নৃত্যানুশীলনে বাধা দেয়ায়, মাকে খুন করল পালিত মেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আনোয়ারা বেগমের আদরের কিশোরী মেয়ে। চোখের আড়াল হতে দিতেন না মেয়েকে। সম্প্রতি, ইয়োগা, যোগাসনসহ বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম শুরু করে মেয়ে। ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পীর নাচের ভিডিও দেখে অনুশীলন নাচের মুদ্রা। তবে আনোয়ারা বেগমের পছন্দ নয় এসব। উল্টো সন্দেহ হয়— অমুসলিম কোনো ছেলের সাথে প্রেমে জড়িয়েছে মেয়ে। এ নিয়ে মনোমালিন্য চলার একপর্যায়ে হঠাৎ একদিন শুরু হয় ঝগড়া। একপর্যায়ে মাথায় কাঠের টুকরার উপর্যুপরি আঘাতে মেয়ের হাতেই মৃত্যু হয় মায়ের।

- Advertisement -

গত ২০ মে নগরের পাহাড়তলী থানার দক্ষিণ কাট্টলী ছদু চৌধুরী রোডে চৌধুরী আবাসিক এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ওই বাসাতেই চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার বাসিন্দা নিহত আনোয়ারা বেগম (৫৭) তার পালিত মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। ১৭ বছর বয়সী মেয়েটি স্থানীয় একটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারা বেগমের প্রথম সংসারে তিন ছেলে আছে। প্রথম স্বামী মারা যাবার পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সেই সংসারে কোনো সন্তান না হওয়ায় মেয়েটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে দ্বিতীয় স্বামীও মারা যান। দ্বিতীয় স্বামীর বোনের লন্ডন থেকে পাঠানো টাকা এবং আগের সংসারের তিন ছেলের সাহায্য নিয়ে তিনি পালিত মেয়েকে নিয়ে থাকতেন।

গত ২০ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে পালিত মেয়ে আনোয়ারার আগের সংসারের বড় ছেলে আরিফুল হক মাসুমকে ফোন করে জানায়, তার মাকে কে বা কারা মাথায় কাঠের টুকরা দিয়ে আঘাত করে ‍গুরুতর জখম করেছে। মাসুম দ্রুত ওই বাসায় গিয়ে মাকে প্রথমে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। কিন্তু আইসিইউতে শয্যা খালি না পেয়ে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তাকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় আরিফুল হক মাসুম বাদী হয়ে পাহাড়তলী থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় শুক্রবার (২৪ মে) সন্ধ্যায় আনোয়ারা বেগমের পালিত মেয়েকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে মাকে খুনের বিস্তারিত বর্ণনা দেয় কিশোরী মেয়েটি।

কিশোরীর জবানবন্দির বরাতে নগর পুলিশের পাহাড়তলী জোনের সহকারী কমিশনার মো. মঈনুর রহমান জানান, মেয়েটি ছিল আনোয়ারা বেগমের অত্যন্ত আদরের। সবসময় তাকে চোখে, চোখে রাখতেন। মেয়ে সম্প্রতি ইউটিউবের ভিডিও দেখে বাসায় ইয়োগা, যোগাসনসহ বিভিন্ন ধরনের যোগব্যায়াম শুরু করেন। একইসঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যশিল্পী মালবিকা সেনের ভিডিও দেখে তার নাচের মুদ্রা অনুশীলন করতেন। আনোয়ারা বেগম এসব পছন্দ করছিলেন না। তার মনে আরও সন্দেহ হয় যে, মেয়ে অমুসলিম কোনো ছেলের সঙ্গে প্রেমে জড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েকদিন ধরে মনোমালিন্য চলছিল। ২০ মে বিকেলে মেয়ে প্রাইভেট কোচিং শেষে বাসায় ফেরার পর নাচের মুদ্রা অনুশীলন শুরু করেন। তখন আনোয়ারা বেগম বাধা দিলে উভয়ের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়।

তিনি বলেন, ঝগড়ার একপর্যায়ে মেয়ে কাঠের টুকরা দিয়ে মায়ের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন। এতে গুরুতর জখম হয়ে অজ্ঞান হয়ে যান তিনি। ঘটনার পর ওই মেয়ে কাঠের টুকরাটি রান্নাঘরের পাশে একটি পরিত্যক্ত ডোবায় ফেলে দেয়। আমরা সেটিও উদ্ধার করেছি। আজ (শনিবার) ওই কিশোরীকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজিরের মাধ্যমে সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ