বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান,বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের জানাজায় মানুষের ঢল নেমেছিল।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর নগরীর জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠে স্মরণকালের বৃহত্তম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা অনুষ্ঠানের আগে মসজিদ মাঠের দিকে নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজনের স্রোত দেখা যায়। জানাজা পড়তে আসা অনেকে হাতে নিয়ে আসেন ফুলের তোড়া। অনেকে বুকে শোকের কালো ব্যাজও ধারণ করেন। দলীয় নেতাকর্মীরা প্রিয় নেতার স্মৃতি নিয়ে নানা কথায় মুখর ছিলেন।
শুক্রবার জুমার নামাজ শুরুর আগে থেকে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ মাঠের দিকে জনস্রোত দেখা দেয়। নামাজের সময় মাঠের বড় অংশ পূর্ণ হয়ে যায়। জুমার নামাজ শেষে জানাজার নামাজ শুরুর আগ মুহূর্তে স্রোতের মতো লোকজন আসতে থাকে। নামাজ পড়তে আসা লোকজনের ভিড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মাঠ। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে শেষবারের মতো অনেকে প্রিয় রাজনীতিক, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের মুখটি দেখেন। অনেকে আবার ভিড় এড়িয়ে দূর থেকে নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জুমার নামাজের পর প্রথম নামাজে জানাজায় শরীক হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জামায়াতের মহানগর আমির শাহজাহান চৌধুরী, বিএনপি উত্তর জেলা আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকার, মাহবুবের রহমান শামীম, মীর মোহাম্মদ হেলাল, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, আবুল হাশেম বক্কর, মরহুমের ছেলে সাঈদ আল নোমান, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, আনজুমানে রাহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার আনোয়ার হোসেনসহ অনেকে।
জানাজার নামাজের আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের এই সময়ে সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমানের বড়ই প্রয়োজন ছিল। নোমান ভাইয়ের নেতৃত্বে আমরা চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনীতি করেছি। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে, আন্দোলন, সংগ্রামে রাজপথে আমরা একসাথে কাজ করেছি। নোমান ভাই ছাত্র রাজনীতি করেছেন, শ্রমিক রাজনীতি করেছেন, বিএনপির রাজনীতি করেছেন।
তাকে একজন পরিপূর্ণ রাজনীতিবিদ উল্লেখ করে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, তিনি সার্বক্ষণিকভাবে রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সংগঠিত করার জন্য চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণসহ এই অঞ্চল এবং যেখানেই দলের ডাক দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে সেখানে ছুটে গেছেন। উনার রক্তের সঙ্গে রাজনীতি মিশে গেছে। নোমান ভাইয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের রাজনীতি ও কেন্দ্রীয়ভাবে অনেক স্মৃতি আছে।
আন্দোলন-সংগ্রামে নোমানের ভূমিকা অনেক জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সুখ, দুঃখ, ভালো খারাপ সময় আমরা অতিক্রম করেছি। সরকারের ভেতরে, বাইরে, রাস্তায় শেখ হাসিনা-বিরোধী আন্দোলন, ফ্যাসিস্ট-বিরোধী আন্দোলন, তার আগে এরশাদ-বিরোধী আন্দোলনে উনার উজ্জ্বল ভূমিকা রেখে গেছেন। চট্টগ্রামের রাজনীতিতে আমরা উনার অবদানের জন্য ঋণী। নোমান ভাই হয়তো সুস্থ থাকলে, আরও কিছু দিন বাঁচলে আমাদের আগামী রাজনীতিতে বিশেষ করে আজকের যে প্রেক্ষাপট আরেকটি ক্রান্তিলগ্নে আমরা এসে পড়েছি। এ সময় তার অবদান আমাদের প্রয়োজন ছিল।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমান গণমানুষের নেতা ছিলেন। চট্টলার জন্য তিনি অনেক কিছু গড়ে গেছেন। তার অবদান দেশবাসী মনে রাখবে।
জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আবদুল্লাহ আল নোমানের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। আমরা একসঙ্গে এরশাদবিরোধী আন্দোলন করেছিলাম। তিনি সাধারণ মানুষের রাজনীতি করেছেন।
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমরা একসঙ্গে ছাত্র রাজনীতি করেছি। নোমান ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি। পাকিস্তান পুলিশ ১৯৬৮ সালের ৫ আগস্ট উনাকে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থাৎ স্ট্যাট ব্যাংক অব পাকিস্তান থেকে গ্রেফতার করেছিল। একই দিন আমি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া কলেজের গেট থেকে গ্রেফতার হয়েছি। আমরা পাঁচ মাস একসঙ্গে জেলে ছিলাম।
জানাজার পূর্বে আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে ব্যারিস্টার সাঈদ আল নোমান উপস্থিত জনতাকে তার পিতার জন্য দোয়া করতে বলেন এবং জনতাকে ধন্যবাদ জানান। জানাজার পর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের নেতৃত্বে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
জানাজায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর হেলাল, মাহবুবুর রহমান, মহানগর কমিটির আহবায়ক এরশাদ উল্লাহ প্রমুখ।
এদিকে শুক্রবার দুপুর ২টার পর জমিয়তুল ফালাহ মাঠে জানাজা শেষে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাউজান উপজেলার নিজ গ্রাম গহিরায়। সেখানে আছরের নামাজের পর আরেক দফা জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করার কথা।