রাজনীতি নেই তবুও অস্থিরতা

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: দেশে প্রথাগত রাজনৈতিক উত্তাপ নেই বললেই চলে। বিশেষ করে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে, এমন শঙ্কা থাকলেও বর্তমানে এর বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনের পর এরই মধ্যে কেটে গেছে আট মাস। সরকারবিরোধী কার্যকর কোনো কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেই শাসকদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বিএনপি ও এর নেতৃত্বাধীন জোট-ফ্রন্ট। তারা ব্যস্ত ঘর সাজাতে। কিন্তু এমন নিরুত্তাপ অবস্থার মধ্যেও সর্বত্র এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। হঠাৎ করেই সামনে চলে এসেছে সরকারের বিভিন্ন স্তরের দুর্নীতি, লুটপাট ও তাদের দলের নেতাদের ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড; যা ক্রমেই সামাজিক অস্থিরতায় রূপ নিচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। শাসক দলও পড়েছে বেশ অস্বস্তিতে। তারা এর বিরুদ্ধে এখন বাধ্য হচ্ছে অ্যাকশনে যেতে। সরকারের এই ‘ড্রাইভ’ আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে বলে শোনা যাচ্ছে।

দুর্নীতি, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্র্মকাণ্ডের ফলাও প্রচার ও এর বিরুদ্ধে সরকারের অ্যাকশনে নেমে যাওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার খোরাক দিয়েছে। সাদা চোখে যা দেখা যাচ্ছে, তার অন্তরালে আরো কিছু আছে কি না তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। কেউ কেউ বলছেন, রাষ্ট্রকাঠামোয় লুটপাট কিংবা দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বিস্তার ঘটে দলীয় সন্ত্রাসের। কিন্তু রাজনীতির অনুপস্থিতিতে হঠাৎ করে এসব ইস্যু শক্তভাবে জায়গা করে নেয়ার পেছনে ভিন্ন কোনো কারণ থাকতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি দুর্র্নীতির চিত্র ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে আসবাবপত্রসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক পণ্য কেনায় ব্যাপক দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ পেয়েছে মাস দুই আগে। ওই প্রকল্পের ভবনের জন্য এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়েছে। এদের প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়েছে ছয় হাজার ৭১৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা! শুধু বালিশের বিষয়েই নয়, ওই প্রকল্পে আসবাবপত্র কেনা ও তা ফ্ল্যাটে তোলার ব্যয়ে ৩৬ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিস্তর আলোচনা জন্ম দিয়েছে; যা এখন ‘বালিশ কাণ্ড’ নামে পরিচিতি পেয়েছে।
আলোচিত এই রূপপুর বালিশকাণ্ডকে হার মানিয়ে আরেকটি বিস্ময়কর দুর্নীতির নজির গড়েছে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের জন্য কোরিয়া থেকে কেনা হয়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা দামের পর্দা। এত দাম দিয়ে পর্দা কেনা হলেও ব্যবহার নেই বছরের পর বছর। একই সাথে হাসপাতালটির যন্ত্র ও সরঞ্জাম কেনাকাটাতেই অন্তত ৪১ কোটি টাকার দুর্নীতির প্রাথমিক প্রমাণ পেয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বই ক্রয়ে রীতিমতো পিলে চমকানো আরেকটি দুর্নীতির খবরও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দামের একটি বই স্বাস্থ্য অধিদফতর কিনেছে সাড়ে ৮৫ হাজার টাকায়! গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজের জন্য ‘প্রিন্সিপাল অ্যান্ড প্র্যাকটিস অব সার্জারি’ নামক সার্জারির পাঠ্য বইয়ের ১০টি কপি কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ১০ কপি বইয়ের মোট দাম পরিশোধ করা হয়েছে আট লাখ ৫৫ হাজার টাকায়। শুধু এই একটি আইটেমের বই-ই নয়, দু’টি টেন্ডারে ৪৭৯টি আইটেমের সাত হাজার ৯৫০টি বই কিনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এসব বইয়ের মূল্য বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ছয় কোটি ৮৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৪৩ টাকা।

এ ছাড়া ঘর মেরামতের কাজে একটি ঢেউটিনের দাম এক লাখ টাকা, রেলওয়ের প্রকল্পে ক্লিনারের বেতন চার লাখ ২০ হাজার টাকা, চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রকল্পে ৪১ কর্মকর্তা পানি বিশুদ্ধকরণ প্রশিক্ষণের নামে আনন্দ ভ্রমণে গিয়েছেন উগান্ডায়- এমন সব অনিয়ম, দুর্নীতি ও হরিলুটের খবর একের পর এক বেরিয়ে আসছে সাম্প্রতিক সময়ে; যা সরকারের পক্ষে ধামাচাপা দেয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন।
অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, রাষ্ট্রীয় খাতে ক্ষমতার অপব্যবহারে এই দুর্নীতির ঘটনাগুলো ঘটছে। জবাবদিহি না থাকায় লাগামহীন অবস্থায় চলে গেছে দুর্নীতি। সাম্প্রতিক সময়ে অভ্যন্তরীণ খাতে ক্রয়, নিয়োগ ও প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। কাগজের সাথে বাস্তব কাজের মিল নেই। টিনের দাম কিংবা বালিশ- প্রতিটি দুর্নীতিই যোগসাজশে হয়। উন্নয়নের নামে লুটপাট করে পরে চলে ভাগবাটোয়ারা।

রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট এমন নানা উইং থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী চাঁদাবাজি, মাদক ও সন্ত্রাসের সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি শোভন ও সেক্রেটারি রব্বানীকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান এমনি এমনিতেই ঘটছে না। কারণ ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেনেও সরকার এদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রথাগত রাজনীতির অনুপস্থিতিতে লুটপাট, সন্ত্রাসের মতো এমন ইস্যু সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ঘটাতে পারে- এমন কথাও বলছেন কেউ কেউ।  সূত্র: নয়াদিগন্ত

সর্বশেষ