ডেস্ক রিপোর্ট: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত ঠেকাতে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। এর মধ্যে নাশকতা আইনে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক সহিংসতার মামলাগুলো সচল করার কৌশল নিয়েছে সিএমপি। ইতিমধ্যে সিএমপির থানায় থানায় এসব মামলার হোমওয়ার্কও শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে একটি নাশকতা মামলায় সাবেক মন্ত্রী ও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাবেক এমপি চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ৪৫৩ জন নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে চার্জশিটও দাখিল করেছে পুলিশ।
বাকি সবক’টি নাশকতা মামলাও সচল করার প্রক্রিয়া চলছে এমন আভাস মিলেছে মহানগর পুলিশের থানা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তার কাছ থেকে। যদিও এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ অধিকাংশ কর্মকর্তা। যারা মুখ কিছুটা খুলেছে তারাও জুড়িয়ে দিয়েছেন নাম প্রকাশ না করার শর্ত। চট্টগ্রাম মহানগরীর এমন একটি থানায় কর্মরত একজন ওসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতা আইনে দায়ের হওয়া ১৫২টি রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা সচল করার নির্দেশ দিয়েছেন সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান।
অবশ্য এর আগে পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও নির্দেশনা আসে-বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও তাণ্ডব সংক্রান্ত যেসব মামলা স্থবির রয়েছে, সেগুলো দ্রুত সচল করে তদন্তের ব্যবস্থা করতে।
ফলে নড়েচড়ে বসেছেন চট্টগ্রাম মহানগরীর ১৬ থানার ওসি।
তবে সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান রাজনৈতিক সহিংসতার মামলা সচল করার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে বিগত নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর থাকার নির্দেশনা রয়েছে। ফলে গত সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরে নগরীর ১৬ থানায় যেসব নাশকতার মামলা ছিল সেগুলো সচল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি জানান, আসন্ন সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নগরীর সন্ত্রাসীদের তালিকাও হালনাগাদ করার কাজ শুরু করা হয়েছে। এ কাজে পুলিশ ও র্যাবকে সহায়তা করছে নগরীর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ওই তালিকায় সন্ত্রাসীদের পারিবারিক পরিচয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা, কোন থানায় কয়টি মামলা, বড় ধরনের অপরাধ করে গ্রেপ্তার হয়েছে কি না এবং রাজনৈতিক পরিচয়, কবে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছে এসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
সিএমপির শীর্ষ এই কর্মকর্তা বলেন, অক্টোবর মাসের শুরুতে অপরাধীদের ধরতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। স্থবির হয়ে থাকা নাশকতা ও রাজনৈতিক মামলা এবং আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে প্রয়োজনে কম্বিং অপারেশন চালানো হবে। এ নিয়ে গত সপ্তাহে পুলিশ সদর দপ্তরে রেঞ্জের ডিআইজি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারসহ পুলিশ সুপারদের নিয়ে বিশেষ বৈঠক করেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারি। বৈঠকে নির্বাচন ঘিরে যাতে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দিতে বলা হয়েছে বলে জানান সিএমপি কমিশনার।
চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র জানায়, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ-হরতালে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় নগরীর ১৬ থানায় নাশকতা আইনে ১৫২টি ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে ৩৫৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাতনামাসহ বিএনপি-জামায়াত শিবিরের পাঁচ হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে অধিকাংশ আসামি গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে সূত্র জানায়। সূত্র আরো জানায়, আগস্ট মাসের শেষে সিএমপিতে অনুষ্ঠিত অপরাধ বিষয়ক সভায় রাজনৈতিক সহিংসতার মামলাগুলোর তদন্ত দ্রুত শেষ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ১৬ থানার ওসিকে নির্দেশ দেন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান। গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নাশকতার একাধিক মামলায় বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর মো. নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, আবু সুফিয়ানসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের শীর্ষ সব নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে মূলত রাজনৈতিকভাবে যারা রাজপথে সক্রিয় ছিল পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। যাদের বেশির ভাগই বছুরজুড়ে জেল খেটে জামিনে বের হয়ে আসে। আর যারা রাজপথে তৎপর ছিল না তারা গ্রেপ্তারের বাইরে রয়ে গেছে। আর এসব মামলার অধিকাংশেরই চার্জশিট দেয়নি পুলিশ। ফলে আসন্ন নির্বাচনে তাদের ঠেকাতে এসব মামলার চার্জশিট দাখিলসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে মাঠে নামছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার আমেনা বেগম এ প্রসঙ্গে বলেন, যেকোন নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যায়। তাই আসন্ন নির্বাচনেও আন্দোলনের নামে যাতে কোনোরকম সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনা না বাড়ে সে কারণে বিগত নির্বাচনে দায়ের হওয়া নাশকতার মামলায় অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে নামছে পুলিশ। মানবজমিন