দেশে নির্বাচনের কোন পরিবেশ নাই: মওদুদ আহমদ

 

- Advertisement -

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য বাংলাদেশে ন্যূনতম পরিবেশ এখন নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে চেতনা বাংলাদেশ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। ‘আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: কোন পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

মওদুদ আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাংলাদেশে নির্বাচনের জন্য সুন্দর একটি পরিবেশ আছে। কথাটা সত্য নয়। কারণ বাংলাদেশে কোন সাধারণ নির্বাচন করার ন্যূনতম পরিবেশ এখন নাই। বরং বলবো, এই পরিবেশকে সুপরিকল্পিতভাবে নষ্ট করতে ক্ষমতাসীনরা একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যার কারণে বিএনপির সক্রিয় কর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

ভোটের জন্য ন্যুনতম পরিবেশ থাকা প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার এটা চায় না। কেনো চায় না? কারণ তাদের উদ্দেশ্য খুব খারাপ।
তারা আগের মত আরেকটা নির্বাচন করতে চায়। একদলীয়ভাবে একটা নির্বাচন করতে চায়। বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের মাটিতে এটা আর কোন দিন হতে দেওয়া হবে না-বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিএনপি উপযুক্ত কর্মসূচি দেবে। যে কর্মসূচির মাধ্যমে এই সরকারের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। পরিস্থিতি বলে দেবে, কী ধরণের কর্মসূচি দিতে হবে। আগামী এক মাসের অনেক পরিবর্তন দেখতে পারবেন।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কিছু বলতে পারবেন না। এক মিনিটের ব্যবধানে সংলাপে বসতে বাধ্য হবেন। বাধ্য হবেন বিএনপির দাবি মেনে নিতে। জোর করে যদি ভাবেন ক্ষমতায় থাকবেন, এবার এটা সম্ভব হবে না।

জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমেই বর্তমান সরকারের অপসারণ ঘটানো হবে মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, সারা জাতি আজকে ঐক্যবদ্ধ। এই ঐক্য নষ্ট করতে সরকার অনেক ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী ও জোরদার হবে। সারা বাংলাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করবে। কারণ একটা স্বৈরাচার সরকারকে সরাতে হলে জাতীয় ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। মানুষকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার জন্য ইভিএম ক্ষমতাসীনদের নতুন একটি ষড়যন্ত্র বলেও মন্তব্য করেনন মওদুদ আহমদ।

নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার বলতে সংবিধানে কিছুই নাই। তার মানে, সরকার সংবিধান থেকে সরে আসতে চাচ্ছে। সরে এসে একটা নির্বাচনকালীন সরকার করবেন। এটা একই সরকার হবে মানুষকে বিভ্রান্ত করবার জন্য। প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাব তাদের অধিনে থাকবে। আর তাদের অধিনেই নির্বাচন হবে। তবে নাম দেওয়া হবে নির্বাচনকালীন সরকার। মুখে বলবে আমরা রুটিন অনুযারি কাজ কেবো। কিন্তু সংবিধান তো বলে না যে, তারা রুটিন অনুযারি কাজ করবে এবং তারা কোন পলিসি মেকিংয়ের সিদ্ধান্ত দেবে না। কিংবা প্রশাসন ও পুলিশ তাদের অধিনে থাকবে না। মওদুদ বলেন, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে বলে দেবে যে, আমরা এসব দিয়ে দেবো। এখানে নির্বাচন কমিশনকে এসব ক্ষমতায় দেওয়ার অধিকার কী প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে? আমাদের সংবিধানে এরকম কোন বিধান নাই। প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা, সেটা বিকেন্দ্রীয়করণের ক্ষমতা আমাদের সংবিধানে কাউকে দেওয়া হয়নি। সুতরাং এগুলো মিথ্যা ও ভুল।

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, আপনারা সংবিধান থেকে যদি সরে আসতে রাজি হন তাহলে বিএনপির প্রস্তাব মানতে অসুবিধা কোথায়? সংবিধান তো কোন দিন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। অতিতেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাই। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে প্রধান বিচারপতি রেখে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেটা অসাংবিধানিক ছিল। নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে একাদশ সংশোধনীর এনে তাকে বৈধতা দেওয়া হলো।

নির্বাচনকালীন সরকার রাজি থাকলে বিএনপির প্রস্তাব গ্রহণ করতে আপত্তি কোথায় বলেও ক্ষমতানীরদের কাছে প্রশ্ন রাখেন তিনি। সরকার আজ সঙ্কিত মন্তব্য করে তিনি বলেন, সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। মানে একদলীয় নির্বাচন হবে। তবে যতই অত্যাচার ও নির্যাতন করুন না কেনো, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারবে না। আর নির্বাচনে পরাজয় নিশ্চিত জেনেই সরকার একদলীয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। যত পারেন পোস্টার ও ব্যানার লাগান। কিন্তু ভোট নাই।

সংগঠনের সভাপতি ও দোহার উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীমা রহিমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার,সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন,বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন সিরাজী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সর্বশেষ