লবন বোঝাই কভার্ড ভ্যানে মিললো সাড়ে সাত কোটি টাকার ইয়াবা। গত মঙ্গলবার মধ্যেরাতে লবন বোঝাই কাভার্ড ভ্যান থেকে ১ লাখ ৯৬ হাজার পিস এবং ট্রাকের অতিরিক্ত চাকার ভেতর থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবাসহ মোট ২ লাখ ছয় হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে র্যাব। জব্দকৃত ওই ইয়াবার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় সাত কোটি ২১ লাখ টাকা।
এ সময় কাভার্ড ভ্যানের চালক মানিক মিয়া ও হেলপার আরিফ এবং ট্রাকের চালক মাসুম মিয়া ও হেলপার আব্দুল খালেককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১। এ চক্রেটির পরিবহন সেক্টরে বেশ কিছু সিন্ডিকেট রয়েছে। নিজেদের পেশার আড়ালে গোপনে মাদক কারবারীর সাথে জড়িত তারা। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু দালাল ও মাদক ডিলারদের যোগসাজশে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ঢাকার পাচার করা হচ্ছে ইয়াবা। এই চক্রের নিয়ন্ত্রণাকারী টেকনাফের রফিক দালাল এবং ব্যবস্থাপনার সার্বিক দায়িত্বে রয়েছে চালক মাসুম বলে জানিয়েছে র্যাব।
বুধবার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের অইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান বলেন, মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের পূর্বাঞ্চল এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। এ সময় ইয়াবা সরবরাহ করার কাভার্ড ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ট-২২-২৯২৭) ও ট্রাক ( ঢাকা মেট্রো-ট-২২-০২৮০) জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, ইয়াবাগুলো সমুদ্র পথে মিয়ানমার থেকে মহেশখালী হয়ে চকরিয়ার একটি সিন্ডিকেট দ্বারা নিয়ে আসা হয়েছিল। ট্রাক চালক মাসুম ইয়াবা গুলো চকরিয়ার সিন্ডিকেট হতে গ্রহণ করে। ইয়াবা সংরক্ষণ শেষে প্রথমে ট্রাক নিয়ে মাসুম ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়, এর তিন চার ঘণ্টা পর মানিক কাভার্ড ভ্যান নিয়ে এগুতে থাকে। পরিকল্পনা ছিল সামনের ট্রাক ধরা পড়লেও পেছনের কাভার্ড ভ্যানে রক্ষিত বড় চালানটি যেন রক্ষা পায়।
তিনি আরও বলেন, গ্রেফতার চারজনই গাড়ি চালাতে জানলেও তাদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক লাইসেন্স নেই। এ চক্রটির সদস্য ১৫ থেকে ২০ জন। তারা পরিবহন চালানোর ছদ্মবেশে মাদকের ব্যবসা করত। গত ১ বছর ধরে গ্রেফতারকৃতরা এ চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। এর আগে তারা আটটি চালান পাচার করে। এ চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে টেকনাফের দালাল রফিক।
মুফতি মাহমিদ বলেন, গত ২৫ জুলাই টেকনাফে র্যাবের অতিরিক্ত পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপনের ফলে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইয়াবা সরবরাহ দুরুহ হয়ে উঠে। ফলে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা নিত্য নতুন রাস্তা ইয়াবা সরবরাহ করার পরিকল্পনা করে। ফলে ইয়াবা চালানকারীরা সমুদ্রপথে মহেশখালী হয়ে চকোরিয়া দিয়ে ইয়াবা চালানের নতুন রুট তৈরি করে।
এক প্রশ্নের জবাবে মুফতি মাহমুদ বলেন, ইয়াবা চালান ল্যান্ডরুটে অনেকটা কন্ট্রোল হলেও সীরুটে তা হয়নি। সেখানে হাজার হাজার ট্রলার রয়েছে, ওখানকার কারবারীদের ক্ষেত্রে সমুদ্র অনুকূল প্রতিকূল বলে কিছু নেই। তবে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছে। মাদকের গডফাদারদের ধরতে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতরা জানান, পরিবহন সেক্টরে এ ধরনের আরও বেশকিছু সিন্ডিকেট রয়েছে। কক্সবাজারের স্থানীয় কিছু দালাল মাদক ডিলারদের যোগসাজশে পণ্যবাহী পরিবহনের চালক ও সহকারীদের মোটা অঙ্কের টাকার প্রলোভন দেখিয়ে তাদের গাড়িতে ইয়াবা রাখার জন্য প্রলুব্ধ করে।