spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

করোনায় আক্রান্ত বাড়ছে: হাসপাতালে শয্যা খালি নেই

spot_img

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে তিলধারণের ঠাঁই নেই। নতুন রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে। বাড়ছে মৃত্যুও। শনাক্তদের ১৫ ভাগের চিকিৎসা দিতেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে সংক্রমিতদের চিকিৎসা সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার বিকল্প দেখছেন না জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, দেশের সব হাসপাতালেই করোনা রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় চলতি মাসে করোনার ভয়াবহ চিত্র দেখতে হবে।

বর্তমানে দেশে করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ চলছে। দীর্ঘ ৬৬ দিন ছুটির পর রোববার থেকে অফিস শুরু হয়েছে। চলছে গণপরিবহন, বাড়ছে জনসমাগম। তাই আক্রান্তের সংখ্যা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ অবস্থায় চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ওপরও চাপ অনেক বেড়ে যাবে। সেই চাপ স্বাস্থ্য বিভাগ কতটুকু সামাল দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সবকিছু খুলে দেয়ার পর আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়তে পারে।

কিন্তু সে তুলনায় চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। এতে তীব্র সংকটে পড়বে চিকিৎসা ব্যবস্থা। তাই দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, দেশে মোট করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৮৫ ভাগই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন, বাকি ১৫ শতাংশ রোগী ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে।

এখন হাসপাতালের শয্যা সংকট ও ভীতির কারণে বাসাতেই থাকছেন অনেক রোগী। টেলিমেডিসিন সেবা নিচ্ছেন বাসায় চিকিৎসাধীন কোভিড আক্রান্তরা।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে ৮৫ ভাগ রোগীই বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ১৫ ভাগ রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

তিনি বলেন, হটলাইনে ফোন করলেই বাসায় থাকা রোগী ও সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর উত্তরার করোনা বিশেষায়িত বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, মহানগর জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল ইউনিট-২ এবং বার্ন ইউনিট, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রিজেন্ট হাসপাতাল উত্তরা ও মিরপুর এবং সাজেদা ফাউন্ডেশন হাসপাতাল নারায়ণগঞ্জে করোনা রোগীদের ভর্তির জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীদের।

পাশাপাশি দেশের বেসরকারি পর্যায়ের বড় হাসপাতাল এভারকেয়ার, ইউনাইটেড, স্কয়ার ও আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে সাধারণ রোগীর অস্বাভাবিক চাপ রয়েছে। ভর্তি রোগী ছাড়াও হচ্ছে কম।

তাই নতুন রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি এসব হাসপাতালে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেতে নানা ধরনের বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের।

এ প্রসঙ্গে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি কমিটির অন্যতম সদস্য এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান যুগান্তরকে বলেন, যে হারে রোগী বাড়ছে তাতে দেশের সব হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নয়তো প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোগীর হাসপাতাল সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের সমন্বিত নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৪৭ হাজার ১৫৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৪০৬ জন এবং এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৯ হাজার ৭৮১ জন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ২০ দশমিক ৭৪ ভাগ। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০ জনসহ এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৬৫০ জন এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩৮ শতাংশ।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বিএমএ মহাসচিব ডা. মো. ইতেশামুল হক চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, বর্তমানে যে পরিমাণ রোগীর হাসপাতালে চিকিৎসা দরকার তাদের সামলানোই কঠিন। রোগীর সংখ্যা আরও বাড়লে তাদের চিকিৎসা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।

তবে সব রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বয়স্ক ও শ্বাসকষ্টের রোগীদের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসা জরুরি। বিশেষ করে যাদের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন। তা না হলে দেখা যাবে, যাদের দরকার তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে চলতি মাস হয়ে উঠবে আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর।

স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্র জানায়, এতদিন দেশে ৯৭টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনা সেবা চলছিল। এসব হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৯৬৪টি এবং আইসিইউ শয্যা ৩৯৯টি। সম্প্রতি ৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোতে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসার নির্দেশ দেয়ায় আরও ৩শ’ হাসপাতাল এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা।

এগুলো যুক্ত হলে কোভিড রোগীদের জন্য উন্মুক্ত হবে বেসরকারি হাসপাতালের প্রায় ৯০ হাজার সাধারণ এবং সাতশ’র মতো আইসিইউ শয্যা এবং সরকারি হাসপাতালের প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ এবং দুইশ’র মতো আইসিইউ শয্যা।

তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, হাসপাতাল ও শয্যার হিসাবে গরমিল রয়েছে। কারণ নির্ধারিত সব হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। আবার যেসব হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, সেখানে যতগুলো শয্যা ব্যবহার করার কথা তার সবই ব্যবহার হচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, হিসাবের মধ্যে বসুন্ধরা হাসপাতালে ২০০০ হাজার শয্যা রয়েছে, ডিএনসিসি মার্কেট এবং শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের এক হাজার ৬৫০ শয্যা এখনও রোগীদের জন্য ব্যবহার হয়নি।

এমনকি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল যতগুলো শয্যা কোভিড রোগীদের জন্য বরাদ্দ দেখিয়েছে তার অর্ধেক শয্যাও ব্যবহার করছে না। অথচ এসব শয্যা রোগীদের সেবায় ব্যবহৃত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। ফলে কোন হাসপাতালের কত শয্যা কোভিড ডেডিকেটেড তার সঠিক হিসাব মিলছে না।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান বলেন, সারা দেশে ৫০ এর বেশি শয্যা থাকা সব হাসপাতাল, ক্লিনিকে সাধারণ ও করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের কোনো স্থানে রোগীরা যেন বিনা চিকিৎসায় না থাকে। যে কোনো রোগে আক্রান্ত হলেই নিকটস্থ হাসপাতালে যেন চিকিৎসা দেয়া হয়। তাই সামনে রোগী বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি। সূত্র:: দৈনিক যুগান্তর

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ