স্বজনদের বুকে জড়িয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া

 

- Advertisement -

৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তৃতীয়বারের মতো কারাগারে ঈদ উদযাপন করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। শনিবার ঈদের দিন কারাগারে তার সাথে সাক্ষাত করেছেন তার নিকটাত্মীয় ও পরিবারের সদস্যরা। এদিন স্বজনদের নিয়ে বাসার রান্না করা খাবার ‘বিলম্বে’ খেলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী । স্বজনদের একান্ত সান্নিধ্যে ‘অন্যরকম’ দিন কেটেছে তার।

জানা যায়, সাধারণত খালেদা জিয়া খাবার খান দুপুর দেড়টার মধ্যে। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ স্বজনদের সাক্ষাতের সময় নির্ধারণ করেছে বেলা ২টায়। ফলে অপেক্ষায় ছিলেন খালেদা জিয়া কখন আসবেন তার নিকট স্বজনরা। স্বজনদের অপেক্ষায় দুপুর পর্যন্ত অভুক্তই ছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।

ঘড়ির কাটায় ঠিক সোয়া ২টায় খালেদা জিয়ার ভাই মরহুম সাঈদ এস্কান্দারের স্ত্রী নাসরিন এস্কান্দার ও তার ছেলে শামস এস্কান্দার, শাফিন এস্কান্দার, ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ ফাতেমা, ছেলে অভিক এস্কান্দার, এরিক এস্কান্দার, ভাগ্নি অরনি এস্কান্দার, অনন্যা এস্কান্দার, শাফিয়া ইসলাম, ভাগিনা সাজিদ ইসলাম, মো. মেহরাব ও মো. আল মামুন প্রমুখ। তাদের সাথে যোগ দেন খালেদা জিয়ার বড় পুত্র তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের বড় বোন শাহিনা খান জামান বিন্দু, তার স্বামী শফিউজ্জামান।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’র গৃহকর্মী ও গাড়ি চালকও সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছেন। সব মিলে ২০ জন সদস্য কারা ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন।
বেলা সোয়া ২টায় স্বজন নিয়ে সর্বমোট ২০ জন সদস্য কারা ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। বেরিয়ে আসেন বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে।
পরিবারের সদস্যরা বাসায় রান্না করে খাবার নিয়ে যান। খালেদা জিয়া ঈদের দিনে যেসব খাবার পছন্দ করেন সেগুলো তারা রান্না করেন। কারাগারে সদস্যদের প্রবেশের আগে ওইসব খাবার ভেতরে নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা করার পর সদস্যদের কারাগারে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।

জানা যায়, বেগুনি সাদা অর্কিডের একটি ফুলের তোড়া নিয়ে আসেন স্বজনরা। এটি দিয়ে বেগম জিয়াকে তারা স্বাগত জানান। পরিবারের সদস্যরা জানান, খালেদা জিয়া বোন ও ভাইয়ের স্ত্রী ও স্বজনদের বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। ছোট ভাইসহ তাদের সন্তানেরা খালেদা জিয়াকে পায়ে ধরে সালাম করেন। এ সময় আবেগপ্রবণ হলেও খালেদা জিয়া তাদেরকে ‘আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে ধৈর্য ধারণ করতে বলেন।

বেগম জিয়া স্বজনদের নাম ধরে সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন এবং বিশেষ করে শিশু-বাচ্চারা কেমন আছে তা জানতে চান। নিজের কক্ষ থেকে অসুস্থ শরীর নিয়ে খালেদা জিয়া আত্বীয়-স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের জন্য আসেন। তাকে দুই পাশ দিয়ে দুই জন ধরে নিয়ে আসেন স্বজনদের জন্য নির্ধারিত কক্ষে। এতো কষ্টের মধ্যেও খালেদা জিয়া সকলের সাথে ঈদের ‍শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বলে জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা।

কারাগারের একাধিক কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে প্রথম শ্রেনীর বন্দি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সকালে দুধের সেমাই, জর্দা ও মিষ্টি দেয়া হয়েছে। তার চাহিদা অনুযায়ী দুপুরের খাবার রান্না করা হয়েছে। তবে খালেদা জিয়া দুপুরেই স্বজনের খাবার খেয়ে ঈদের দিনটির সূচনা করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে ঈদের দিন সকাল থেকেই সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের বাইরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। বিএনপির নেতা-কর্মীরা কারাগারের সামনে আসবে- এমন কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান।

উল্লেখ্য, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা ট্রাষ্ট মামলায় ৫ বছরের সাজার পর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরাতন কারগারে বন্দি রয়েছেন খালেদা জিয়া। সঙ্গে রয়েছে তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম। সেখানে বন্দিত্ব চার মাস ছাড়িয়েছে।

বিএনপি ঈদের আগেই তাদের নেত্রীর কারামুক্তি আশা করেছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার ঈদ কাটছে কারাগারেই। দীর্ঘ ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে খালেদা জিয়া কারা অন্তরীন অবস্থায় তিন বার ঈদ উদযাপন করেছে। তবে রাজনৈতিক সরকারের সময়ে কারাগারে তার এটি প্রথম ঈদ। এর আগে ১/১১ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ২০০৭ সালে ৩ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া গ্রেফতারের পর সংসদ ভবনে স্থাপিত সাব জেলে বন্দি রাখা হয়েছিলো। ওই সময়ে দুইটি ঈদ সেই সাবজেলে তিনি উদযাপন করেছেন। নয়াদিগন্ত

সর্বশেষ