ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে সরকার : রিজভী

 

- Advertisement -

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবনকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্বাচনী আইনবিরোধী কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান হয় যে, সরকার একতরফা ও ভোটারশূন্য নির্বাচনের পথেই হাঁটছে।

আজ শুক্রবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে সশস্ত্র বাহিনীর দেড় শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাঠে নামছেন। যাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী কর্মকর্তা। গত মঙ্গলবার বিকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে তারা এই অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।’

রিজভী বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। আচরণ বিধির ১৪ ধারায় বলা আছে, সরকারের সু্বধিাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তার সরকারি কর্মসূচির সাথে নির্বাচনী কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড যোগ করতে পারবেন না। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দেড়শো সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করার যে অঙ্গীকার করেছেন তা কি আচরণবিধি ভঙ্গ নয়? কেননা সেদিনের অনুষ্ঠানটি সরকারি কোনো কর্মসূচি ছিল না।সরকারের সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে এবং রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবনকে ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকে বিতর্কিত করে তুলেছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নির্মান করতে দিচ্ছেন না। প্রধানমন্ত্রী গত মঙ্গলবার তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা জনাব তারেক রহমান রহমানসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন তা অরুচিকর, অশ্রাব্য ও উস্কানিমূলক। তফসিল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী এ ধরণের বক্তব্য দিতে পারেন না।’

নির্বাচনী আচরণবিধির ১১ ধারায় বলা আছে, কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা তাদের মনোনীত কেউ বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি উস্কানীমূলক বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করতে পারবেন না। ওই ধারা উপ-ধারা (ক) তে উল্লেখ আছে, ‘নির্বাচনী প্রচারণাকালে ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করে বক্তব্য প্রদান বা কোনো ধরণের তিক্ত (উস্কানিমূলক বা মানহানিকর) বক্তব্য প্রদান করতে পারবেন না। যদিও নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী বর্তমানে সব ধরণের প্রচার-প্রচারণা বন্ধ তবু এই উস্কানীমূলক বক্তব্য প্রদান করে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করেছেন।

রিজভী বলেন, তফসিল ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয় ভবন গণভবনে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের গণভবনে সাক্ষাতকার নিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিদের নিয়ে একতরফা নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার প্ল্যান করা হচ্ছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার ও বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারদের নানা ধরণের নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে।

বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দলবাজ নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কখনোই সাহসী হতে পারবেন না। মূলত জাল-জোচ্চুরি-প্রহসনের ভোটের জন্য নির্বাচন কমিশন সরকারকে সব ধরণের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। সুস্পষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রী আচরণবিধি অমান্য করলেও নির্বাচন কমিশন তাতে কর্ণপাত না করে নির্বাচন নিয়ে সরকারের গোপন মিশনগুলোর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করছে। প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন কমিশনের পক্ষে বিধিভঙ্গকারী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কার্যত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব নয়। তবে এখনো সময় আছে, নিজেদেরকে সরকারের ছাতার নিচে থেকে বের করে জনগণের ছাতার তলে আসুন। জনগণের হরণকৃত ভোটারাধিকার ফেরত দেয়ার চেষ্টা করুন। আশা করবো, বিধিভঙ্গের জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করবেন। যদি বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচনের চিন্তা করে থাকেন, তাবে আপনারা রেহাই পাবেন না। অন্যায় বা অবিচারের পন্থা অবলম্বন করলে দেশের সাধারণ মানুষ তা রুখে দিতে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে আপনাদের।’

রিজভী জানান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হককে একটি মিথ্যা মামলায় বিচারিক আদালত সাজা প্রদান করে। এরপর তিনি এই সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করলে মাননীয় উচ্চ আদালত ব্যরিস্টার আমিনুল হককে মামলা থেকে খালাসের সিদ্ধান্ত দেন। অথচ কিছু ইলেকট্রনিক মিডিয়া ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে উড়ো, অবান্তর ও মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এধরণের অপপ্রচার সৎ ও দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার পরিপন্থী। আমি বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোকে আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিনি বলেন, ‘ভোলার লালমোহন পৌরসভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের বাসায় গতকাল আওয়ামী লীগের এমপি নুরুন নবী শাওনের সশস্ত্র ক্যাডাররা আক্রমণ চালায়। কাউকে না পেয়ে বাসায় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাংচুর করে এবং একমাত্র বাসিন্দা কেয়ারটেকারের ওপর চড়াও হয়ে তাকে বেদম মারধর করে। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এই হচ্ছে সিইসির অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের নমুনা!

মাগুরা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে সরকারদলীয় প্রার্থীদের আপ্যায়নের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আর এই ঘটনায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে সরকারদলীয় দুইজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে জেলা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা মাগুরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আলী আকবর উভয় প্রার্থীকে ফল-মিষ্টির আপ্যায়ন করান। কিন্তু অন্য দলের প্রার্থীদেরকে বসতে বলার সাহসই পাননি জেলা প্রশাসক।’

তিনি জানান, ‘ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মো: খতিবুর রহমান খোকন, কামরাঙ্গীর চর থানা বিএনপির মোয়াজ্জেম হোসেন মোড়ল, মুগদা থানা বিএনপির শেখ মোহাম্মদ আলী চায়না, বিএনপি নেতা শাহজাহান, মনির হোসেন টিটু, আশরাফুজ্জামান তানভীর, নাজমুল হাসান প্যারোট, জাহিদ হাসান, লিটন, এনায়েত, মিঠু মোল্লা ও বাবুসহ কমপক্ষে ২৫ জন নেতাকর্মীকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের জাহাঙ্গীর হোসেন, মো: কবির হোসেন লিটন, গুলশান থানা বিএনপির তোফায়েল শিকদারকে গতকাল তার শাহজাদপুরস্থ বাসভবন থেকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।

শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন দুলালকে গতকাল বিকেলে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আমি বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তাদের অসত্য ও হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।’

রিজভী আরো জানান, ‘৯টি মোটরসাইকেলযোগে মুখোশ পরিহিত অবস্থায় আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর বিএনপি নেতা আখলাকুর রহমান সেলির দোকানে এসে আখলাকুর রহমান সেলিকে নির্মমভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে। তার দোকানেও সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। মুমূর্ষু অবস্থায় আখলাকুর রহমান সেলিকে এখন ঢাকায় নিয়ে আসা হচ্ছে। হামলাকারী সন্ত্রাসীরা জেলা ছাত্রদল সহ-সভাপতি শাহীনকেও কুপিয়ে আহত করেছে। তিনি এখন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই পৈশাচিক ও বর্বরোচিত হামলা এবং আখলাকুর রহমান সেলিম ও শাহীনকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলমবে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি করছি। আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।’

সর্বশেষ