দেশব্যাপী ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, খুন ও সশস্ত্র হামলার ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে রাজধানীতে কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে আন্ডারওয়ার্ল্ডের অপরাধীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে নগরীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। প্রকাশ্যে অস্ত্রধারীদের মহড়ায় আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি অস্ত্রধারীদের দৌরাত্ম্য এতটাই বেড়েছে যে এলাকাবাসী আতঙ্কে মসজিদের মাইকে সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন। বিশেষ করে রাতের বেলায় দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অস্ত্রধারীদের আক্রমণে মারাত্মক আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে।
চলতি মাসে রাজধানীতে ছুরি, চাপাতি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ঘটনা কয়েক গুণ বেড়েছে। এই মাসে অস্ত্রধারীদের হামলায় অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিন জন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রামপুরা বনশ্রী এ-ব্লক এলাকায় কাঁচাবাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শ্রমিক দলের নেতা জুয়েলকে প্রতিপক্ষের একটি গ্রুপ গুলি করে হত্যা করে। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে বনশ্রী ডি-ব্লকে আনোয়ার নামে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে গুলি করে ২০০ ভরি সোনা ও লক্ষাধিক টাকা লুট করে দুর্বৃত্তরা। একই রাতে মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকায় দেশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ছিনতাইকারীরা ব্যাগ, মোবাইলসহ মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন থানায় হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা ৫ হাজার ৭৫০টি অস্ত্র লুট করে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৬৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হলেও এখনও ১ হাজার ৩৮৪টি অস্ত্র অপরাধীদের হাতে রয়ে গেছে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, অস্ত্রের সহজলভ্যতা ও সন্ত্রাসীদের দুঃসাহসের কারণে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করে। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অভিযানে ২৫ হাজার ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘শয়তান’ হিসেবে চিহ্নিত ৯ হাজার ২৫৩ জন। অন্যান্য অপরাধে গ্রেফতার হয়েছে ১৫ হাজার ১২৯ জন। তবে অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতারকৃত অনেকেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তদবিরে জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
গত রবিবার দিনগত রাত তিনটার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আগের তুলনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এরপরও সরকার যেকোনও মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। অস্ত্রধারী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
ডিএমপির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমাদের গোয়েন্দা দল বিভিন্ন অপরাধী চক্রের ওপর নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্পর্শকাতর এলাকাগুলোতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর উত্তরা, মোহাম্মদপুর, বনশ্রী, তেজগাঁও এবং যাত্রাবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং সাধারণ মানুষের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনার বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, আধিপত্য বিস্তার ও দ্বন্দ্বের জেরে সশস্ত্র ব্যক্তিরা জনবহুল সড়ক, বাজার কিংবা আবাসিক এলাকায় নির্বিচারে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করছে। অস্ত্র উঁচিয়ে হামলা ও হুমকির এই দৃশ্য নগরবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানীর রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক এলাকা ও আবাসিক মহল্লায়ও নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কা বাড়ছে, যা নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ।