spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চসিকে শৃংখলা এনেছে বর্জ্য আপসারণে ৩ হাজার ৬শ’ ৪০ পরিচ্ছন্ন কর্মী মাঠে

spot_img

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃংখলা এসেছে। ‘ক্লিন ও গ্রিন’ সিটি গড়তে বর্জ্য অপসারণে ‘ডোর টু ডোর’ পদ্ধতি শুরুর পর থেকে এমন শৃংখলা ফিরে এসেছে। কর্পোরেশনের নিজস্ব কর্মীর মাধ্যমে বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহ করে। সিটি কর্পোরেশনই বর্জ্য সংগ্রহকারীদের বেতন দেয়। এই খরচ গৃহকরের মধ্যেই যুক্ত থাকে। নগরবাসীকে আলাদা কোনো টাকা দিতে হয় না। ফলে বর্জ্য সংগ্রহ নিয়ে কোনো বাণিজ্য নেই। বাসাবাড়ি থেকে সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডোর টু ডোর’। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম চালু রয়েছে।
চসিকের পরিচ্ছন্ন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ময়লা অপসারণে ৩ হাজার ৬শ’ ৪০ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী রয়েছে। আর এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীদের তদারকিতে ১২০ জন সুপারভাইজার রয়েছে। প্রত্যেক পরিচ্ছন্ন কর্মী দৈনিক ৩৪০ টাকা করে মজুরী পায়। প্রতিটি পরিচ্ছন্ন কর্মীর মাসিক ১০ হাজার ২শ’ টাকা করে ৩ হাজার ৬শ’৪০ জন কর্মীর পিছনে ব্যয় হয় ৩ কোটি ৭১ লক্ষ ২৮ হাজার টাকা।
চসিক সূত্রে জানা যায়, নগরের ৪১ ওয়ার্ডে বিতরণ করা হয়েছে প্রায় ৯ লাখের উপরে বিন (ময়লা রাখার ঝুড়ি)। এছাড়া মহল্লা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে চাকা ও ঢাকনাযুক্ত ডাস্টবিন বসানো হয়েছে। অপসারণ করা হয়েছে খোলা ডাস্টবিনগুলো। বর্জ্য অপসারণে দেওয়া হয়েছে ৮শ’এর উপরে রিকশা ভ্যান। দৈনিক গড়ে দুই হাজার টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়। এসব বর্জ্য অপসারণ করে সেকেন্ডারি ট্রান্সমিশন স্টেশনে (এসটিএস) নেওয়া হয়। পতেঙ্গা, পোর্ট মার্কেট, সাগরিকা, বরিশাল কলোনি, টাইগারপাস, এফআইডিসিতে এসটিএস রয়েছে। এসটিএস থেকে ডাম্পিং ট্রাকের মাধ্যমে অপসারণ করে ল্যান্ডফিল্ডে নেওয়া হয়। নগরীতে আরেফিন নগর ও হালিশহরে দুটি ল্যান্ডফিল্ড রয়েছে।
সরেজমিন জানা যায়, নগরের কিছু স্থানে এখনো খোলা জায়গায় বর্জ্য ফেলা হয়। এর মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের পশ্চিম সড়ক, নগরের জহুর হকার্স মার্কেটের পূর্ব পাশের মোড়, সাব এরিয়া ব্রিজের ওপর, সিনেমা প্যালেস মোড়ের দক্ষিণে, বিআরসিটি মোড়ের উত্তরে বড় অংশজুড়ে সব সময় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। এ ছাড়া নগরের হালিশহরের বড় পুল, নয়া বাজার, ডিটি রোড, মনসুরাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় পড়ে থাকে আবর্জনা। এদিকে বর্জ্য সংগ্রহে লোকবল সংকট নেই উল্লেখ করে চসিকের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী বলেন, নিয়মিত বর্জ্য অপসারণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এরপরও বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সমস্যা থেকে যায়। এ ব্যাপারে আমরা নিয়মিত তদারকি করে থাকি। কাজে অনিয়ম ঠেকাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও কঠোর মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিবছর ১৭ শতাংশ গৃহকর নেয়, যার মধ্যে ৭ শতাংশ হলো পরিচ্ছন্নতা বাবদ। এই পরিচ্ছন্নতা কর দিয়ে তারা সরাসরি বর্জ্য সংগ্রহের খরচ মেটায়। চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটা এলাকার গৃহিনী সম্পা চৌধুরী বলেন, আগে যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকত। সালে ডোর টু ডোর কার্যক্রম চালুর পর এ অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। খোলা ডাস্টবিনগুলো দেখা যায় না। ময়লার দুর্গন্ধও লাগে না।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম নগরে এখন ৭০ লাখ মানুষ বসবাস করে। পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার। বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৯ লাখ ১৩ হাজার বিন (ময়লা রাখার পাত্র) বিতরণ করা হয়েছে। ময়লা সংগ্রহের জন্য কেনা হয়েছে ৭৫২টি ভ্যান। নিজস্ব তহবিল ও অনুদানের টাকায় এসব উপকরণ কেনা হয়।
জামালখানের মোমিন রোড এলাকার বাসিন্দা চন্দনা চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন সকালে ভবনের নিচে ময়লা রেখে আসি। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বেলা আড়াইটা-তিনটার দিকে আসেন। তাঁরা এসে ময়লা গাড়িতে তুলে নেন। এর জন্য তাঁদের টাকা দিতে হয় না। প্রতিদিন সিটি কর্পোরেশনের লোকজন বাসা থেকে ময়লা নিয়ে যান।
চসিক সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি থেকে পরবর্তীতে ৩ ধাপে কার্যকর করা হয়েছে ‘ডোর টু ডোর ময়লা অপসারণ কার্যক্রম।’ ওই কার্যক্রমের আওতায় বিকেল ৩টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত প্রতিটি বাসা-বাাড়ি থেকে সরাসরি ময়লা সংগ্রহ করছেন চসিকের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা। আর তা রাত ১০ টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত নির্দিষ্ট আবর্জনাগারে ফেলা হচ্ছে। বাসা-বাাড়ি থেকে সংগৃহীত ময়লাগুলো ভ্যান গাড়িতে করে নিয়ে আসা হয় চসিকের সেকেন্ডারি স্টেশনে। সেখান থেকেই ডাম্প ট্রাকে করে ধাপে ধাপে তা নিয়ে যাওয়া হয় হালিশহরের ডাম্পিং স্টেশনে। এখন গাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় একসাথেই সেকেন্ডারি স্টেশন থেকে ময়লাগুলো নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
চসিকে ময়লা অপসারণে বিদ্যমান গাড়িগুলোর মধ্যে পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে ১১৫টি গাড়ি ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে ড্রাম ট্রাক ৫৫টি, কন্টেইনার মোবার ১৫টি, টমটম ২৫টি, ট্রাক্টার ৪টি, পেরোডার ৫টি ও খোলা ট্রাক ১১টি। নতুন করে এ বহরে ৬৩টি গাড়ি যুক্ত হওয়ায় এখন তা উন্নীত হয়েছে ১৭৮টিতে।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ