spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

চট্টগ্রামে লুট হওয়া বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-গুলির হদিস নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক
spot_img

মো.মোক্তার হোসেন বাবু : জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর গত বছর ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়িগুলোতে হামলা চালায় বিক্ষুব্ধরা। এ সময় নগরীর ছয়টি থানা আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অস্ত্রাগার ভেঙে লুট করা হয় অস্ত্র ও গুলি। এসব ঘটনায় নগরীর বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ৬৩ মামলায় এ পর্যন্ত এক হাজার ৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হলেও উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গুলির অধিকাংশ। যা নিয়ে চিন্তিত চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার মধ্যে একযোগে নগরীর ১৬ থানার মধ্যে ১০টিতে আগুন দেয়া হয়। সবেচেয়ে বেশি লুটপাট হয় ছয়টি থানায়। থানাগুলো হলো- কোতোয়ালী, পাহাড়তলী, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও হালিশহর। এসব থানার অস্ত্রাগার ভেঙে লুট করা হয় অস্ত্র।উল্লেখযোগ্য অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- আমেরিকা ও ইতালির তৈরি ৬৫টি নাইন এমএম তারাশ পিস্তল, ৪৬টি চায়না রাইফেল, ৯৫টি শটগান, ২৯টি সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল, ১৭৬৩ রাউন্ড পিস্তলের গুলি, ৩৮০০ চায়না রাইফেলের গুলিসহ নানা অস্ত্র। এর বাইরে রয়েছে গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড, গ্যাসগান, টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড।ছয়টি থানায় দায়ের করা মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া যায়। গতবছরের ১৪ আগস্ট ৩৫টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের কথা জানায় র‌্যাব-৭। তবে লুট হওয়া বেশিরভাগ অস্ত্র ও গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি।
এদিকে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছিলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থানা থেকে লুট করা অনেক অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। তারপরও কিছু কিছু অস্ত্র এখনও বাইরে রয়ে গেছে।
এ সময় চট্টগ্রামে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেছিলেন, চট্টগ্রাম এলাকাটা ভৌগলিকভাবে একটু ভিন্ন। এখানে পাহাড় আছে, সমদ্রও আছে, প্লেন ল্যান্ডও আছে। অন্য কোথাও  ভৌগলিক অবস্থান এরকম নয়। এ জায়গায় সমস্যাটা আছে। তারপরও কিছু কিছু উদ্ধার হচ্ছে, ইলেকশনের আগে আরও উদ্ধার হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়তলী থানায় গতবছরের ২৪ আগস্ট ১৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি দিয়ে একটি মামলা দায়ের করেন এসআই এনামুল হক। লুট হওয়া অস্ত্রগুলো হলো- নাইন এমএম তরাশ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ২০টি, পিস্তলের গুলি ২০০ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ২০টি, গুলি ১৬০ রাউন্ড, চায়না রাইফেল ১৪টি, চায়না এসএমজি চারটি, এসএমজির ম্যাগাজিন ১০টি, শটগান ৩০টি, শটগানের ম্যাগাজিন ১০টি, গ্যাসগান চারটি, চায়না রাইফেলের গুলি ৫৬০ রাউন্ড, চায়না এসএমজির গুলি ৩০০ রাউন্ড, শটগানের রাবার কার্তুজ ৩৮৪ রাউন্ড, লেডবল কার্তুজ ১২০০ রাউন্ড, গ্যাস শেল লং রেঞ্জ ৬০টি, শর্ট রেঞ্জ ৪০টি, সাউন্ড গ্রেনেড ৪০টি, টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড ৩৫টি, টিয়ার গ্যাস স্প্রে দুটি। এছাড়া থানায় সাধারণ মানুষের জমা দেয়া অস্ত্রের মধ্যে ১০টি একনলা বন্দুক, সাতটি রিভলবার, পাঁচটি পিস্তল, একটি ২২ বোরের রাইফেল এবং ৩৬৮ রাউন্ড গুলি লুট করে হামলাকারীরা।
এছাড়া কোতোয়ালী থানার অস্ত্রাগারের তালা ও দেয়াল ভেঙে যেসব অস্ত্র লুট করা হয়েছে তা হলো- নাইন এমএম তারাশ পিস্তল ২৩টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ৬৩টি, গুলি ৫৫৭টি, চায়না রাইফেল তিনটি, রাইফেলের গুলি ২৬৮ রাউন্ড, চায়না এসএমজি দুটি, ম্যাগাজিন দুটি, গুলি ৬০ রাউন্ড, ১২ বোর শটগান ১০টি, শটগানের কার্তুজ ২১৮২ রাউন্ড, শর্ট ও লং রেঞ্জ শেল ১০টি এবং সাউন্ড গ্রেনেড ১০টি। এ ব্যাপারে গতবছরের ২২ আগস্ট  ৪০ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রিপন কুমার দাস।
অন্যদিকে পতেঙ্গা থানায় গতবছরের ২৪ আগস্ট ২৫ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেন এসআই কেএম নাজিবুল ইসলাম তানভীর। এতে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা থানার অস্ত্রাগার, এয়ারপোর্ট পুলিশ ফাঁড়ি, টানেলের নিরাপত্তা গার্ড, এসএফের অস্ত্র ও গুলি লুট করে। লুট করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- নাইন এমএম তারাশ পিস্তল নয়টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ১৯টি, গুলি ১৭৯ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল সাতটি, ম্যাগাজিন ১৫টি, পিস্তলের গুলি ৯০ রাউন্ড, চায়না রাইফেল ১৫টি, রাইফেলের গুলি ৫১৩ রাউন্ড, চায়না এসএমজি ছয়টি, এসএমজির ম্যাগাজিন ২৩টি, গুলি ৭২০ রাউন্ড, ১২ বোর শটগান ৩০টি, শটগানের ম্যাগাজিন নয়টি, কার্তুজ ১৩১৭ রাউন্ড, গ্যাসগান নয়টি, টিয়ারশেল লঞ্চার ছয়টি, লং রেঞ্জ শেল ৭৫টি, শর্ট রেঞ্জ শেল ১১টি, সাউন্ড গ্রেনেড চারটি, টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড আটটি। এছাড়া সাধারণ মানুষের জমা রাখা বিভিন্ন ধরনের নয়টি বন্দুক ও গুলি লুট করা হয়েছে।
ডবলমুরিং থানা থেকে যেসব অস্ত্র লুট করা হয়েছে তা হলো- তারাশ পিস্তল ১০টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ১১টি, গুলি ১০৯ রাউন্ড, চায়না এসএমজির গুলি ২২৫ রাউন্ড, শটগানের কার্তুজ ৮৯২ রাউন্ড, লং রেঞ্জ শেল চারটি, শর্ট রেঞ্জ শেল দুটি ও টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড ছয় রাউন্ড। এছাড়া সাধারণ মানুষের জমা রাখা চারটি পিস্তল, একটি একনলা ও একটি দু’নলা বন্দুক এবং ৯৪ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। এ ব্যাপারে গত ২৭ আগস্ট ১২ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই ইমাম হোসেন।
ইপিজেড থানার অস্ত্রাগার, সিইপিজেড ও নিউমুরিং পুলিশ ফাঁড়ি থেকে যেসব অস্ত্র ও গুলি লুট করা হয়েছে তা হলো- নাইন এমএম পিস্তল সাতটি, পিস্তলের গুলি ১৭৪ রাউন্ড, ম্যাগাজিন ১৭টি, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ছয়টি, গুলি ১১৯ রাউন্ড, ম্যাগাজিন ১৫টি। চায়না রাইফেল ১১টি, রাইফেলের গুলি ৪৩৬ রাউন্ড, চায়না এসএমজি চারটি, এসএমজির গুলি ৩০০ রাউন্ড, ম্যাগাজিন ২৬টি, শটগান ৪৫টি, শটগানের কার্তুজ ৩১৭৮ রাউন্ড, গ্যাসগান ১২টি, গ্যাস শেল লং রেঞ্জ ১৪২ রাউন্ড, শট রেঞ্জ ১১৩ রাউন্ড, টিয়ারশেল ছয়টি, সাউন্ড গ্রেনেড ১৯টি, গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড ২০টি ও একনলা বন্দুক একটি। এ ব্যাপারে গতবছরের ২২ আগস্ট অজ্ঞাতনামা ৩০ হাজার জনের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন এসআই শাকিলুর রহমান।
হালিশহর থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট করা হয় নাইন এমএম তরাশ পিস্তল ছয়টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ১২টি, পিস্তলের গুলি ৯৮ রাউন্ড, সেভেন পয়েন্ট ৬২ পিস্তল ছয়টি, পিস্তলের ম্যাগাজিন ১০টি, পিস্তলের গুলি ৭৭ রাউন্ড, চায়না এসএমজি একটি, শটগান একটি, চায়না রাইফেলের গুলি ৯০ রাউন্ড, শটগানের কার্তুজ ৫১৮ রাউন্ড, গ্যাস শেল লং রেঞ্জ একটি, সাউন্ড গ্রেনেড দুটি, টিয়ার গ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড একটি। এ ব্যাপারে গতবছরের ২৭ আগস্ট ১৬ হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে হালিশহর থানায় মামলা করেন এসআই তৌফিকুল ইসলাম। এছাড়া বন্দর থানার হালিশহর পুলিশ ফাঁড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। ফাঁড়ি থেকে একটি শটগান, ১১ রাউন্ড কার্তুজ ও পাঁচ রাউন্ড গুলি লুট করা হয়। এ ব্যাপারে ছয় হাজার জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বন্দর থানায় মামলা করেন এসআই কিশোর মজুমদার।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ