সময় সভা-সমিতি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছে। বাঁশেরকেল্লা, বাঁশেরকেল্লাইউএসএ, আন্দোলননিউস, অপারেশন অফ বাংলাদেশ, ডেমোক্রেসি ওয়ার্কিং গ্রুপ, ফাইট ফর রাইট ইন্টারনেশনাল ইত্যাদি। এ ধরনের নামসর্বস্ব আরো উল্লেখযোগ্য সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে নিন্দা ছড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধেও গোয়েন্দারা তথ্য সংগ্রহ করছেন বলে জানা গেছে কয়েকটি সূত্রে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, অপপ্রচারের অভিযোগে নির্বাচনের আগে ও পরে প্রায় শ’খানেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে এবং তদন্ত করে সাইবার গোয়েন্দারা বিভিন্ন লোমহর্ষক তথ্য পেয়েছে। প্রশাসনের নজর এড়াতে দেশে কনটেন্ট বা ভিডিও তৈরি করে বিদেশ থেকে আপলোড করছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকে গুজব ছড়াচ্ছে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি। তারা সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী অপপ্রচারের চেষ্টা করছে।
সাইবার অপরাধ তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের বাইরে থেকে অপপ্রচারের জন্য পরিচালিত অর্ধশতাধিক ইউটিউব চ্যানেল ও তিন শতাধিক ফেসবুক আইডি বন্ধ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বন্ধ করা হয় বিডি পলিটিকো, বাঁশের কেল্লাসহ একশোর বেশি পোর্টাল, নিউজ ডোমেইন।
জানা গেছে, র্যাবের সব ব্যাটালিয়নে সাইবার মনিটরিং সেল রয়েছে। গুজব ও উসকানি বন্ধে যথেষ্ঠ কারিগরি সক্ষমতা ও দক্ষতা রয়েছে র্যাবের। সাইবার জগতে প্রতিনিয়ত নজরদারি ও তদন্ত কার্যক্রম চলছে। অনেক সচেতন নাগরিক নিজ থেকেই গুজব ও অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে তথ্য দিচ্ছেন। প্রতিদিনই অসংখ্য অভিযোগ আসছে। অভিযোগের যাচাই-বাছাই শেষে গুজব বা অপপ্রচারকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে।