spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

আধুনিক প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকায় নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পোশাক শিল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

আধুনিক প্রযুক্তির ঘাটতির কারণে নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে দেশের প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত তৈরি পোশাক শিল্প। বিশেষ করে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী চীন যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), রোবোটিক্স, অটোমেটেড সেলাই মেশিন, থ্রিডি ডিজাইন সফটওয়্যার, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট টুল এবং ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম ব্যবহার করছে বাংলাদেশ সে ক্ষেত্রে অনেকটাই আছে পিছিয়ে। ফলে বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী ক্রয়াদেশ নিতে গিয়ে কপালে ভাঁজ পড়ছে অনেক উদ্যোক্তাদের। তারা চান সরকারি সহায়তায় প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ।

- Advertisement -

জুলাইয়ে প্রকাশিত অর্থনৈতিক জটিলতার পর্যবেক্ষণ (ওইসি) প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের মোট পোশাক রপ্তানির ৩২ দশমিক ২ শতাংশ করে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে চীন। দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ, যার রপ্তানি ৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। বাংলাদেশের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ৫ দশমিক ১৮ শতাংশ রপ্তানি নিয়ে। চতুর্থ স্থানে ভারত ৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ এবং পঞ্চমে জার্মানি ৪ দশমিক ২৫ শতাংশ রপ্তানি করছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পোশাক রপ্তানি থেকে চীনের আয় ৩০৩ বিলিয়ন ডলার, আর বাংলাদেশের আয় ৫৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

চট্টগ্রাম ভিত্তিক গার্মেন্টস বিডি ডিজাইন প্রাইভেট লিমিটেডের পরিচালক জাবেদ হারুন বলেন, ‘চীন আজ যে অবস্থানে এসেছে তার মূল কারণ হলো প্রযুক্তিতে নিয়মিত বিনিয়োগ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। অথচ বাংলাদেশ এখনও কম খরচের শ্রমশক্তির উপর নির্ভর করে প্রতিযোগিতা ধরে রাখতে চাইছে। কিন্তু এভাবে দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বিনিয়োগের ঘাটতি। একটি আধুনিক অটোমেশন সিস্টেম স্থাপন করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, বেশিরভাগ উদ্যোক্তার সে সামর্থ্য নেই। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পাওয়া যায় না। ফলে প্রযুক্তি হালনাগাদ না করে পুরোনো মেশিনেই উৎপাদন চালাতে হয়।’

চট্টগ্রামের ক্লাসিক্যাল ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মার্কিন ট্যারিফ বাড়ায় আমরা কিছুটা চাপে পড়েছি। তবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় শুল্ক কম থাকায় আমরা একটি সুযোগও পেয়েছি। এখন এ সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। এজন্য ফ্যাক্টরিগুলোতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন জরুরি। যেমন চীন প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে উচ্চমূল্যের ফ্যাশন প্রোডাক্ট, দ্রুত ডেলিভারি ও গুণগত মান নিশ্চিত করছে। কিন্তু আমরা প্রযুক্তিগত ঘাটতির কারণে উচ্চমূল্যের ফ্যাশন পণ্যে প্রতিযোগিতা করতে পারছি না।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে লো-ভ্যালু বেসিক পোশাক উৎপাদনেই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে।’ বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) পরিচালক সাকীফ আহমেদ সালাম বলেন, ‘পোশাক খাতকে রক্ষার জন্য সরকার ও বেসরকারি খাতকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আমরা চাই সরকার সহজ শর্তে প্রযুক্তি উন্নয়নে ঋণ দিক, ট্যাক্স হ্রাস করুক এবং প্রযুক্তি আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিক। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। উন্নত প্রযুক্তি আনার পরেও যদি দক্ষ জনবল না থাকে তবে এর কোনো সুফল পাওয়া যাবে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘চীনের সঙ্গে তুলনা করলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেখানে সরকার শিল্পখাতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিশেষ ভর্তুকি ও কর ছাড় দিয়ে আসছে। ফলে কারখানাগুলো সহজেই নতুন মেশিন, অটোমেশন সিস্টেম ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম গ্রহণ করতে পারছে। একদিকে উৎপাদন খরচ কমছে, অন্যদিকে গুণগত মান বাড়ছে।’

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ