spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদককে পুলিশে সোপর্দ, কার্যালয়ে তালা

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লাকে নিজেদের প্রতিবেদনে ‘শহীদ’ বলায় দৈনিক সংগ্রাম অফিস ভাঙচুর করে সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশে সোপর্দ করেছে ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’ নামের একটি সংগঠন।

হাতিরঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তমিজউদ্দিন বলেন: দৈনিক সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশ হেফাজতে আনা হয়েছে, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে শুক্রবার বিকেল থেকে সংগ্রাম অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ জানায় ‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’র নেতাকর্মীরা। তখন পত্রিকার কয়েকটি কপিতে আগুন দেয়া হয়।

‘মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ’-এর সভাপতি আমিনুল ইসলাম বলেন: বিক্ষোভের একপর্যায়ে কয়েকজন নেতাকর্মী পত্রিকার কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে। এরপর সেখানে জামায়াত-শিবিরের বেশকিছু বই এবং কাগজপত্র পেয়ে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।

তবে দৈনিক সংগ্রামে কর্মরত সাংবাদিকরা জানান: বাইরে বিক্ষোভের একপর্যায়ে তারা জোর করে অফিসের ভেতরে ঢুকে কক্ষগুলোতে ভাঙচুর চালায়। এরপর সম্পাদক আবুল আসাদকে তার রুমের বাইরে এনে টিভি সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে দাঁড় করিয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। তখন তিনি ‘শহীদ’ শব্দটি ব্যবহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চান।

আমিনুল ইসলাম বলেন: যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ বলার মাধ্যমে তারা দেশের শহীদদের অবমাননা করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। আমরা চাই সরকারিভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হোক। আমরা পত্রিকার মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি। সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বলেন: যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে শহীদ বলার মাধ্যমে তারা দেশের শহীদদের অবমাননা করেছে। দেশের সার্বভৌমত্বে আঘাত করেছে। আমরা চাই সরকারিভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দেয়া হোক। আমরা পত্রিকার মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছি।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি আহমেদ হাসনাইন বলেন: আমরা ভিন্নমত এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। তবে তা মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করে নয়। পৃথিবীর কোনো দেশে সংবিধানের মূল ভিত্তিসমূহকে অস্বীকার ও খাটো করাকে স্বাধীনতা বা ভিন্নমত বলা হয় না । মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব। এই অস্তিত্বকে অস্বীকার, অশ্রদ্ধা করেও এদেশে নাগরিক সুবিধা ভোগ এবং রাজনীতি করে বেড়ায় একশ্রেণীর লোক। আমরা মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর যেকোনো বিষয়ের বিরুদ্ধে। প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রতিবাদ তো অনেক  হলো, এবার কিছু প্রতিরোধ হোক।

নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন হারানো রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতের মুখপত্র হিসেবে পরিচিত এ জাতীয় দৈনিকে আজকের (শুক্রবার) প্রকাশিত পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় ‘শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী আজ’ শিরোনামে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়: ‘‘আজ ১২ই ডিসেম্বর শহীদ কাদের মোল্লার ৬ষ্ঠ শাহাদাত বার্ষিকী। ২০১৩ সালের এই দিনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করে সরকার। জাতিসংঘের মহাসচিব থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব, মানবাধিকার সংগঠনের অনুরোধ উপেক্ষা করেই ফাঁসি কার্যকর করা হয়…।’’

দৈনিক সংগ্রামে প্রকাশিত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে জনমনে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে বিস্তর সমালোচনা। এই প্রতিবেদনকে ধৃষ্টতা বলেও আখ্যায়িত করেছেন অনেকে।

এমন প্রেক্ষাপটে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন: এটা অবশ্যই গর্হিত এবং রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ। আমরা এই সংবাদ প্রত্যাখ্যান করি, এটি কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এমন সংবাদের তীব্র বিরোধিতা করছি। দৈনিক সংগ্রামকে এর দায় নিতে হবে এবং জবাবদিহির মুখোমুখি করা হবে।

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন: স্পেন সফররত তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ দেশে ফিরলে সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। স্পেন থেকে তিনি দেশে ফিরলে করণীয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। আমি এবং মন্ত্রী মহোদয় একসাথে অফিসিয়াল প্রতিক্রিয়া জানাবো।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রথম ফাঁসি কার্যকর করা হয় রাজাকার কাদের মোল্লার। কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয় ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জল্লাদ শাজাহান ভূঁইয়ার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি দল সেদিন ফাঁসি কার্যকর করে।

এর আগে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজাকার কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২। রায়ের পর সাধারণ মানুষ বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ জনতা সেদিন বিকাল থেকে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকে। সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে শাহবাগ চত্বরে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ।

গণদাবির মুখে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করার উদ্যোগ নেয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইবুনালস) সংশোধন বিল জাতীয় সংসদে পাস হয়। এই সংশোধনের ফলে ট্রাইবুনালের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল করার সুযোগ তৈরী হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাণদণ্ড পায় একাত্তরের এই ঘাতক। মিরপুরের কসাই খ্যাত দণ্ডপ্রাপ্ত সেই কাদের মোল্লাকে ৬ বছর পরও ‘শহীদ’ বলার ধৃষ্টতা দেখিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির আর সাবেক ছাত্রসংঘের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রাম। সূত্র:: চ্যানেল আই

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ