মুক্তার হোসেন বাবুঃ
চার বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে অবশেষে নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু হয়েছে মালয়েশিয়ায় । মঙ্গলবার (৯ আগষ্ট) সকালে বাংলাদেশী শ্রমিকদের প্রথম ফ্লাইট মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌছায় । এসময় তাদের স্বাগত জানান মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ গোলাম সারওয়ার ।
এছাড়াও বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম শাখার মন্ত্রী নাজমুস সাদাত সেলিম, মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও দুই দেশের সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
মালয়েশিয়ায় চার বছর পর বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকমিশনার গোলাম সারওয়ার এবং বাংলাদেশী ও মালয়েশিয়ার সকল সহকর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, আগামী তিন বছরের মধ্যে মালয়েশিয়ায় প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে এবং এর মাধ্যমে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে পাঠানো মোট রেমিট্যান্স তিন বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে এয়ার এশিয়ার একটি ফ্লাইট প্রায় 53 জন অভিবাসী শ্রমিক নিয়ে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুয়ালালামপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় । এসময় বিএমইটির মহাপরিচালক এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাতে এইচএসআইএ-তে কর্মীদের বিদায় জানান।
আগামী কয়েকদিনের মধ্যে মালয়েশিয়ার অন্যান্য কোম্পানিতে আরো কয়েক শতাধিক বাংলাদেশি শ্রমিক যাওয়ার কথা রয়েছে। এবং এর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য দীর্ঘদিনের প্রতিবন্ধকতা দূর হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই কোম্পানির জন্য এই ৫৩ জন শ্রমিকের প্রাথমিক অনুমতি চলতি বছরের এপ্রিলে দেওয়া হয়েছিল।
মালয়েশিয়া সরকার G2G প্লাস প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পাঁচটি সরকারি ও বেসরকারি খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে সম্মত হওয়ার পর, উভয় দেশ ২০১৬ সালে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
পাঁচ বছরের চুক্তিতে ১০টি কর্মী রপ্তানি সংস্থা কর্মী পাঠানোর অনুমতি দিয়েছে।
কিন্তু মালয়েশিয়া ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের বা রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে শ্রমিকদের কাছ থেকে উচ্চ মূল্য নেওয়ার অভিযোগে বাংলাদেশী কর্মীদের নিয়োগ স্থগিত করে।
করোনভাইরাস মহামারীজনিত কারণে শ্রমিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পরে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার সিদ্ধান্ত নেয় এবং গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর এ বিষয়ে দুই দেশ একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় জট ছাড়ছিল না কিছুতেই । প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং মালয়েশিয়ার হাইকমিশন এজেন্সির সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে ।
মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তাদের চাহিদাপত্র যাচাই করার পরিবর্তে, মন্ত্রণালয় চিকিৎসা কেন্দ্র অনুমোদন, বিএমইটি ডেটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ার নতুন ব্যবস্থার মধ্যে সমন্বয় সাধনের দিকে মনযোগ দিচ্ছে বাংলাদেশ ।
এরফলে, মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলো নেপাল থেকে কর্মী নিয়োগের কথা ভাবতে শুরু করে। এরপর সব বাধা পেরিয়ে আজকের ফ্লাইটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি পাঠানোর দরজা এখন আবার খুলেছে।