বই প্রকাশে কারো ইন্ধন নেই :সুরেন্দ্র কুমার সিনহা

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট: বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিবিসি বাংলার এক সাক্ষাৎকারে বলেন, এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি’ বইটি আমি নিজে লিখে নিজের উদ্যোগে প্রকাশ করেছি, অন্য কারো এতে কোনো ইন্ধন নেই।

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, বইটিতে কিছু ভুল রয়ে গেছে, মুখবন্ধে আমি তার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেছি। অন্য কেউ যদি এডিট করে দিত, তাহলে এই ভুলগুলো থাকতো না।

দেশে যখন একটি নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, সে সময় এতদিন পর তিনি কেন এই বই প্রকাশ করলেন? তিনি কি কাউকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে চেয়েছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি সিনহা বলেন, আমার বইয়ে বিস্তারিত বলেছি, আমাকে তো ডিজিএফআই পাঠিয়েছে। তারা টিকিট দিতে চেয়েছিল, তাদের টিকিটে আমি আসিনি।

বাংলাদেশে রাজনীতিতে কে জিতলো, কে হারলো তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। সরকার আমার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করেছে, আমি শুধু তা প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। যখন শেষ করতে পেরেছি তখন প্রকাশ করেছি। এতে বিরোধী দল যদি কোনো সুবিধা পেয়ে থাকে, তাতে আমার কী লাভ?”

তিনি বলেন, আমি শুনলাম, আওয়ামী লীগ প্রচার করছে গত; ৬ মাস ধরে, তারা অনেক উন্নয়ন করেছে। “তারা (সরকার) এত ভয় পাচ্ছে কেন? তারা তো উন্নয়ন করেছে। দেশের অর্থনীতি ভালো, আমি নিজেও তা স্বীকার করি। আমি তো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি না। তাহলে আমার একটা বই নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে কেন? তাহলে তারা যে দুর্নীতি করেছে সেটা কি উন্নয়নকে ছাপিয়ে যাবে? এই কারণেই কি তারা ভয় পাচ্ছে?”

দুঃখ প্রকাশ করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমার মনে হয় না কোনো রাজনীতিবিদ, দেশের একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কারো জীবনে এতো আঘাত এসেছে। আমাকে মারার জন্য জঙ্গিরা একাধিকবার চেষ্টা করেছে। গ্রামের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে । আমরা বিরুদ্ধে এক্সট্রিমিস্টরা অবস্থান নিয়েছিল, আমি মনে করি না তারা সরে এসেছে। কারণ এক্সট্রিমিস্টদের সবগুলো রায় আমার।

অন্যদিকে সরকার আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছে। ডিজিএফআই আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে, তারা আমাকে হুমকি দিয়েছে।’এখন দেশে ফিরলে কোনো ধরণের নিরাপত্তা পাব না। তাদের হাতেই মৃত্যুবরণ করবো।

বার বার ঘুরে ফিরে বিচারপতি সিনহা তার সাক্ষাৎকারে বলার চেষ্টা করেছেন, তাকে নিয়ে কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে বিভ্রান্ত করেছে, ভুল বুঝিয়েছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা এতো চরম সিদ্ধান্ত নিলেন, যেটা তিনি চিন্তাও করেননি সিকোয়েন্স কেমন হবে।

ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বিচারপতি সিনহা জানান দেশে তার জীবনের ঝুঁকির কারণে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। এ বিষয়ে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে এই কারণেই যে প্রধান বিচারপতি হিসাবে এখানে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়াটা আমাদের দেশে, সরকার এবং আমাদের জন্য মূল্যবোধের একটা প্রশ্ন কিন্তু আমার জীবনের নিরাপত্তা কে দেবে?

আসলে স্বৈরশাসনে যারা মনোনিবেশ করেন, হিটলারের ইতিহাস যদি দেখেন, তার গোয়েন্দারা মিথ্যাকে সত্য বানানোর চেষ্টা করতো। ঠিক সরকারেরও যে সব বাহিনী এখন আছে, তাদের কথাই এখন প্রধানমন্ত্রীর মুখে ফুটে ওঠে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বইটি প্রকাশের পেছনে অনেকের ইন্ধন, উদ্যোগ এবং সাহায্যের যে কথা খোলাখুলি বলেছেন, বিচারপতি সিনহা তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় লেখা নিয়েও তাকে একই ধরণের কথা শুনতে হয়েছে। তারা (আ. লীগ) কখনো বলেছে আইএসআই এই রায় লিখে দিয়েছে, কখনো বলেছে ড. কামাল হোসেন লিখে দিয়েছেন। আবারো এখন এই বই নিয়ে একই প্রশ্ন।

সর্বশেষ