spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

বিএনপির মনোনয়ন চূড়ান্ত লন্ডন থেকেই

spot_img

সাক্ষাৎকার নেওয়া মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্য থেকে আসনভিত্তিক ছোট তালিকা করছে বিএনপির সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড। এ তালিকা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লন্ডনে পাঠানো হবে। এটির সঙ্গে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার আগে করা একটি তালিকা মিলিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন তারেক রহমান। আওয়ামী লীগসহ তাদের মহাজোটের প্রার্থী দেখে এই চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণা করা হবে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

- Advertisement -

ছোট তালিকা করার ক্ষেত্রে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, দলের জন্য ত্যাগ ও চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে টিকে থাকতে পারবেন, তাদের বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত নন এবং সরকারের দমনপীড়নে টিকে থাকতে পারবেন না, এমন প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যদের প্রার্থী হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তাদের ঢাকার নেতারা লন্ডনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিচ্ছেন।

এবারের সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী বাছাইয়ে একাধিক জরিপ করেছে বিএনপি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার নিজস্ব লোকদের দিয়ে জরিপ করেছেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন গেলে সে সময় সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি তালিকা তারেক রহমানকে দিয়ে আসেন। এখন মনোনয়ন বোর্ডের ছোট তালিকার সঙ্গে তারেক রহমানের জরিপ ও খালেদা জিয়ার তালিকা মিলিয়েই চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির দফায় দফায় বৈঠক চলছে। সঙ্গে স্কাইপিতে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দিয়ে অপেক্ষাকৃত যোগ্য প্রার্থীকেই চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে কারও ব্যক্তিগত কোনো সুপারিশ খাটছে না বলে স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানিয়েছেন।

প্রার্থী বেছে নেওয়ার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এবার যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই আন্দোলনে বিএনপি জয় লাভ করতে না পারে, তা হলে জাতিকে খেসারত দিতে হবে। এ নির্বাচনের ওপর কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানের নিরাপদে দেশে ফেরা নির্ভর করবে।

সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় সবাই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে কথা দিয়েছেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থেকে কাজ করবেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের এই অঙ্গীকারে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। কঠিন এই কাজটি আমরা নিরপেক্ষ থেকে করার চেষ্টা করছি। এসব কারণে যাকে মনোনয়ন দিলে ধানের শীষের বিজয় হবে তাকেই আমরা প্রার্থী হিসেবে বেছে নেব।

জানা গেছে, বিএনপির দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে ২০-দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের জন্য ৫০ থেকে ৬০ আসন ফাঁকা রাখা হবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে ২০-দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের তালিকাও দেখা হবে।

প্রার্থীর তালিকা তৈরি করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত মনোনয়ন বোর্ড গত কয়েকদিন ধরে বৈঠক করছেন। জানা যায়, দিনাজপুরে জিয়া পরিবারের এক আত্মীয়ের পক্ষে সুপারিশ করেন স্থায়ী কমিটির পাঁচ-ছয়জন সদস্য। তারেক রহমান স্কাইপিতে বলেন, তার চেয়েও কোনো যোগ্য প্রার্থী আছেন কি-না। এ সময় ওই ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হলে তারেক রহমান তাকেই সায় দেন। এ ছাড়া বগুড়া জেলার দায়িত্ব তারেক রহমানের হাতে ছেড়ে দেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটি। তারেক রহমান বলেন, সারা দেশে আপনারা প্রার্থী নির্ধারণ করছেন, বগুড়াও আপনারাই করবেন। পরে বগুড়ার প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।

দলটির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য জানান, প্রতিটি আসনের জন্য সাক্ষাৎকার দেওয়া প্রার্থীদের মধ্য থেকে একজনকে সম্ভাব্য হিসেবে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এর সঙ্গে একজন বা দুজনকে বিকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে। কাকে কেন বেছে নেওয়া হচ্ছে- এ বিষয়ে প্রতিজনের পাশে স্থায়ী কমিটির নেতাদের মন্তব্যও থাকছে। আজকালের মধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছোট তালিকা করার কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে বলে নেতারা জানান।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে বিএনপির ২ হাজার ৫৮৬ মনোনয়নপ্রত্যাশী সাক্ষাৎকার দেন। এ সময় কাউকেই ইতিবাচক সংকেত দেওয়া হয়নি। তাই আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের।

দলীয় সূত্র জানায়, এবারের নির্বাচনকে আগের গুলোর মতো মনে করছে না বিএনপি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দলটি। সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের আইনি জটিলতা এড়াতে প্রতি আসনে দুই থেকে তিনজন মনোনয়নপ্রত্যাশী রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। এর পর দল যাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবে, তিনি ছাড়া অন্যরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন।

নিয়ম জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মোখলেছুর রহমান বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় দলের পক্ষ থেকে মনোনীত ব্যক্তির তালিকা ইসিতে জমা দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী তিনিই চূড়ান্তভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হবেন।

তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন আগামী ২৮ নভেম্বর। যাচাই-বাছাই ২ ডিসেম্বর। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর। ১০ ডিসেম্বর প্রতীক পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু করতে পারবেন প্রার্থীরা।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ