‘অস্ত্র মজুত করছে বিএনপি’, যা বললেন মির্জা ফখরুল

বিএনপি সীমান্ত থেকে অস্ত্র মজুত করছে’-আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যকে বিরোধী দলের ওপর অস্ত্র ব্যবহারের চক্রান্ত বলে মনে করছে বিএনপি।

- Advertisement -

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি দেশে অরাজকতা সৃষ্টির জন্য সীমান্তে অস্ত্র জড়ো করছে। তিনি কোন সময়ে এটা বলছেন, যখন দেশের জনগণ এ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে এক হয়ে রাজপথে নেমেছে, একটা চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমরা মনে করি এটা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষমতাসীনদের অস্ত্র ব্যবহারের নতুন ষড়যন্ত্র, নতুন চক্রান্ত। তার এ বক্তব্যের পর যদি জনগণের ওপর অস্ত্র ব্যবহার হয়ে থাকে, দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘আইনজীবী সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফোরাম এ সমাবেশের আয়োজন করে। এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা আইনজীবীরা অংশ নেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকায় আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করব। কোনো চক্রান্ত করে এ মহাসমাবেশ নস্যাৎ করা যাবে না। প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই, আমাদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেবেন। অন্যথায় সব দায়ভার আপনাদের নিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই সরকার সহিংসতা ছড়িয়ে দিতে চায়। আওয়ামী লীগ তাদের ২৪ তারিখের প্রোগ্রাম ২৭ তারিখে নিয়ে গেছে। কেন? কারণ তারা জনগণের সঙ্গে সংঘাত করতে চায়। তখনই কেউ সহিংসতা চায়, যখন তার জনসমর্থন হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগও তার জনসমর্থন হারিয়ে ফেলেছে।

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দল একতাবদ্ধ হয়ে একদফা দাবি আমরা ঘোষণা করেছি। সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, চলমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। যা এ ডুগডুগি বাজানো নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে হবে না। এজন্য এ কমিশনকে বিদায় করতে হবে। যোগ্য-দক্ষ, দেশপ্রেমিক এবং মেধাবী মানুষদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।

ফখরুল বলেন, আমাদের সামনে কোনো পথ খোলা নেই। ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে এ সরকার মিথ্যা মামলা দিয়েছে। রাজপথে নামলেই রক্ত ঝরাচ্ছে। অথচ কাটাছাঁটা সংবিধানের দোহাই দিয়ে তারা শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চাইছে। শেখ হাসিনার অধীনে নাকি ভোট সুষ্ঠু হবে। হিরো আলম নামে যে ছেলেটা, তাকেও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে দিতে চায় না এ আওয়ামী লীগ সরকার। তাই বলব, শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন নিয়ে দেশের মানুষের কোনো আস্থা নেই। জনগণের একটাই দাবি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার করা এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এ দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।

এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলায় ১০ মাস ধরে জেলে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রী খাদিজার মুক্তির দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি মনে করি, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের দুটি নির্বাচন অবৈধ ঘোষণা করা উচিত। এ দুটি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, তাতে জনগণ যে ক্ষমতার মালিক সেটাকে আপনারা হাস্যকর করে তুলেছেন। জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। এটা সংবিধান বর্ণিত পন্থা। মারধর করে ভোট কেড়ে নেওয়া কি সংবিধান স্বীকৃত পন্থা? বরং এটা অপরাধ।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দিয়েছেন-২৭ তারিখের মহাসমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ নাকি উসকানি দেবে না, বিশৃঙ্খলা করবে না। যদি তা না করে, তাহলে কথিত ‘শান্তি সমাবেশ’ কেন ডাকা হলো? উন্নয়ন-জয়যাত্রার সমাবেশ কেন? আপনাদের (আওয়ামী লীগ) সমাবেশে তো লোক হয় না। বিএনপির মহাসমাবেশে জনসমাগম দেখে এবার ওবায়দুল কাদেরের মুখ শুকিয়ে যাবে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বৃহস্পতিবারের মহাসমাবেশ হবে জনতার মুক্তির মহাসমাবেশ। এ মহাসমাবেশে জনতার রাজপথ জনগণই দখলে নেবে। জনগণ এ সরকারকে সরিয়ে নতুন বাংলাদেশের সূচনা করবে। যে বাংলাদেশ হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ।

ইউনাইটেড ল’ইয়ার্স ফ্রন্টের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রব, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরামের (একাংশ) সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু প্রমুখ।

সর্বশেষ