ভারত-পাকিস্তান সংকটে কী করবে সৌদি আরব?

 

- Advertisement -

ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পুলওয়ামায় বোমা হামলার ঘটনায় দেশটির আধাসামরিক বাহিনীর ৪৯ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে ভারত ও প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের মধ্যে। ইতিমধ্যেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সেনাবাহিনীকে কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে।

এদিকে হামলার পরে পূর্বনির্ধারিত এশিয়ার চার দেশ সফরের অংশ হিসেবে রোববার পাকিস্তানে আসেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে ২ হাজার বিলিয়নের অর্থনৈতিক চুক্তি ছাড়াও বড় ধরনের কয়েকটি চুক্তি করেন। এ সময় তিনি পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের অনুরোধে সৌদির কারাগারে বন্দি ২ হাজার ১০৭ পাকিস্তানি বন্দিকে মুক্তি দেন।

২০১৭ সালে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর যুবরাজ সালমানের এটাই ছিল প্রথম পাকিস্তান সফর। এরপর পাকিস্তান থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বিমানে নয়াদিল্লি পৌঁছানোর কথা থাকলেও তিনি রিয়াদের উদ্দেশে চলে যান। তবে মঙ্গলবার রাতে তিনি ভারতে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

এদিকে সোমবার সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবের জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের কোনো পথ খুঁজে পাওয়া যায় কি-না তা দেখছে রিয়াদ।

ভারতে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সফরের একদিন আগেই রিয়াদ শান্তিপূর্ণ আলোচনার পথ খুঁজছে।

তবে বিদেশি গণমাধ্যম বলছে, কাশ্মীর ইস্যু এবং সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে ভারতের অবস্থান সম্পর্কে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে চায় রিয়াদ।

এসব গণমাধ্যম দাবি করছে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতীয়দের সংবেদনশীলতা উপলব্ধি এবং দিল্লির কৌশলগত তাৎপর্য অনুধাবন করেই তিনি সরাসরি পাকিস্তান থেকে দিল্লি সফর বাতিল করে দেশে ফিরে গেছেন।

তবে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বিনিয়োগ, বিদ্যুৎ এবং আবাসন খাতে দিল্লি এবং রিয়াদের মধ্যে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।

বুধবার ভারতের সঙ্গে তার গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর নয়াদিল্লি থেকে তার চীন সফর করার কথা রয়েছে।

পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পরে সৌদি যুবরাজের পাকিস্তান সফর নিয়ে কোনো বিপত্তি দেখছে না ভারত। কারণ যুবরাজের এ সফরটি আগে নির্ধারিত ছিল।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছে, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারত এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্ক আমূল পরিবর্তন হয়েছে। তাই সবদিক থেকে ভারতের নয় বরং পাকিস্তানেরই চিন্তিত হওয়ার কারণ রয়েছে।

কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী জইশ-ই-মোহাম্মদ। এ হামলায় পাকিস্তানকেই দায়ী করছে ভারত। তবে হামলার পর থেকেই পাকিস্তান দাবি করছে এর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

এসব ঘটনা নিয়ে কয়েক দিন আগে ভারতীয় বিমানবাহিনী ১৪০টি যুদ্ধবিমান নিয়ে সামরিক মহড়া দিয়েছে।

হামলার ঘটনা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পাকিস্তানকে ‘এক ঘরে’ করার ঘোষণা দিয়েছে নয়াদিল্লি। এ নিয়ে কাশ্মীরি জনগণের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। ভারতীয় কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কে জে এস ডিলন কাশ্মীরিদের মায়েদের সতর্ক করেছেন। কাশ্মীরে অস্ত্র হাতে নিলে গুলি করে মারা হবে বলেও হুমকি দেন।

এসব নিয়ে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে এক ভাষণে ভারতকে পরিষ্কার জানিয়ে দেয় ভারত হামলা করলে পাকিস্তান বসে থাকবে না। এমন উত্তেজনার মধ্যে সৌদি যুবরাজ কী কূটনৈতিক সমাধান করে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করছে বিশ্লেষকরা।

১৯৪৭ সাল থেকেই ভারত-পাকিস্তান উভয়েই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীরের পুরো ভূখণ্ডের মালিকানা দাবি করে আসছে। তবে তারা একটি অংশই নিয়ন্ত্রণ করে আসছে।

যুগান্তর

সর্বশেষ