আন্দোলন নাকি নির্বাচন; কোন পথে বিএনপি?

ঢাকা: বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, আগামী ২০ দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হতে যাচ্ছে। আর নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ ২৭ ডিসেম্বর।

- Advertisement -

তিনি এ-ও জানিয়েছেন, ছোট মন্ত্রিসভায় সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দলগুলোর প্রতিনিধি থাকবে। অর্থাৎ বিএনপির সুযোগ থাকছে না।

সে হিসেবে নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস ২২ দিন। ২০১৪ সালের নির্বাচন বয়কট করলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বিএনপি। এ জন্য ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগও শুরু করেছেন।

তবে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে থাকায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্বে কারা থাকবেন এ নিয়ে প্রশ্ন ও আগ্রহ তৈরি হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে। রাজনৈতিক মহলেও চলছে জল্পনা-কল্পনা।

বিএনপির প্রধান দুই নেতার বাইরে স্থায়ী কমিটি ও উপদেষ্টামণ্ডলীর একাধিক সদস্য বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তারা ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছেন না। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি কীভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে তা নিয়ে জটিল হিসাব কষছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।

এদিকে জোরেশোরে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি-এই তিনেই সব মনোযোগ দলটির। অক্টোবরের মধ্যেই এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় তারা। এ জন্য অক্টোবর পর্যন্ত নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে একগুচ্ছ কর্মসূচি সামনে নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি দল।

তবে বিএনপি এখনো নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করতে পারেনি। দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, এতিহ্য অনুযায়ী নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়তে পারলে জনগণের সমর্থন পাওয়া যায়। এ জন্য সেপ্টেম্বর মাসে সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে দলটি। ইতোমধ্যে কারাগারে খালেদা জিয়ার জন্য আদালত স্থাপনের প্রতিবাদে দুদিনের কর্মসূচিও দিয়েছেন তারা। এ ছাড়া ক্ষমতাসীনদের বাইরে বিরোধী শক্তিগুলোর সঙ্গেও ঐক্য গড়ে তুলতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তারা। তবে সরকারকেও বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার মাধ্যমে চাপে রাখতে চায় তারা। গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন সরকারকে চারটি শর্ত দেন বিএনপি নেতারা।

শর্তগুলো হচ্ছে-

এক. নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

দুই. সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন।

তিন. নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।

চার. নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে।

এ চার দফা দাবি মানা না হলে দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, জনগণ নির্বাচন হতে দেবে না বলে হুঁশিয়ারিও করেন তারা।

সূত্র জানায়, আন্দোলন এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি একইসঙ্গে- দুই পথেই হাঁটছে বিএনপি। এ অবস্থায় যদি তড়িঘড়ি করে আগেভাগেই নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে তাহলে বিএনপির নির্বাচনী প্রচারণা কীভাবে হবে- এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ নেতাকর্মীদের মাঝে।

বিএনপির একাধিক নেতা জানান, যে কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় তাকে ছাড়া কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় যদিও দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এখন লন্ডন থেকে আসছে।

তবে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি তারেক রহমান। ওই মামলার বিচার প্রক্রিয়া প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। এ মাসেই রায় হতে পারে। মামলার বাদী পক্ষ এ মামলার সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়েছেন। এ মামলায় তারেক রহমান দোষী সাব্যস্ত হলে নির্বাচনের আগে আরো বেকায়দায় পড়তে পারে বিএনপি। তবে আগামী নির্বাচনে প্রচারণার ক্ষেত্রে তারেক রহমানের বুদ্ধি ও পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।

আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের প্রশ্নে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী ও ভোটের রাজনীতি করা বৃহত্তর দল। আমরা অবশ্যই নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক রাজনৈতিক মামলা দিয়ে আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার পথ বন্ধ করা হচ্ছে। সিটি নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে স্বচ্ছতা না থাকার চিত্র দেখেছি আমরা। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনের ফল আগেই অনেকটা নির্ধারিত। এমন পাতানো খেলায় বিএনপি অংশ নেবে কিনা তা শীর্ষ পর্যায়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

সর্বশেষ