ডেস্ক রিপোর্ট: জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ ও নেতাদের বক্তব্য পর্যালোচনা করেছে বিএনপি। জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে আরও গুরুত্ব দেয়া এবং জোরদার করে এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে একমত হয়েছেন নেতারা। সেই সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর তীক্ষ্মদৃষ্টি রেখে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের সিদ্ধান্তও হয়েছে নীতিনির্ধারকদের ফোরামে। এছাড়া এখন থেকে দলগত, জোটগট ও জাতীয় ঐক্যের প্ল্যাটফর্ম থেকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেশবাসী ও আন্তর্জাহিক মহলের কাছে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত হয়। গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
এর আগে দলের কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবীর সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন আদায়ের দাবি আদায়ের আন্দোলনে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নাগরিক সমাবেশকে ইতিবাচকভাবে অগ্রগতি হিসেবে দেখছে বিএনপি। নেতারা মনে করেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আয়োজিত নাগরিক সমাবেশের মধ্যদিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক পথযাত্রা শুরু হলো।
কিন্তু গণতান্ত্রিক ও নির্বাচনমুখী দল হিসেবে আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে বিএনপিকে নিজেদের করণীয়ও ঠিক করতে হবে। দাবি আদায়ের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ বা বিশেষ ছাড় দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। কারণ আন্দোলনের পাশাপাশি ভোটের মাঠ গোছানো না থাকলে বিশেষ পরিস্থিতিতে নির্বাচনের প্রাকমুহুর্তে দাবি আদায় হলে প্রস্তুতির অভাবে নির্বাচনের ফলাফল অনুকূলে আনা কঠিন হবে। কিন্তু দাবি আদায়ের যে আন্দোলন জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নতুন করে ঢেউ তুলতে শুরু করেছে নির্বাচনের ঢামাঢোলে ফেলে নেতাকর্মীদের মনোযোগ নষ্ট করার বিষয়টিও হবে অদূরদর্শীতা। ফলে আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি কোন কৌশলে এগোবে সে বিষয়েও নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে নিজেদের নানা মতামত তুলে ধরলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে নেয়া হবে কারাবন্দি চেয়ারপারসন ও বিদেশে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পরামর্শ ও নির্দেশনা মেনে। সূত্র জানায়, বৈঠকে জাতীয় ঐক্যের পাশাপাশি দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতা এবং তার মামলা নিয়েও আলোচনা করেছেন নেতারা। এছাড়া আলোচনার আরেকটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল ১লা সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন থেকে কয়েকটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে গায়েবী মামলার দায়ের। সূত্র জানায়, সারা দেশে বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে দায়েরকৃত মামলাগুলোর জামিনের ব্যাপারে আলোচনা হয়। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ প্রতিটি জেলার দলের আইনী সেলকে সক্রিয় ভূমিকা রাখার তাগিদ দেয়া হয়।
এছাড়া আগামী ১০ই অক্টোবর ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্ভাব্য রায় নিয়েও নেতারা আলোচনা করেন। এ ব্যাপারে আপাতত কড়া নজর রাখার পাশাপাশি রায় দেখে প্রয়োজনে কর্মসূচি দেয়ার কথাও আলোচনায় এসেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।