দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে গতকাল দুপুরে তিন ভুয়া কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তারা দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণা করছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রধান কার্যালয়ের নিরাপত্তা বিভাগ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তৎপরতায় তাদের এই অপকর্ম ধরা পড়ে।
দুদকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আটককৃতরা ওই দিন দুপুরে প্রধান কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তারা নিজেদের দুদকের বিশেষ তদন্ত বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেন এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ নথি জমা দেওয়ার দাবি করেন। তাদের আচরণ এবং কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হওয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চান।
পরিচয়পত্র যাচাই করে দেখা যায়, সেগুলো ভুয়া। আরও তদন্তের জন্য তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে তারা স্বীকার করেন যে, তারা দুদকের সঙ্গে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নন। বরং তারা সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায়ের জন্য এ ধরনের অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।
উদ্ধার হওয়া সামগ্রী
তাদের কাছ থেকে বেশ কিছু ভুয়া পরিচয়পত্র, দুদকের লোগোযুক্ত সিল, ভুয়া নথিপত্র এবং আর্থিক লেনদেনের কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা চালিয়ে আসছিল। তারা সাধারণত দুর্নীতির মামলার ভয় দেখিয়ে মানুষ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করত।
গ্রেপ্তারের প্রক্রিয়া এবং আইনি পদক্ষেপ
তিন প্রতারককে গ্রেপ্তারের পর তাদের ঢাকা মহানগর পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এই প্রতারক চক্রের আরও সদস্য রয়েছে, এবং তাদের খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে।
দুদকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “আমরা সবসময় জনগণকে সতর্ক থাকতে বলি এবং দুর্নীতির বিষয়ে আমাদের অফিসে সরাসরি অভিযোগ করতে উৎসাহিত করি। এই ঘটনার মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে, প্রতারক চক্র আমাদের নাম ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।”
জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান
দুদক জনগণকে সতর্ক করে বলেছে, দুদকের কোনো কর্মকর্তা যদি কোনো আর্থিক লেনদেন বা ঘুষের প্রস্তাব দেন, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা দুদকের হটলাইনে যোগাযোগ করতে হবে।
এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, দুদকের নাম ব্যবহার করে প্রতারণা একটি নতুন ধরণের অপরাধ, যা প্রতিরোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এই গ্রেপ্তারের ঘটনা দুদকের সতর্কতা এবং সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। একই সঙ্গে এটি জনগণকে আরও সতর্ক ও সচেতন হওয়ার বার্তা দেয়।