spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

একজন গণমাধ্যম কর্মীর সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে সংবাদ মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা

spot_img

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট: এতদিন জানতাম সাংবাদিকরা শুধু সংবাদটি লিখে যাবেন কোন মতামত প্রকাশ করতে পারবে না। গত ২০ ধরে এমনতর কথা শুনে আসছি এবং তা করে আসছি। মনের মধ্যে কৌতুহল ছিল যে সাংবাদিক একটি ঘটনা আদ্যপান্ত জানেন এবং যে সাংবাদিক ঐ ঘটনার ভেতরে প্রবেশ করে যাবতিয় রহস্যের উন্মোচন করেন সেখানে কেন তার মতামত থাকবে না। ভারতীয় সাংবাদিকরা কি করেন, বিষয়টি জানতে চাইলাম আনন্দবাজার পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক অনমিত্র চট্টপাধ্যায়ের কাছে। তিনি উত্তর দিলেন এভাবে, কেন সাংবাদিকরা নিজস্ব মতামত দিতে পারবেন, সাংবাদিকতা তো আগের জায়গায় নেই। বিশ্বের সাংবাদিকতায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, এখন সাংবাদিকরা শুধু মতামত না তাদের কাছ থেকে সমাধানও চায়।
চট্টগ্রামে এই প্রথম কোন বিদেশী সাংবাদিকের মুখোমুখি হলেন প্রিন্ট, অনলাইন আর ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার রিপোর্টাররা। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে চলা দু’বাংলার সাংবাদিকতা শীর্ষক আলোচনায় উঠে এলো অনেক কিছু। বুঝলাম তিনি বাংলাদেশের সাংবাদিকতার অনেক কিছু জানেন।
তিনি বললেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে প্রিন্ট মিডিয়া। যে নিউজটি আজকের তা প্রকাশিত হচ্ছে আগামিকালের সংবাদপত্রে। আর এ কারনে প্রিন্ট মিডিয়া মার খেয়ে যাচ্ছে। এখন টেলিভিশন মিডিয়া আর অনলাইন মিডিয়ায় তা দ্রুত প্রচার হচ্ছে। তাই উপমহাদেশে শুধু না সারা বিশ্বে প্রিন্ট মিডিয়া ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ ঢেউ কলকাতার আনন্দবাজারে যেমন লেগেছে তেমন বাংলাদেশের সংবাদপত্রেও লেগেছে, এটা অস্বিকার করার কোন উপায় নেই।
বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে দুটি করে প্রেস ক্লাবের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ওখানে এ ধরনের দ্বিধাবিভক্তি নেই। সাংবাদিকদের মাঝে বিভক্তি থাকলে শাসক দল সুযোগ পায়। তিনি আনন্দবাজারের কথা উল্লেখ করে বলেন, আনন্দবাজার তার নিরপেক্ষতা ধরে রেখেছে বলে সরকারী দলের বিজ্ঞাপন পায় না। সাংবাদিকদের সঠিক বিষয়টি সবসময় তুলে ধরেত হবে। এটি তুলে ধরতে গেলে বিভিন্ন চাপ আসবে। যে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সাংবাদিকরা এগিয়ে যায়।
আনন্দবাজার পত্রিকার মালিক শুধু অানন্দবাজার নিয়ে ব্যবসা করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখানে তা ব্যতিক্রম। এখানকার পত্রিকা মালিকদের বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা রয়েছে। সেসব ব্যবসার সাথে পত্রিকার স্বার্থটি জড়িত। ফলে এককভাবে কোন পত্রিকা দীর্ঘদিন পাঠকের কাছে টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
তাহলে কি প্রিন্ট মিডিয়া হারিয়ে যাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রিন্ট মিডিয়া হারাবে না কারন এখনও অনলাইন মিডিয়ার উপর মানুষের আস্থা আসে নি। তারা হঠাৎ হঠাৎ এমন ভূয়া নিউজ প্রচার করে যার ফলে বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। তাদের সুবিধা হলো প্রচারের পর পর তারা তুলে ফেলতে পারে, যা প্রিন্ট মিডিয়া পারে না। এ তুলে ফেলার সংস্কৃতির কারনে প্রিন্ট মিডিয়ার উপর মানুষের আস্থা এখনও রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
আমরা যে বিশস্ত সূত্রে প্রকাশ লিখি তা কতটুকু গ্রহণযোগ্য, এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত। একজন গণমাধ্যম কর্মীর সবচেয়ে বড় গুন হচ্ছে সংবাদ মাধ্যেমে বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা। একটা চোরেরও আত্মপক্ষ সমর্তনের সুযোগ যেমন আদালতে আছে, ঠিক তেমনি যার বিরুদ্ধে দুর্ণিতী কিংবা অভিযোগের সংবাদ তৈরি হবে তার বক্তব্যটাও সে সংবাদে যুক্ত করা গণমাধ্যমকর্মীর অন্যতম লক্ষ্য হতে হবে। তবে বার বার চেষ্টা করেও তার সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হলে বা সে যদি রিপোর্টারকে সাড়া না দেয় তাহলে করে তার বক্তব্য ছাড়ায় নিউজটা ছাপা হতে পারে। বলা যেতে পারে তার সাথে যোগাযোগ করেও সাড়া মেলেনি।
বাংলাদেশের সংবাদপত্র আর আনন্দবাজারের মধ্যে কোন বিষয়টি ব্যতিক্রম এ প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানবার পত্রিকাগুলো নিউজের জাম্প দেয়ার বিষয়টি আমাদের ওখানে বেশ আলোচিত। প্রথম পৃষ্টার নিউজ জাম্প দিয়ে ভেতরের বিশাল করে ছাপানো অামাদের ওখানে হয় না। কারন অামাদের যেটা ধারনা সর্বাধিক ৩০০ থেকে ৩৫০ শব্দের বেশি রিপোর্ট হলে পাঠক পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তাই যত কম শব্দ ব্যবহার করে পুরো ঘটনা তুলে আনাটাই সংবাদকর্মীর সফলতা।
‘বাংলাদেশের এক শ্রেনীর সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক চর্চা রয়েছে যা গণমাধ্যমের জন্য শুভ নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন,।সাংবাদিকদের বিভক্তির কারণে শাসকদল সব সময় মিডিয়াকে চেপে ধরতে সুযোগ পায়।’ যার ফলে মিডিয়া নিয়ন্ত্রনে আইনের খড়গ নেমে আসে। ‘ভারতের বিশেষ করে কলকতা সাংবাদিকদের মধ্যে রাজনৈতিক দলবাজি নেই। সেখানে গণতন্ত্র এবং বিচার বিভাগ প্রাতিষ্ঠানিক রুপ পেয়েছে বলেই গণমাধ্যম মত প্রকাশে স্বাধীন।

লেখক

সিনিয়র সাংবাদিক

ডেপুটি এডিটর দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ

কাজী মনসুর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ