মো.মুক্তার হোসেন বাবু : মিথ্যা যেমন সকল পাপের উৎস, তেমনি মাদক সকল অপরাধের উৎস বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল বুধবার সকালে চট্টগ্রাম হোটেল সৈকতে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদক সেবন বন্ধ করতে ডিমান্ড কমাতে হবে। তাহলেই অটোমেটিক সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বলা যায়, ডিমান্ড থাকলে সাপ্লাই হবে।
গোলাম ফারুক বলেন, মাদক ব্যবসায় করে অনেকে লাভবান হচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় এ রকম ব্যবসা থেকে সরে আসতে পারছে না। যার কারণে সমাজ দিন দিন ক্ষতিগ্রস্তের মুখে ধাবিত হচ্ছে। মাদকবিরোধীদের পাশাপাশি জঙ্গিবাদীদের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশে জঙ্গিবাদ পরিচালিত করার চেষ্টা করছে। ১৯৭১ সাল থেকে যখন বাংলাদেশের নিরীহ মানুষকে পাকিস্থান জঙ্গিবাদ ধমাতে পারেনি। তখন ভবিষ্যতেও কোনো জঙ্গিবাদ এ দেশের মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করতে পারবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশে জঙ্গিবাদের অপপ্রচার বাস্তবায়ন হতে দিবেন না।বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এই মাদক সেবনে সুফল পায় বলে মনে করে। অনেকে এটি সেবন করে সারারাত জাগ্রত থাকতে পারে। আবার অনেক মেয়েরা মনে করে, এটি সেবন করলে কোনো কিছু না খেয়ে থাকা যায়। আইনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি কারো কাছে ২৫ গ্রাম ইয়াবা পাওয়া যায়। তাহলে তাকে পুলিশ আটক করে আদালতর প্রেরণ করবে এবং আদালত তাকে মৃত্যুদন্ড দিবে। তিনি বলেন, দেশে মাদকের চিকিৎসা কেন্দ্র কম। দেশে আরো চিকিৎসা কেন্দ্র বাড়াতে হবে।
কক্সবাজারভিত্তিক মাদকের প্রসার নিয়ে ডিআইজি বলেন, মায়ানমার আমাদের ওপর ১২ লাখ রোহিঙ্গা চাপিয়ে দিয়ে অমানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। রোহিঙ্গা আসার কারণে আমাদের দেশের বন, পরিবেশ, সার্বভৌমত্বে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। এরপরেও আমরা মায়ানমার থেকে ইয়াবা এনে দেশের কোটি কোটি টাকার পাচার করে দিচ্ছি। এতে যুবসমাজকেও ধ্বংসের পথে অগ্রসর হতে সুযোগ করে দিচ্ছি। যদি আমরা মাদক দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করতে না পারি তাহলে দেশে যতই উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা হোক না কেনো সবকিছু মুখ থুবড়ে পড়বে। সমাজ ও দেশকে বাঁচাতে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের তথ্য দেন। আমরা তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখব।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে এবং মিলি চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, চট্টগ্রাম অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মো. হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম অঞ্চল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. গাজী গোলাম মাওলা, চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মজিবুর রহমান পাটওয়ারী ও র্যাব-৭ এর মেজর মোহাম্মদ মেহেদি হাসান।
এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এর যৌথ উদ্যোগে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচার বিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে মানববন্ধন, র্যালি, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা, দেওয়াল লিখন, মাইকিং, লিফলেট, স্টিকার বিতরণ, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ করা হয় । দিবসটি উপলক্ষে নগরীর নিউমার্কেট মোড় থেকে র্যালি শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মোটেল সৈকত এসে শেষ হয়। র্যালিতে সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য, জনপ্রতিনিধি, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারন জনতা অংশ নেন। এ উপলক্ষে আলোচনা সভা ও চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, মাদকাসক্ত লোক সরকারি চাকরি পাবে না। সরকারি চাকরির প্রার্থীদের পরীক্ষার অংশ হিসেবে ডোপ টেষ্ট চালু হয়েছে, এর ফলে মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা অকৃতকার্য হবেন ।