একাদশ জাতীয় নির্বাচনের অনিয়ম নিয়ে নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করবে বিএনপি। দেশের প্রত্যেক জেলায় কমপক্ষে একটি করে মামলা করার এ নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তবে জেলার অন্যান্য প্রার্থীরাও মামলা করতে চাইলে মামলা করতে পারবেন। গতকাল শনিবার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রার্থীদের এক বৈঠকে মামলা করার সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়। পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। এ সময় লন্ডনে চিকিৎসাধীন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্কাইপিতে প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিভিন্ন অনিয়মের দাবি তুলে দলগতভাবে মামলা করার কর্মসূচি ঘোষণা করলেও শেষ পর্যন্ত সরে এসেছিল বিএনপি। ট্রাইব্যুনালে মামলার বিষয়টি হয়ে পড়েছিল অনিশ্চিত। তবে নানামুখী আলোচনা-পর্যালোচনার পর শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক জেলায় অন্তত একটি করে হলেও মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এ মামলা করা হবে। নেতারা জানিয়েছেন, বিচার বিভাগ যতই পক্ষপাতিত্ব করুক না কেন, তাদের দেয়া তথ্য-প্রমাণকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। এলাকায় প্রতিটি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ভোটের তালিকায় অনেক মৃত, বিদেশে অবস্থানকারী এবং দলীয় নেতাকর্মীদের নামে দেয়া ভোটের হিসাব দেখতে গেলেই প্রকৃত ঘটনা বের হয়ে আসবে। ভোটারদের ভোট দেয়ার ব্যালট বই জব্দ করা হলে এবং তার ওপর বিচারকাজ পরিচালনা হলে তারা ন্যায়বিচার পাবেন। তবে কোনো কারণে ন্যায়বিচার না পেলেও এলাকার ভোটারদের কাছে তাদের অধিকারের জন্য আইনি লড়াই করার বিষয়টি দৃশ্যমান হবে। এমন বিবেচনা থেকেই নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে প্রত্যেক জেলায় একটি করে প্রতীকী মামলা করার সিদ্ধান্তটি নিয়েছে বিএনপি।
বৈঠকে প্রায় ৬০জন প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। তিনটি গ্রুপে পৃথকভাবে তারা এ বৈঠকে অংশ নেন। এসময়ে প্রায় প্রত্যেক নেতা নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তি করণীয় নিয়ে বক্তব্য দেন। তারা বলেন, যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে তা পৃথিবীর কোথাও হয়নি। কোন কারণে বিচার বিভাগে তারা সুবিচার না পেলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ডকুমেন্টস হিসেবে এ মামলার গুরুত্ব রয়েছে। এর মধ্যে ভোলায় মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, বরিশালে জহিরউদ্দিন স্বপন, পিরোজপুরে রুহুল আমিন দুলাল, খুলনায় রকিবুল ইসলাম বকুল, সাতক্ষীরায় হাবিবুল ইসলাম হাবিব, পটুয়াখালীতে এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মাগুরায় নিতাই রায় চৌধুরী, যশোরে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, পাবনায় হাবিবুর রহমান হাবিব, সিরাজগঞ্জে আমিরুল ইসলাম খান আলিম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মো. শাহজাহান মিয়া, ঝিনাইদহে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ঝালকাঠি জেবা আমিন খান, জামালপুরে শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, ময়মনসিংহে আবু ওহাব আকন্দ, নেত্রকোনায় আনোয়ারুল হক, কিশোরগঞ্জে শরীফুল আলম, ঢাকায় নবীউল্লাহ নবী ও ইরফান ইবনে আমান অমি, ফরিদপুরে শামা ওবায়েদ, হবিগঞ্জে জি কে গউছ, কক্সবাজারে লৎফুর রহমান কাজল ছাড়াও প্রতিটি জেলায় মামলা করার জন্য একজনকে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম, ময়মনসিংহ জেলা দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আবু ওহাব আকন্দ, জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, রফিকুল আলম মজনু, জেবা খান ও ইরফান ইবনে অমি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।