বিনা মাশুলে ট্রানজিট সবচেয়ে বড় অর্জন: তথ্যমন্ত্রী

ভারতের মাটি ব্যবহার করে বিনা মাশুলে ট্রানজিট সুবিধা পাওয়াকে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে দেখছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, এতে তৃতীয় দেশে পোশাকসহ নানা পণ্য রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে, যেটির জন্য বহু বছর ধরে বাংলাদেশ চেষ্টা করে এসেছে।

- Advertisement -

এই সফর থেকে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি বলে বিএনপির মূল্যায়নের মধ্যে শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে) আয়েজিত অনুষ্ঠানে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের চেক বিতরণ করা হয়।

গত সোমবার চার দিনের সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী, ফেরেন বৃহস্পতিবার। এই সফরে দেশটির সঙ্গে মোট সাতটি বিষয়ে সমঝোতা সই হয়েছে। তবে বাংলাদেশের বহুল কাঙ্ক্ষিত তিস্তা চুক্তি এবারও আশ্বাসে সীমাবদ্ধ। তবে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে দুই দেশ কাজ করবে বলে দুই প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে।

এই সফরের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘এই সফরে বাংলাদেশের অর্জন এখন পর্যন্ত আমরা যেটা দেখতে পারছি যে ৫৩ কিউসেক পানি কুশিয়ারা নদীর। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত আমরা দৃশ্যমান কোনো অর্জন দেখতে পাইনি।

‘বরঞ্চ যেটা দেখতে পারছি যে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের একটা প্রতিরক্ষা চুক্তি হয়েছে ভারত থেকে যানবাহন কেনার জন্য। আর বলা হয়েছে, সীমান্তে হত্যা জিরোতে আনা হবে। যেদিন এই কথা বলা হয়েছে, সেদিনই দিনাজপুরের সীমান্তে একজনকে হত্যা করা হয়েছে আর দুজন নিখোঁজ হয়েছে- এই হচ্ছে প্রাপ্তি। আমাদের দৃশ্যমান প্রাপ্তি আমরা এগুলো দেখি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ভারত সফর অত্যন্ত সফল এবং ফলপ্রসূ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে ট্রানজিট সুবিধা।’

শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তার প্রমাণ হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির সুযোগ দেয়া। মাদকসহ মাত্র ২০টি পণ্য ছাড়া সকল পণ্যে ভারত আমাদের ট্যারিফ সুবিধা দিয়েছে, যেটি বিএনপি আদায় করতে পারেনি। খালেদা জিয়া তো ভারতে গিয়ে আমাদের গঙ্গার পানি হিস্যার কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিলেন। সেটিও আদায় করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।’

হাছান বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ন্যায্যতার ভিত্তিতে। আমাদের সরকারই ভারতের কাছ থেকে সমস্ত কিছু আদায় করেছে। ১৯৭৪ সালে ছিটমহল চুক্তি হয়েছে। সেই ছিটমহল আমাদের অধিকারে চার দশকে কেউ আনতে পারেনি। তারা কোন দেশের নাগরিক, সেটা বলতে পারত না। জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ছিটমহলগুলো আমাদের অধিকারে এনেছেন। সম্পর্ক যে ন্যায্যতাভিত্তিক তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের সঙ্গে মামলা করে সমুদ্রসীমা জয়লাভ করেছি।’

এর পরও এই ভারত সফর নিয়ে বিএনপি নানা ধরনের কথা বলেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এখন নিশ্চয়ই চুপসে গেছে। কিন্তু এর পরও আজকালের মধ্যে তারা আরও কিছু একটা বলবে।’

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের ৩৬ জন সাংবাদিকের হাতে ৩৪ লাখ টাকার অনুদানের চেক তুলে দেন মন্ত্রী।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট সাংবাদিকদের একটি আশা-ভরসার স্থল হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন সাংবাদিক মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে এককালীন ৩ লাখ টাকা দেয়া হয়। একজন সাংবাদিক অসুস্থ হলে তাকে ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হচ্ছে।

‘চেক বিতরণের ক্ষেত্রে আমরা কখনও কে কোন দল বা মতের সেটি দেখি না। আমি দল করি, আমি দলীয় সরকারের মন্ত্রী, কিন্তু যখন রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করছি, তখন সবাইকে দুই চোখে সমভাবে দেখার চেষ্টা করি, রাষ্ট্রের সাহায্য যেন সবাই পায়। যারা প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে পারলে কালকেই সরকার নামিয়ে দেয়, আমাদের বিরুদ্ধে গলা ফাটায়, তাদেরকেও আমরা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সহায়তা করেছি।’

সিইউজে সভাপতি মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে ও যুগ্ম সম্পাদক সবুর শুভর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুভাষ চন্দ বাদল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহসভাপতি শহীদুল আলম, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্য কলিম সরওয়ার।

সর্বশেষ