মো.মুক্তার হোসেন বাবু: চট্টগ্রাম মহানগরীতে বৃক্ষ মেলা জমে উঠেছে। লালদিঘী ময়দানে ১৫ দিন ব্যাপী বৃক্ষমেলার সপ্তম দিনে ক্রেতা দর্শকের উপচে পড়া ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে এ চিত্র দেখা গেছে। মেলার আয়োজকরা জানান, দিন দিন ক্রেতা দর্শক বাড়ছে। বিভিন্ন প্রজাতির চারাও বিক্রি হচ্ছে। মেলাতে ১ টি শ্বেত চন্দন চারার দাম হাকা হচ্ছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
মেলায় আগত বান্দরবান পার্বত্য জেলার সাবেক জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার চৌধুরী উপ সচিব(অবঃ) বলেন, সবুজকে ভালোবাসি, তাই মেলায় এসেছি। তিনি বনরূপা নার্সারী হতে লাল জামরুলের চারা ক্রয় করেন। মেলা পরিদর্শন শেষে তিনি চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের স্টলে রক্ষিত পরিদর্শন বইতে মন্তব্যতে মেলার ভূঁয়সী প্রশংসা করেন এবং সামাজিক বনায়নের যুগান্তকারী সফলতার গুরুত্বারোপ করেন।
বন বিভাগের তথ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, মেলায় বিভিন্ন নার্সারীতে ৭ দিনে প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারা বিক্রয় করা হয়েছে। শহর রেঞ্জ কর্মকর্তা রেজাউল আলম ফরেস্ট রেঞ্জার জানান, মেলায় বিভিন্ন নার্সারী স্টলে ৭ দিনে ৩২ হাজার ৮ শত ৭৬ টি বনজ, ৩০ হাজার ৭ শত ৩৫ টি ফলদ, ১৬ হাজার ৯ শত ৪৩ টি ঔষধি বা ভেষজ, ৮ হাজার ৮ শত ৯৭ টি শোভা বর্ধক ও ২০ হাজার সাড়ে ৮ শতটি লতা, গুল্ম, অর্কিড, ক্যাকটাস, বনসাঁই, কলমচারা, দেশী-বিদেশী প্রজাতির চারা ও অন্যান্য শ্রেনীর চারা বিক্রয় হয়েছে।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য কেন্দ্রে মডেল ও ভিডিও প্রদর্শণীতে দর্শকের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর স্টলে বিভিন্ন কাঁচা পাকা ফল দিয়ে সুসজ্জ্বিত সবুজ নৌকা ভরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট বাঁশের তৈরী বিভিন্ন আকর্ষণীয় আসবাবপত্র, কঞ্চি কলম পদ্ধতির বাঁশ চাষ পদ্ধতি প্রদর্শন করছে। বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ বন্যপ্রাণীর মমিসহ বিভিন্ন সামগ্রী প্রদর্শণ করছে।
দেখা গেছে, মেলায় চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য কেন্দ্র, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, সিএমপি পুলিশ কন্ট্রোলরুম, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বাগান পরিবার ছাড়াও ব্র্যাক নার্সারী, কসমো নার্সারী, আর.এন.জে নার্সারী, নিউ কসমো নার্সারী, ফতেয়াবাদ নার্সারী, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বনরূপা নার্সারী, ন্যাশনাল নার্সারী, বাহাদুর নার্সারী, পুষ্পকলি নার্সারী, জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত বনসাই বাড়ী, সবুজ বিপ্লব নার্সারী, চিটাগাং নার্সারী, পুষ্প নার্সারী, চন্দন নগর বনফুল নার্সারী, এইচ বি আর নার্সারী, সবুজ চট্টগ্রামসহ সরকারী, বেসরকারী ৫০ টি স্টল স্থাপন করা হয়েছে।
মেলায় অবস্থান রত চট্টগ্রাম মহানগর নাসারী মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধ স্বপন কান্তি শীল জানান, চারার সাথে সাথে ক্রেতাসাধারণ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের জৈব সারও কিনছেন। চট্টগ্রাম মহানগর নাসারী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাহাদুর নার্সারীর স্বত্ত¡াধিকারী আবুল হোসেন বলেন, নানান ক্রেতা দর্শকের উপচে পরা ভিড় ও চারার বিক্রয় তাদের উৎসাহিত করছে। দিন দিন চারা বিক্রি বাড়ছে। বাহাদুর নার্সারীতে বিরল ১ টি শ্বেত চন্দন চারার দাম হাকা হচ্ছে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। বনরূপা নার্সারীতে ১ টি লাল জামরুলের চারার দাম দেয়া হয়েছে ২ শত টাকা। মেলায় ৫ টাকায়ও চারা পাওয়া যাচ্ছে।
সরেজমিনে আরো দেখা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও তথ্য কেন্দ্রে চারা রোপণ কৌশল, সংরক্ষণ, পরিচর্যা, বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীর বিচরণ, বিভিন্ন ইকোপার্ক, লেক, বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ এর বিভিন্ন কর্মকান্ড, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, বন্য হাঁতীসহ বন বাগান ও বনাঞ্চলের বড় পর্দায় ভিডিও প্রদর্শন করছেন সহকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা রাফি উদ দৌলা ফরেস্টার। চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের নকশাকার দেবাশীষ দত্ত জানান, মেলায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিচ্ছে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন মেলায় আসছে। তারা বৃক্ষরোপণ, পরিচর্যা, বৃক্ষের নাম, প্রজাতি সনাক্তকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করছে। এ মেলা ১২ আগস্ট পর্যন্ত এ মেলা প্রতিদিন সকাল হতে রাত ৯ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে বলে তিনি জানান।