বাংলাদেশে বিরোধীদল বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, গ্রেপ্তার আতঙ্কের কারণে ভোটের মাঠে এখনও সেভাবে সক্রিয় হতে পারছেন না তাদের নেতা কর্মীরা।
তারা দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশনে বার বার অভিযোগ তুলে ধরার পরও তফসিল ঘোষণার পর থেকে প্রায় এক মাসে তাদের দুই হাজারের বেশি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন বিনা কারণে কাউকে গ্রেপ্তার বা পুলিশি হয়রানি না করার ব্যাপারে তাদের নির্দেশের কথা তুলে ধরছে।
অন্যদিকে, সারাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের মাঝে নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দলটির নেতারা বলছেন।
দক্ষিণে পশ্চিমে সীমান্তবর্তী যশোরের শার্শা উপজেলায় বিএনপির ভাল সাংগঠনিক অবস্থান রয়েছে।
কিন্তু সেই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান জহির অভিযোগ করেছেন, সেখানে তাদের সাংগঠনিক শক্তি ভাল হলেও নেতা কর্মীরা নির্ভয়ে বা স্বতস্ফূর্তভাবে মাঠে নামতে পারছে না। পুলিশি হয়রানি এবং গ্রেপ্তাররের ভয়ে তারা এখনও একটা গুমোট পরিবেশের মধ্যে রয়েছেন বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
আবুল হাসান জহির বলেছেন, গত এক সপ্তাহের মধ্যেই নাশকতার নতুন একটি মামলা দিয়ে বিএনপির নয়জন স্থানীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
‘শার্শা ছোট একটা উপজেলা। এখানে আমাদের নেতা কর্মীরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু পুলিশের ভয়ে আমরা আতঙ্কিত। নাশকতার মামলা হচ্ছে। ফলে আমাদের নেতা কর্মীরা মাঠে নেমে যে ভোট করবে, সেই সাহস পাচ্ছে না।’
অন্যদিকে, শার্শা উপজেলাতেই গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা সক্রিয় হয়েছেন।
নির্বাচনের প্রস্তুতিতেই তাদের মাঝে উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যেমনটা বলছিলেন এই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল।
তিনি বলেন, ‘দলের নেতা-কর্মীরা সকলেই এখন একটা উৎসবমুখর পরিবেশে রয়েছেন । প্রতিটি ইউনিয়নে-গ্রামে এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতা কর্মীদের মাঝে যে উৎসাহ, এটা লক্ষণীয়।’
ঢাকায় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সারাদেশেই সবদলের নেতা কর্মীদের মাঝেই ভোট উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে।
কিন্তু শার্শা উপজেলার মতই দেশের অন্যান্য নির্বাচনী এলাকাতেও গ্রেপ্তার আতঙ্ক থেকে বিএনপির নেতা কর্মীরা ভোটের মাঠে স্বতস্ফূর্তভাবে সক্রিয় হতে পারছে না বলে ঢাকায় বিএনপির নেতারা বলছেন।
তারা মনে করছেন, এ ধরণের পরিবেশ অব্যাহত থাকলে নির্বাচনী প্রচারণায় এবং এমনকি ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও তাদের সমস্যা হতে পারে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলছিলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে তাদের দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তার ভাষায়, ‘আইন শৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও বেপরোয়াভাবে বিএনপির নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করছে। নির্বাচন মানেই তো উৎসবের একটা আমেজ। কিন্তু সবসময় সংশয় শঙ্কার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। গ্রেপ্তারের ভয় পেতে হচ্ছে।’
রিজভী আরও জানিয়েছেন, নাশকতার পুরোনো মামলাগুলো সচল করে বিএনপি নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং অনেক এলাকায় নতুন মামলাও দেয়া হচ্ছে।
তিনদিন আগে ঢাকার কাছে টঙ্গী থেকে সেখানকার বিএনপির যুব সংগঠনের একজন নেতা জসীম ভাটকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তার মেয়ে জেসিন ভাট অভিযোগ করেছেন, নাশকতার পুরোনো মামলায় তার পিতা জামিনে থাকলেও দলের নির্বাচনী বৈঠকের সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিএনপি এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনের সাথে কয়েকদফা বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে দলটি নির্বাচনে তাদের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হিসেবে গ্রেপ্তারের ইস্যুকে তুলে ধরেছে।
তারা সপ্তাহ দুয়েক আগে তাদের পাঁচশ’র বেশি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তারের একটি তালিকাও কমিশনকে দিয়েছে। এরপরও পরিবেশ বদলাচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করছেন।
তবে একজন নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম এই ইস্যুতে আইন শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনীর প্রতি তাদের নির্দেশের কথা তুলে ধরেন।
‘আমরা কিন্তু ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি যে, বিনা কারণে বা কোন হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার যেন করা না হয়। এরপরও উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিনাকারণে গ্রেপ্তার করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অবশ্যই কমিশন জবাবদিহিতার মধ্যে আনবে।’
এদিকে, পুলিশে উর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে, তারা দাবি করেছেন, ফৌজদারি অপরাধের মামলার সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত ছাড়া কাউকেই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা