ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে সরাতে হবে : মির্জা ফখরুল

 

- Advertisement -

উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে আয়োজিত এক প্রতিবাদী সমাবেশে শিক্ষার্থীদের উপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনেরা। তারা বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, চলছে গুন্ডাতন্ত্র। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকার এ নৈরাজ্যকর পথ বেছে নিয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে এ অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদ ও সংহতির এই সমাবেশ হয়।
সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী, গণফোরামের সভাপতি সমাবেশে বলেন, দেশে অসুস্থ শাসনব্যবস্থা চলছে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আজকে গুন্ডা লেলিয়ে দেয়া হয়েছে। যারা লাঠি-সোটা নিয়ে নিরহ ছাত্র-ছাত্রী ও নিরীহ মানুষের ওপরে হামলা করে যাচ্ছে তাদেরকে আমরা গুন্ডা ছাড়া আর কোনোভাবে চিহ্নিত করতে পারি না।
তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, আছে গুন্ডাতন্ত্র। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, গুন্ডামুক্ত বাংলাদেশ চাই আমরা। এদের থেকে দেশকে মুক্ত করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে, ঐক্যবদ্ধ হোন। এই ঐক্যবদ্ধ মানুষকে গুন্ডা লেলিয়ে ধবংস করা যাবে না।

ড. কামাল হোসেন বলেন, এ দেশটা স্বাধীনতা লাভ করার জন্য লাখো শহীদ রক্ত দিয়েছে। যে স্বাধীনতার জন্য নেতৃত্ব দিয়ে যে রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠার করে বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দিনকে জীবন দিতে হয়েছিল সে বাংলাদেশে গুন্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এটা মেনে নেয়া যায় না। এই গুন্ডাদেরকে কারা লেলিয়ে দিয়েছে তাদের চিহ্নিত করুন। গুন্ডাদের থেকে এ দেশ মুক্ত হোক, আমার জীবনের বিনিময় হলেও হোক। প্রয়োজনে আমাদের গুলি করা হোক। আমি গুন্ডাতন্ত্রের মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই না।

আগস্টের শোকবহুল মাসে নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর গুন্ডাদের হামলার ঘটনা ঘটিয়ে ‘বঙ্গবন্ধুকে অপমান’ করা হয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কামাল হোসেন। আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের সাদা পোশাকে সদস্যরা তুলে নেয়া ও গণমাধ্যমের কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনারও তীব্র নিন্দা জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, আমাদের কিশোর শিক্ষার্থীরা রাস্তায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দিন হলো। সরকারি দলের গুন্ডারা প্রকাশ্যভাবে লাঠি-অস্ত্র হাতে পুলিশের সহায়তায় শিক্ষার্থীদের ওপর আক্রমণ করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি কী? নিরাপদ সড়ক এবং একটি সুশৃঙ্খল দেশ। এই শিক্ষার্থীদের ওপর সরকারি দলের গুন্ডারা আক্রমণ করছে এটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জা হয়।

তিনি বলেন, সরকার এখনো উপলব্ধি করতে পারছেন না। তারা যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন আপনি কী মনে করেন এসব আইনসম্মত, শিক্ষার্থীরা বলছে, উই ওয়ান্ট জাস্টিস। প্রতিটি পদক্ষেপ যখন জাস্টিসের বদলে অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। অবিচার যখন আইন হয়ে যায়, রুখে দাঁড়ানো তখন কর্তব্য হয়ে পড়ে।

সাবেক এই রাষ্ট্রপতি বলেন, আজকে বুঝতে হবে আমরা সবাই মিলে যদি এর প্রতিবাদ না করি, এক কন্ঠে যদি কথা না বলি তাহলে মনে হয় না এই সরকার বুঝবে। এই সরকার বুঝার মতো সরকার নয়। কারণ তাদের মূল শক্তি ইনজাস্টিসের ভিত্তিতে। এটা হতে পারে না।

শুধুমাত্র দেশপ্রেমের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এ দেশটা সুশৃঙ্খল হোক, আরো সুন্দর হোক, কোনো অন্যায় থাকবে না- এই স্বপ্নে শিক্ষার্থীরা অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছে। এটাকে সমর্থন করবো না। আর সমর্থন করলে আপনি (সরকার) বলবেন আমি রাজনীতি করছি। রাজনীতি কী এদেশে নিষিদ্ধ ? অবশ্যই রাজনীতি করবো। দেশের মঙ্গলের জন্য কিনা সেটা দেখতে হবে।

তিনি বলেন, অন্যায় যদি আইন করে ফেলেন আমরা সব মুখ বুঝে তা সহ্য করবো, বসে বসে দেখবো -এটা কেমন করে আশা করা যায়? এটা আশা করা উচিত না।

বি চৌধুরী দৃঢ়তার সাথে বলেন, আমরা প্রতিবাদ করবোই। আমার সন্তানদের হত্যা করার অধিকার কারো নাই, গুন্ডাদের নাই, পুলিশের নাই এবং এই সরকারেরও নাই। এটা তাদের উপলব্ধি করতে হবে।
তিনি বলেন, পরিবর্তন আনতেই হবে। শুভ পরিবর্তন আমরা চাই। এমন পরিবর্তন আনতে হবে যে পরিবর্তন সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা শুভ পরিবর্তনের জন্য আহবান জানাচ্ছি- সেখানে আমরা একসঙ্গে দাঁড়াব। ভারসাম্য রাজনীতি থাকতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই- এটা সময়ের দাবি। আরো একটা কথা তারা (শিক্ষার্থীরা) উচ্চারণ করেছে ‘নাউ অর নেভার’। অত্যন্ত জরুরি কথা এটা। এখনই, না হয় আর কখনো হবে না। যে পাথর রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে, যে ফ্যাসিস্ট শক্তি চেপে বসেছে সেই ফ্যাসিস্ট শক্তি সব কিছু তচনচ করে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের এখন একমাত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে, সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সম্মিলিত হয়ে এই ভয়াবহ হাত থেকে দেশকে রক্ষা করা, আমাদের অর্জিত সম্পদগুলোকে রক্ষা করা। যে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আমরা যুদ্ধ একাত্তর সালে নিয়ে এসেছি, যে গণতন্ত্রকে আমরা লড়াই করে নিয়ে এসেছি তাকে রক্ষা করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে অনেক কথা ও ছবি ফেসবুকে এসেছে। এরমধ্যে একটি ব্যানার আমাকে আকৃষ্ট করেছে। সেটা হলো একটা রাস্তা বন্ধ সেখানে একটা বোর্ড লাগানো হয়েছে- রাস্তা বন্ধ, রাষ্ট্রের মেরামতের কাজ চলছে। ছেলে-মেয়েরা আমাদেরকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, এখন রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। এটা হচ্ছে রাষ্ট্র যে ব্যর্থ হচ্ছে প্রতি জায়গায়, প্রতি মুহূর্তে তারই সমস্যা। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা এদেশের ছেলে- মেয়েদের সঙ্গে আছি, এদেশের মানুষের সঙ্গে আমরা আছি, আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। ইনশাল্লাহ আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ হবো এবং ঐক্যবদ্ধ হয়েই এই যে দানব, সেই দানবকে সরাতে পারবো। শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।

তার বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমার নামে আরেকটা নতুন মামলা হয়েছে। আমরা এখন মামলাকে আপনার খুব বেশি কিছু মনে করি না। আমার ৮৬টা পার হয়ে গেছে। আমাদের বেশিরভাগ নেতাদের মামলা ৪০/ ৫০। ১৫০ থেকে ২ শ’ পর্যন্তও আছে। এগুলো এখন আমাদের কাছে কোনো সমস্যা নয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমরা বহুবার কারাগারে গেছি। নির্যাতন হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ৫ শ’র অধিক নেতা-কর্মী গুম হয়ে গেছে। হাজার হাজার নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।৭৮ হাজারের ওপরে মামলা হয়েছে। ১৮ লক্ষ আসামি। এর মূল কারণই হচ্ছে এই আন্দোলনের কথা বলা ও দেশে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনা। বেগম খালেদা জিয়াও এই কারণেই আজকে কারাগারে।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে শপথ নেবার দিন। আমরা এই রাষ্ট্রকে মেরামত করতে চাই। যেরকম মেরামত আমাদের শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা চাইছে। আমরা কী পারি? অবশ্যই পারি।

প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমি টেলিভিশনে দেখলাম, একজন মা একটা কাঁঠাল নিয়ে তা ভেঙে একটা একটা করে কোয়া কিশোরদের হাতে হাতে দিচ্ছেন আর বলছেন, কাঁঠাল খাও, শক্তি অর্জন করো, না হলে আন্দোলন করতে পারবে না। এর চাইতে বড় তৃতীয় পক্ষ আমি তো দেখছি না। তৃতীয় পক্ষ বলতে অন্য কোনো পক্ষ নাই।

তিনি বলেন, যখন-তখন পড়ে যেতে পারেন এ কারণে সরকার ছায়াকে কায়া মনে করছেন, কায়াকে ছায়া মনে করছেন। এই ভেবে যার তার ওপরে হামলা করছেন।

প্রবীণ পেশাজীবী নেতা গণস্বাস্থ্য সংস্থা ট্রাষ্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুলের পরিচালনায় সমাবেশে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর সালেহউদ্দিন আহমেদ, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের এস এম আকরাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির আবদুল মালেক রতন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর, জাতীয় মুক্তির কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার মোস্তফা আমিন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিকল্পধারার মহাসচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, বিএনপির আবদুস সালামসহ বিভিন্ন পেশার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। নয়াদিগন্ত

সর্বশেষ