চমেকে হৃদরোগীর সংখ্যা বেশী শয্যা ছাড়িয়ে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা

মো: মুক্তার হোসেন বাবু : চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে বারান্দায় মেঝেতে বিছানা পেতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর ওয়ার্ডের ভেতরে হাঁটারও জায়গা নেই। যেখানে একটু খালি জায়গা, সেখানেই বিছানা পেতে রোগীদের সেবা দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, হৃদরোগের মতো জটিল অসুখের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা নেই চট্টগ্রামে। এই রোগের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়াতে সবাই চমেক হাসপাতালমুখী হচ্ছেন। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে ঠিকমতো সেবা পাওয়া যাচ্ছে না। তিন দশক আগে ৪৮টি শয্যা নিয়ে চালু হয় হৃদরোগ বিভাগ। ১৯৯৮ সালে ৬০ শয্যায় উন্নীত করা হয় এই বিভাগকে। তা সত্তে¡ও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন তিনশ।
নিয়মানুযায়ী, সপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া প্রতিদিন রোগীদের এনজিওগ্রাম করানো হয়। আগে সপ্তাহে গড়ে ১০ থেকে ১২টি এনজিওগ্রাম করানো হতো। কিন্তু এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। জনবল সংকট ও মেশিন সমস্যার কারণে এনজিওগ্রাম কম হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এনজিওগ্রাম পরীক্ষার সিরিয়াল নিতে কয়েক মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় বলে রোগীরা অভিযোগ করেছেন।
গতকাল রোববার কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে ঢুকতেই দেখা যায়, ওয়ার্ডের রোগীর অনুপাতে নেই পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি। রোগ নির্ণয়ের জন্য রয়েছে দুইটি এনজিওগ্রাম, একটি করে ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি, ইটিটি মেশিন। আট বছর বন্ধ থাকার পর কয়েকদিন আগে ইটিটি মেশিনটি চালু করা হয়েছে। একটি এনজিওগ্রাম মেশিন পুরোপুরি নষ্ট। অন্যটি দিয়ে কাজ চললেও চাপের কারণে ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। অন্যদিকে কয়েক দশকেও বিভাগটি এখনো কোনো অধ্যাপক পায়নি। সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকের পদ রয়েছে তিনটি। বাকিরা প্রেষণে যুক্ত হয়ে সেবা দিচ্ছেন। নার্স-আয়ার সংকট তো রয়েছেই।
কথা হয় এক রোগীর স্বজনের সাথে। গত বৃহস্পতিবার থেকে স্বামীকে নিয়ে কার্ডিওলজি ওয়ার্ডে রয়েছেন নিলু রাণী দেবী। তার স্বামী মধুসূদন নাথ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন। এখনো আশঙ্কামুক্ত নন তিনি। কিন্তু দুইদিনেও ওয়ার্ডের ভেতরে বেড পাননি। এতে আক্ষেপ নেই তার। নিলু বলেন, ভেতরে গরম। চিল­াচিলি­। পরিবেশ ভালো না। এখানেই (বারান্দায়) ভালো আছি।
ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, একজন রোগীর সঙ্গে দুই থেকে তিনজন স্বজন আছেন। ছোট শিশুদের আনাগোনাও চোখে পড়েছে। মাঝেমধ্যে কান্নাকাটি, চিৎকার-চেঁচামেচি। সবমিলিয়ে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা।
এদিকে ২০১২ সালে কার্ডিয়াক সার্জারি নামের আলাদা একটি বিভাগ চালু করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে নানা কারণে সেটিও ধুঁকছে বিভিন্ন সমস্যায়। বিভাগটিতে নেই পর্যাপ্ত সার্জন, অপারেশন থিয়েটার ও টেকনিশিয়ান। বাহির থেকে লোক এনে এ বিভাগের কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তবে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. নাজুমল হোসাইন সার্জন এবং ওটি সংকট নেই বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, টেকনেশিয়ান, নার্স, আয়া-ওয়ার্ডবয় সংকট রয়েছে। এদিকে হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ডা.প্রবীর কুমার দাশ বলেন, মেঝেতে চিকিৎসা যে কোনো রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। হৃদরোগে আক্রান্তদের ঝুঁকি আরো বেশি। তবে আমাদের কিছু করার নেই। হাসপাতালে বেড সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ