ডেস্ক রিপোর্ট: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে ৫ দফা দাবি ও ৯টি লক্ষ্য ঘোষণা করলো যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য-প্রক্রিয়া। শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দফা ও লক্ষ্য পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্ববায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
প্রথম দফায় বলা হয়েছে, আসন্ন জাতীয় একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না।
দ্বিতীয়ত, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাক্, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সব রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে।
তৃতীয়ত, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রছাত্রীসহ সব রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে আনা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে এবং গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে হবে। এখন থেকে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না।
চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, নির্বাচনের এক মাস আগে থেকে নির্বাচনের পর ১০ দিন পর্যন্ত মোট ৪০ দিন প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় বিচারিক ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণের পূর্ণ ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দিতে হবে।
পঞ্চম দফায় উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা ও পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর যুগোপযোগী সংশোধন করতে হবে।
জাতীয় ঐক্য নয়টি লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছে। রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে তারা কী করবে, এই লক্ষ্যে তা বলা হয়েছে। তাদের লক্ষ্য হলো :
১. এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের জন্য সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনা এবং প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ, ন্যায়পাল নিয়োগ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যকর করা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ ও সৎ যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠন করা।
২. দুর্নীতি দমন কমিশনকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার নিশ্চিত করা হবে। দুর্নীতিমুক্ত, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে তুলে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি কঠোর হাতে দমন ও দুর্নীতির দায়ে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা।
৩. বিনিয়োগ বৃদ্ধির পরিবেশ সৃষ্টি, বেকারত্বের অবসান ও শিক্ষিত যুবসমাজের সৃজনশীলতা ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধাকে একমাত্র যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা।
৪. কৃষক-শ্রমিক ও দরিদ্র মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সরকারি অর্থায়নে সুনিশ্চিত করা।
৫. জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকারসহ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে দুর্নীতি ও দলীয়করণ থেকে মুক্ত করা।
৬. বাংলাদেশ ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা আনা, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, সুষম বণ্টন ও জনকল্যাণমুখী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।
৭. জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য গঠন এবং প্রতিশোধ, প্রতিহিংসা ও নেতিবাচক রাজনীতির বিপরীতে ইতিবাচক সৃজনশীল এবং কার্যকর ভারসাম্যের রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা।
৮. সকল দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়—এই নীতির আলোকে পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা।
৯. প্রতিরক্ষা বাহিনীকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি ও সমরসম্ভারে সুসজ্জিত, সুসংগঠিত ও যুগোপযোগী করা।
এর আগে যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় নেতৃবৃন্দরা কর্মীদের নিয়ে বিকেল ৪টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মূল ফটকের সামনে থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উদ্দেশ্য মিছিল নিয়ে রওনা হোন। তবে প্রেসক্লাবের দ্বিতীয় গেটের একটি প্রাইভেট কারের ওপর দাঁড়িয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষে আমরা শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ দিয়ে আমাদের নির্দেশ দিয়েছে যে, অনুমতি দেওয়া যাবে না। ফলে আমরা বাধ্য হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঐক্য প্রক্রিয়া ঘোষণা করছি।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, পুলিশ দিয়ে শহীদ মিনার ঘিরে রাখা হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করছি।
এদিকে শহীদ মিনারের উদ্দেশ্য মিছিলে ড. কামাল হোসেন ও মাহমুদুর রহমান মান্না ছিলেন না। তবে ড. কামাল হোসেন নিজের প্রাইভেট কারে মিছিলের আগে শহীদ মিনারের উদ্দেশে রওনা হন। আর বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী অসুস্থতার কারণে আসেননি বলে জানান রব।
সংবাদ সম্মেলনে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় আপনাদের সবাইকে আমরা চাই। গ্রামে-গ্রামে এবং ঘরে-ঘরে এই ঐক্য গড়ে উঠুক। বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য আজ শুরু হলো। আমরা আপনাদেরকে নিয়ে আমরা সফল হবো।
সংবাদ সম্মেলনে গণস্বাস্থ্য বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুকসহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মুহূর্তে ভর্তি পরীক্ষা চলছে। তাই বাইরের কাউকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনও কর্মসূচি না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কাউকে নিষেধ করা হয়নি।
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ ব্যাপারে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে এ ব্যাপারে তাদের কথা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিপরীক্ষা চলায় শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে কোনও কর্মসূচি না করার জন্য তাদের অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।