ডেস্ক রিপোর্ট: বেগম খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে জোরপূর্বক কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। তিনি বলেছেন, ‘মেডিকেল বোর্ড খালেদা জিয়াকে ছাড়পত্র দেয়নি; বরং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরা ছাড়পত্র লিখে নিয়েছে।’ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরোনো কারাগারের সামনে সাংবাদিকদের সামনে এ কথা বলেন বিএনপির মহাসচিব।
এর আগে বেলা সোয়া ১১টার দিকে শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের প্রিজন সেল থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত বিশেষ আদালতের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আজ নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের জন্য শুনানির দিন ধার্য ছিল। কারাচত্বরে গাড়িবহর পৌঁছায় দুপুর ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে। এরপর ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। শুনানি চলে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে আমরা দেখেছি। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ, অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি হুইলচেয়ারেও ঠিকমতো বসতে পারছেন না। তাকে হুইলচেয়ারে নিয়ে আসা হয়েছে। তার মধ্যেও তাকে জোর করে আদালতে বসিয়ে রেখে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে। এটি খুবই অমানবিক। আমরা এটার নিন্দা করছি। এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’
‘খালেদা জিয়ার যাঁরা চিকিৎসা করছেন, তারা বলবেন, তিনি সুস্থ কি সুস্থ না। তারা বলেছেন, তিনি এখনো চিকিৎসাধীন আছেন, তাকে এখনই হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া সঠিক নয়,’ যোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।
পরে বিএনপির চেয়ারপারসনের সানাউল্লাহ মিয়া আরো বলেন, ‘গাড়ি থেকে নামাতে তাকে (খালেদা জিয়াকে) অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। উনাকে নামাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজনকে হিমশিম খেতে হয়েছে। কাশতে কাশতে তিনি আদালতে গিয়েছেন।’
আজকে মামলার শুনানি শেষে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের সাথে দলের মহাসচিব আদালতের ভেতর আধা ঘণ্টা মামলার বিষয়ে কথা বলতে চান উল্লেখ করে সময় প্রার্থনা করেন। কিন্তু বিচারক এই আবেদন মঞ্জুর করেননি।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫। এর পর খালেদা জিয়াকে নাজিমুদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। গত ৪ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের প্রিজন সেলে নিয়ে আসা হয়। সেখানে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড তার চিকিৎসা করছিল।
এর মধ্যেই গত ৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর একদিন আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেন কারাগার চত্বরে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত।
সেখান থেকেই তাকে কারাগার চত্বরে স্থাপিত আদালতে পাঠানো হয়েছে। যদিও বিএসএমএমইউ পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়াকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বর্তমানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট ভালো।’
‘খালেদা জিয়া আমাদের এখানে এক মাস চিকিৎসা নিয়েছেন। আমরা তার শারীরিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তাকে আবার আগের আবাসে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল হারুন।