spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চট্টগ্রামে যুবলীগের বাবরের বিরুদ্ধে দুদকের দুটি মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

চট্টগ্রামের আলোচিত যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের বিরুদ্ধে দু’টি মামলা করেছে দুর্নীতি দম কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে একটি মামলায় তার স্ত্রীকেও আসামি করা হয়েছে। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. নওশাদ আলী মামলা দুটি করেছেন বলে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সুবেল আহমেদ জানিয়েছেন।

- Advertisement -

মামলায় বাবরের বিরুদ্ধে ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেক মামলায় তার স্ত্রী জেসমিন আক্তারের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৮০ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার এজাহারের তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম নগরীর নন্দনকানন বৌদ্ধমন্দির সড়কের বাসিন্দা হেলাল আকবর চৌধুরী দুদকে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে তার ১ কোটি ৭৭ লাখ ৪৪ হাজার ২৪০ টাকার সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছিলেন। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯ হাজার ২৫০ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকার অস্থাবর সম্পদ। দুদক এর ভিত্তিতে অনুসন্ধান করে বাবরের ২ কোটি ৮ লাখ ৩২ হাজার ৬৩০ টাকার সম্পদের তথ্য পায়। এর মধ্যে ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪০ টাকার স্থাবর এবং ১ কোটি ৬৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৯০ টাকার অস্থাবর সম্পদ।এ হিসেবে বাবর তার বিবরণীতে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ৩৯০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেন বলে মামলা এজাহারে উল্লেখ আছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর তার আয়কর নথিতে ২০১২-১৩ থেকে ২০২০-২১ করবর্ষ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য আয় দেখিয়েছেন ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা। পারিবারিক ব্যয় দেখিয়েছেন ২১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। তাহলে ব্যয়সহ তার স্থাবর-অস্থাবর মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৩০ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। এর মধ্যে দুদক যাচাই-বাছাই করে তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ১ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ২৭০ টাকা। কারণ, তিনি ৬২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৪৮ টাকা আয়ের সপক্ষে কোনো উৎস বা প্রমাণপত্র আয়কর নথিতে দেখাতে পারেননি।এ হিসেবে বাবরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ তার গ্রহণযোগ্য আয়ের চেয়ে ৮৮ লাখ ৮৭ হাজার ৩৬০ টাকা বেশি, যা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ হিসেবে উল্লেখ করে দুদক মামলা করেছে।

অন্যদিকে, দুদকের কাছে দেওয়া বিবরণীতে বাবরের স্ত্রী জেসমিন আক্তার ২ কোটি ৩৪ লাখ ৭৮ হাজার ৪২০ টাকার সম্পদের তথ্য দেন। এর মধ্যে ২ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ টাকার স্থাবর এবং ২৪ লাখ ৬০ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদ। তবে দুদক অনুসন্ধান করে জেসমিনের মোট সম্পদ পেয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ ২৯ হাজার টাকার। এর মধ্যে স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ২ কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৪২০ টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৪০ লাখ ১০ হাজার ৫৮০ টাকা। প্রদর্শিত সম্পদের পরিমাণ দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদের চেয়ে ১৫ লাখ ৫০ হাজার ৫৮০ টাকার কম, যা জেসমিন গোপন করেছেন বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এছাড়া জেসমিন আক্তারের আয়কর নথিতে ২০২০ থেকে ২০২২ করবর্ষ পর্যন্ত ২ কোটি ৬৬ লাখ ৫০০ টাকা আয়ের তথ্য উল্লেখ আছে। কিন্তু ১ কোটি ৭৯ লাখ ৫৫ হাজার ৩৮০ টাকা আয়ের কোনো উৎস বা প্রমাণ তিনি আয়কর নথিতে উল্লেখ করেননি। এ হিসেবে দুদক তার বৈধ আয় পেয়েছে ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকা।
আবার আয়কর নথিতে তিনি পারিবারিক ব্যয় উল্লেখ করেছেন ১৯ লাখ ২৬ হাজার টাকা। তাহলে ব্যয়সহ সম্পদের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ২ কোটি ৬৯ লাখ ৫৫ হাজার টাকার। এর থেকে বৈধ সম্পদের পরিমাণ ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকা বাদ গেলে তার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদের পরিমাণ ১ কোটি ৮৩ লাখ ৯ হাজার ৮৮০ টাকার বলে এজাহারে উল্লেখ আছে।আর জেসমিন আক্তারকে এ পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করায় তার স্বামী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরকেও এ মামলায় আসামি করেছে দুদক।

চট্টগ্রাম নগরীর ওমরগণি এমইএস কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের একটি বড় অংশের নিয়ন্ত্রক ছিলেন হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর। একসময় পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিলেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রেলওয়ের সকল টেন্ডারের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন বাবর। এ নিয়ে জোড়া খুনের ঘটনাও ঘটেছিল, যা সেসময় দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করে। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদকও ছিলেন।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ