সংলাপে নিরপেক্ষ নির্বাচনের রূপরেখা তুলে ধরবে ঐক্যফ্রন্ট

 

- Advertisement -

ডেস্ক রিপোর্ট: সংবিধানে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিদ্যমান সংবিধানের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের অনড় অবস্থানের কারণে সংবিধানের ধারা-উপধারা বিশ্লেষণ করে রূপরেখাটি তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আগামী বুধবার দ্বিতীয় দফা সংলাপে রূপরেখাটি দেয়া হতে পারে। রূপরেখায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেতে পারে সংসদে ভেঙে দেয়া, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন ও খালেদা জিয়ার কারামুক্তি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা এমন তথ্য জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনাকে ছুটিতে রেখে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করার সুযোগ তৈরি হলে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারেও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিতে পারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। তবে কৌশলগত কারণে রূপরেখাটির ধরন সম্পর্কে তারা বিস্তারিত গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে রাজি হয়নি। ফ্রন্ট নেতারা বলছেন, সংলাপের টেবিলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর গুরুত্ব দেবেন। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংবিধান কোনোভাবেই বাধা নয়। বরং প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছাই এখানে মুখ্য। তারা বলছেন, ইতিমধ্যে উত্থাপিত সাত দফাকে ভিত্তিমূল ধরেই সমস্ত আলোচনা, সংলাপ এবং সমঝোতা হবে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে কিছু বিষয়ে ছাড় দিতেও কার্পণ্য করবে না ফ্রন্ট। ফ্রন্টের নেতারা জানান, প্রথম দফা সংলাপ থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো অর্জন নেই। দ্বিতীয় দফা সংলাপের ফলাফল নিয়েও রয়েছে সংশয়। তারপরও ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই ফ্রন্টের নেতারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিতীয় দফা সংলাপে অংশ নেবেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের ৭ দফা দাবি থেকে সরে আসেনি।

কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে শেষ পর্যন্ত বিকল্প পথে হাঁটার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে। সেটার অংশ হিসেবে ৭ দফাকে মূলভিত্তি ধরে সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন ও নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাবসহ একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে সেটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে উত্থাপন করা হবে। এ জন্যই দ্বিতীয় দফা সংলাপ সুনির্দিষ্ট করতে আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এবার একটি ছোট প্রতিনিধি দল যাবে সংলাপে। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, দ্বিতীয় দফার সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নির্দিষ্ট কোন প্রস্তাবগুলো সামনে রাখবে সে প্রসঙ্গে রোববার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অব্যাহতভাবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সরকারের প্রতি আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়েছেন বারবার। কিন্তু সরকারের তরফে মেলেনি ন্যূনতম সাড়া। দীর্ঘ ৮ মাস ধরে কারাবন্দি রয়েছেন তিনি। খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর তার সময়ের পরিক্রমায় বিএনপিসহ বিভিন্ন মধ্যপন্থি ও মধ্যবামপন্থি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

এতদিন ধরে বিএনপি যে দাবিগুলো জানিয়ে আসছিল সেগুলো এখন পরিণত হয়েছে জাতীয় দাবিতে। চলমান পরিস্থিতি উত্তরণ ও আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে সংলাপে বসতে বিএনপির তাগিদগুলোতে এতদিন উড়িয়ে দিয়েছে সরকার। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং উত্থাপিত দাবিগুলোতেও প্রথমে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বড় ধরনের বাঁক খেয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতি। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দাবির মুখে হঠাৎ করেই সংলাপের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

প্রথম দফা সংলাপে সার্বিক পরিস্থিতির বড় ধরনের উন্নতি না হলেও উদ্যোগটিকে জনগণের প্রাথমিক বিজয় মনে করছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। তারা বলছেন, দীর্ঘদিনের বরফ গলা শুরু হয়েছে। স্রোত হয়ে মোহনার দিকে এগিয়ে যাওয়ায় সে বরফগলা পানির স্বভাব। প্রকৃতির এই চিরন্তন নীতিকে আশার সূক্ষ্ম আলোর রেখা হিসেবে বিবেচনা করছে রাজনৈতিক মহল। পুনরায় সংলাপে সরকারের সায় দেয়াকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।

ফ্রন্ট নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় দফা সংলাপেও রাজি হয়ে দিনক্ষণ নির্ধারণ করেছে সরকার। সরকার যদি ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে সংলাপে অংশ নেন তাহলে দ্বিতীয় দফা আলোচনা ফলপ্রসূ হতে পারে। সেদিন দৃশ্যমান কিছু অর্জনের লক্ষণ স্পষ্ট হতে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তরফে তৈরি করা হয়েছে নির্বাচনকালীন সরকারের একটি রূপরেখা। তারা জানান, প্রধানমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতারা অব্যাহতভাবে সংবিধানের দোহাই দিচ্ছেন। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বপদে রেখে ও বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যাপারে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে বিরোধী নেতাদের। এমন পরিস্থিতিতে সংবিধানের বিধি-উপবিধি ঘেঁটে একটি পথ বের করার উদ্যোগ নিয়েছেন ফ্রন্টের নেতারা। ফ্রন্টের নেতারা জানান, সংলাপের ব্যাপারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার আমন্ত্রণপত্রে লিখেছেন- অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সব বিষয় আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।’ এখন সংবিধানে থেকে বিকল্প একটি উপায় বের করতে পারলে নিশ্চয় সে ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবিধানসম্মতভাবেই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব নিয়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিকভাবে দফায় দফায় বৈঠক ও নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন ফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা। সাত দফার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই দুই দফা কিভাবে সংবিধানের ভেতরে থেকেই সমাধান সম্ভব, তা নিয়ে বেশ আগে থেকেই একটি খসড়া তৈরি করে রেখেছিল বিএনপি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রূপরেখার প্রথম দফায় বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। ২০১১ সালের ১০ই মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ কর্তৃক উন্মুক্ত আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ের আলোকে কর্মরত বা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও বিচারপতিগণকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সহায়ক সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।

দ্বিতীয় দফায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- বর্তমান প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য লিখিত পরামর্শ দেবেন এবং রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেবেন। সংবিধানের ৫৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এবং তার পদত্যাগের পর পরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে। অথবা সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী- মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সংসদ ভেঙে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ প্রদান করবেন। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মেয়াদপূর্তির আগেই রাষ্ট্রপতি দশম সংসদ ভেঙে দেবেন।

সংবিধানের ৫৭(১)(খ)৫৮(৪) অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন এবং তার পদত্যাগের পর পরই মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত বিবেচিত হবে। তৃতীয় দফায় বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগের পর রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৫৭(৩) অনুুচ্ছেদ প্রয়োগ না করে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন প্রধানমন্ত্রী ও একজন প্রধান বিচারপতি নিয়োগের একক সাংবিধানিক মতামত প্রয়োগ করবেন। চতুর্থ দফায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ৫৬(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ এক-দশমাংশ মন্ত্রী অনির্বাচিতদের মধ্য থেকে মনোনীত হতে পারবেন। তবে তাকে অবশ্যই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন হতে হবে। সংবিধানের এই বিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবার কাছে আস্থাভাজন একজন বিশিষ্ট নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে ওই সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, রাষ্ট্রপতি সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা এর অঙ্গসংগঠনের সদস্য বা সম্পৃক্ত নন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী নন কিংবা প্রার্থী হবেন না এমন একজন ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন। সংবিধানের ৭২ এর ৩ অনুচ্ছেদ বলা আছে- রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভাঙিয়া না দিয়া থাকিলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে পাঁচবৎসর অতিবাহিত হইলে সংসদ ভাঙিয়া যাইবে। আর সংবিধানের ১২৩ (ক) অনুচ্ছেদে বলা আছে, সংসদ রেখে নির্বাচন করা যাবে। ১২৩ (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে- সংসদ ভেঙে নির্বাচন করা যাবে। ঐক্যফ্রন্ট চাইছে- সংসদ ভেঙে নির্বাচন।

বিদ্যমান সংবিধানের মধ্যে থেকেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের পথ বের করা সম্ভব বলে মনে করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। কিছুদিন আগে এক আলোচনা সভায় ফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন- ‘আমরা সংলাপে দেখিয়ে দেবো, কিভাবে সংবিধানের ভেতর থেকেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব।’ এদিকে ১লা নভেম্বর সচিবালয়ে ভারতের ফুড এন্ড পাবলিক ডিস্ট্রিবিউশন সচিব রবিক্রান্ত’র নেতৃত্বে আসা একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন- ‘সংলাপে সব ইস্যু নিয়েই আলোচনা হবে।

তবে সমাধান হবে সংবিধানের মধ্যে থেকেই। আমাদের ভবিষ্যৎ সুনির্দিষ্ট। একটি অবাধ, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা আমাদের সকলের লক্ষ্য।’ বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনে সংবিধান কোন বাধা নয়। বিদ্যমান সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদসহ বিভিন্ন অনুচ্ছেদে পরিষ্কার বলা আছে সবকিছু। তিনি বলেন, আইনের দুইটি অর্থ হয়। একটি আক্ষরিক, অন্যটি ব্যবহারিক। সংবিধান অনেক ফ্লেক্সিবল। এখানে ব্যাখ্যার মাধ্যমে সংকট তৈরি ও ব্যাখ্যার মাধ্যমে সমাধানের পথ বের করা যায়।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের সুবিধামতো ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলেই সংবিধানকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে প্রতিবন্ধক মনে হচ্ছে। জনগণের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যাখ্যা দিলে সমাধানের পথ খোলা। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন বলেন, সরকার সংবিধান নিয়ে অনড় থাকলেও সংবিধানের মধ্যেই রয়েছে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আয়োজনের সমাধান। যদি সরকার আন্তরিক হয়, তাদের সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটান। দেশবাসীর প্রত্যাশা সরকার সংবিধানের ১২৩ (৩) এর বিধি মেনে একটি গ্রহণযোগ্য পথে এগোবে।

২রা নভেম্বর গণফোরাম আয়োজিত জেলহত্যা দিবসের আলোচনায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন- ‘আলোচনার ভিত্তিতে ঐক্যমত হলে সংবিধানের মধ্যে থেকেই সংকট সমাধান সম্ভব। ঐক্যের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি, সংবিধানকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান সম্ভব। ঐক্যবদ্ধভাবে বসলে মনখুলে আলোচনা করে সব সমাধান করা সম্ভব। সংবিধানে যে লক্ষ্যগুলো আছে সেগুলো সামনে আনতে হবে, এগুলো অর্জন করবো। এখানে কোনো ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠীর স্বার্থ নেই। জনগণের স্বার্থেই, জাতীয় স্বার্থেই এগিয়ে যেতে হবে।’

দ্বিতীয় দফা সংলাপকে সামনে রেখে ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে জানান- ‘শেষ মুহূর্তের এই সংলাপে নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। আমরা যে সাতদফা দাবি দিয়েছি, সেটার লক্ষ্য হলো একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যাতে করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে সংসদ বাতিল, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, সামরিক বাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মোতায়েনের প্রশ্ন আছে। এসব বিষয়ে আমাদের কাছে যদি কোনো ব্যাখ্যা চাওয়া হয় আমরা সেটা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

তবে মূল ফোকাসটা থাকবে নির্বাচনকালীন সরকারের ওপরে। আর সংবিধান সংশোধন করার প্রস্তাব তো আমাদের আছেই। তবে সংবিধান সংশোধন না করেই সংবিধানের মধ্যে থেকে কিছু করা যায় কি না আমরা সেটা বিবেচনা করছি। আসল কথা হলো, আমাদের পক্ষ থেকে কতটা মানিয়ে নেয়া সম্ভব, সেটাও বিবেচনার বিষয়।’ ওদিকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে সংবিধানের মধ্যে থেকে সর্বোচ্চ ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে সংলাপে অংশ নেয়ার কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ চায় না ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির মতো নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হোক।

নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে জন্য প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিশেষ করে নির্বাচন কমিশন যেন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তাদের ওপর যেন সরকার কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে, সংলাপে আমরা এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়ার চেষ্টা করবো। তিনি বলেন, সরকার থাকবে নামমাত্র। নির্বাচনকালীন সময়ে তাদের কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকবে না। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যেসব পশ্চিমা দেশে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে, ওইসব দেশ থেকে যদি নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল আসে। আমাদের তাতে কোনো আপত্তি নেই।’

অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিসট্যান্ট প্রফেসর রাশেদা রওনক খান বলেন- ‘যারা দাবি দাওয়া উপস্থাপন করবেন তাদের নিশ্চয়ই মাথায় আছে যে সংবিধান পরিবর্তনের এখন আর সময় নেই। কিন্তু সংবিধান আর আইন সংশোধনের বাইরে যে দাবি দাওয়াগুলো আছে সেগুলোতে দর-কষাকষির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সেখানে অনেক কিছু মেনে নেয়ারও জায়গা তৈরি হবে। দ্বিতীয় দফা সংলাপে দুইপক্ষ ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়ে বাস্তবসম্মত দাবি উপস্থাপন করলে একটি সমঝোতায় আসা সম্ভব।’ তবে ১লা নভেম্বর প্রথম দফা সংলাপের আগে বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন- ‘আলোচনার আগেই তো আমি আপনাদের বলতে পারবো না, কোন জায়গায় পৌঁছাবো, কোন জায়গায় ছাড় দেব, কোন জায়গা ছাড়বো না। এটা তো আমার পক্ষে এখনই বলা সম্ভব না। আলোচনা হবে। যদি দেখা যায় যে আলোচনা ফলপ্রসূ হচ্ছে, তখন পুরো বিষয়টি নিয়েই আলোচনা হবে। মানবজমিন

সর্বশেষ