spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

কোটা সংস্কার আন্দোলন শিক্ষার্থীরা জামিন পেলেও উদ্বেগ কাটেনি তাদের

spot_img

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট : কোটা সংস্কার আন্দোলন ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীরা জামিনে মুক্ত থাকলেও উদ্বেগ- উৎকণ্ঠা কাটেনি তাদের। অনেকেই অন্তরালে সময় কাটাচ্ছেন। কারো কারো পরিবার আবার বাসার বাইরে বের হওয়াতো দূরের কথা মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করতে দিচ্ছেন না তাদের সন্তানদের। ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, জামিন পাওয়া বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন।

বাসার বাইরে খুব একটা বের হন না। এমনকি পরিচিতদের বাইরে অন্য কারো সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন না। এই মামলার কারণে তারা পড়ালেখা ও ক্লাস-পরীক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। ক্লাসে অনিয়মিত হওয়ায় সামনে ফাইনাল পরীক্ষায় তাদের সীমিত প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার হলে বসতে হবে।

সকলের ভেতরে একটাই আতঙ্ক কাজ করছে। পরবর্তীতে যদি তারা কোনো আন্দোলনে অংশ নেয় তাহলে তাদের আবার পুলিশ টার্গেট করে ধরবে কি না। নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা রাশেদ খান বলেন, আমরা জামিনে মুক্ত থাকলেও আতঙ্কের মধ্যে আছি। আবার কখন গ্রেপ্তার করবে এই ভয় কাজ করে। সবচেয়ে বড় ভয়ের বিষয় হচ্ছে যে কোনো সময় আমাদের ওপর হামলা হতে পারে। বাসার বাইরে যাওয়ার মতো অবস্থা আমাদের নেই। অনেকটা অঘোষিত গৃহবন্দি হয়ে আছি।

প্রথম দিকে আমরা নিরাপত্তা চেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে উল্টো আমাদের নামে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনে মোট ১০ জনের নামে মামলা হয়েছিল। রাতুল সরকার ও আমার নামে ২টি করে বাকিদের নামে ১টি করে মামলা হয়েছে। আমার নামে আইসিটি আইনে ৫৭ ধারায় মিথ্যা মামলা ও ভিসির বাসায় ভাঙচুরের নির্দেশনাসহ মোট দুটি মামলা হয়েছে। জসিম উদ্দিন ও মশিউরের নামে পুলিশের কাজে বাধা দেয়ায় মামলা হয়েছে। ফারুক হোসেন ও তরিকুলের নামে পুলিশের মোটরসাইকেলে আগুন দেয়ার মামলা হয়েছে। বাকিদের অধিকাংশের নামে ভিসির বাসায় ভাঙচুরের মামলা হয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমান বলেন, ৪টা মামলার ভেতরে মোট ৩টা মামলা কমনভাবে আমাদের সবার নামে করা হয়েছে। এছাড়া আইসিটি আইনে করা হয়েছে দুজনের নামে। এর মধ্যে রাশেদ ভাইয়ের নামে ভিডিও এডিট করে ৫৭ ধারায় মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমাদের সবগুলো মামলাই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। আমরা প্রথম থেকেই বলে এসেছি যে ভিসি স্যারের বাসায় ভাঙচুরের বিষয়ে যদি আমাদের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারে তাহলে আমরা আন্দোলনের মঞ্চ থেকে সরে দাঁড়াবো। কোনোদিন আমরা সরকারের মুখোমুখি হবো না। আন্দোলন-অধিকারের কথাও বলবো না। তারা কিন্তু সেটা প্রমাণ করতে পারেনি। পুলিশকে সব খুলে বলা সত্ত্বেও অন্যায়ভাবে আমাদের নামে মামলা দেয়া হয়। পরবর্তীতে আমরা ঈদের আগে ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া স্যারসহ একাধিক আইনজীবীর সহায়তায় জামিন পাই। কিন্তু আমাদের মামলা তুলে নেয়া হয়নি। রাশেদ, লুমাসহ সকলের নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। আমাদের অধিকাংশেরই ক্লাস পরীক্ষা চললেও আমরা কেউ ডিপার্টমেন্টে যেতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে যে আমরা নিরাপদ থাকবো এবং আমাদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করবে না এরকম নিশ্চয়তা কিন্তু সরকার আমাদের এখনো দেয়নি। সরকারের দায়িত্বশীল কোনো মন্ত্রী যদি বলতো আপনারা নিরাপদ। ছাত্রলীগ আপনাদের ওপর কোনো হামলা করবে না। এরকম নিশ্চয়তা পেলে আমরা ক্লাস করতে পারতাম। পরীক্ষা দিতে পারতাম। এমনকি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারতাম। কিন্তু এখন আমরা বাসা থেকে বের হতে পারি না। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমরা তো কোনো ব্যক্তিগত স্বার্থে আন্দোলন করিনি। দেশের সাধারণ মানুষের স্বার্থে আন্দোলন করেছি। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ এই আন্দোলনের পক্ষে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পি এম সুহেল বলেন, আমরা সকলেই শঙ্কায় আছি। উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় আছি। কারণ আমাদের নামে করা মামলা শেষ হয়নি। পরবর্তীতে এই মামলায় মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে আমাদের আবার শাস্তি দিবে কিনা। এগুলো নিয়ে আমাদের ভেতর এক ধরনের ভয় কাজ করছে। আমার নামে ভিসি স্যারের বাসায় হামলার নির্দেশে ১টি মামলা করা হয়েছে। আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর কোর্টে আমাদের হাজিরা আছে।

আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, যারা জামিনে মুক্ত আছেন তাদের কোথাও কোনো আইনগত বাধা বা বিধি নিষেধ নেই। মামলা তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এজন্য তাদের বাসার বাইরে বের হওয়া কিংবা ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তারা কোনো কারণে হয়তো ভয় পাচ্ছেন। তাদের ভয় পাওয়ার মতো কিছু নেই। কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে মোট ১১০ জনের জামিন হয়েছে।
সূত্র : মানবজমিন

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ