যে যা-ই বলুক, এই নির্বাচনটা নির্বাচনই হয়নি, এতে জয় লাভের পর জনগণকে ধন্যবাদ দেয়া মানে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা, বললেন নুরুল কবীর

 

- Advertisement -

নিউ এইজ পত্রিকার সম্পাদক নুরুল কবীর বলেছেন, যে যা-ই বলুক, দেশের সবাই জানে, এই নির্বাচনটা নির্বাচনই হয়নি। এমন একটি নির্বাচনে জয়লাভের পর জনগণকে ধন্যবাদ দেয়ার মানে হলো, কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো। শনিবার চ্যানেল আই’র তৃতীয় মাত্রায় তিনি আরো বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে সমাজে সাম্য, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও জনগণের মানবিক মর্যাদাবোধ সমুন্নত করাই ছিলো মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র। মূলমন্ত্রকে বাদ দিয়ে আনুষ্ঠানিকতার বর্ষপূর্তি করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। মেনে নিলাম, অন্য প্রতিদ্ব›দ্বীদের সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্কের কারণে এমন অনুষ্ঠানগুলো পালন নিয়ে সন্দেহপোষণ করার ন্যায্য কারণ আছে, কিন্তু তাই বলে জোর করে ক্ষমতায় থাকতে হবে?

তিনি বলেন, একজন মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন বিশ^বিদ্যালয় অধ্যাপক এবং ন্যায়পরায়ন বিচারকের যেমন সমাজে বড় সম্মান, তার চেয়েও বড় সম্মানের অধিকারী একজন জনপ্রতিনিধি। কারণ, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণের উপকারে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মতো বড় কাজ তিনিই করে থাকেন। কিন্তু পুলিশ আর প্রশাসনের মাধ্যমে যারা নির্বাচিত হোন, তাদের সে সম্মান থাকে না। এখন থেকে পুলিশও তাদেরকে সালাম দেবে না। উল্টো পুলিশকেই সালাম দিতে হবে তাদের।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অতি-ধনী বৃদ্ধির হার সারা পৃথিবীকে ছাড়িয়ে গেছে। যা অতীতে কখনো হয়নি। ভয়াবহ উন্নয়নের কারণেই এটি ঘটেছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন মহাবিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেমন ফেরৎ না দিলেও চলে, এভাবেই ব্যাংকগুলোকে ব্যবহার করা হয়েছে।

নুরুল কবীর বলেন, এ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে, অনির্বাচিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতিকে চূড়ান্তভাবে ন্যায্যতা দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা বুকে হাত দিয়ে আর বলতে পারবেন, বাংলাদেশে কেয়ারটেকার ব্যবস্থা ছাড়া কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব? আমার মনে হয় না, বলতে পারবেন। হয়তো জোর করে পারবেন, তাও ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য রাজনৈতিক দলগুলো রাজনৈতিক শক্তিতে বলিয়ান না হয়ে ওঠে।

নুরুল কবীর আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘ফরেন পলিসি জার্নাল’ প্রণীত বিশ্বের শীর্ষ ১০০ চিন্তাবিদের মধ্যে স্থান পেয়েছেন, ভালো কথা। অন্য আরেকটি সংগঠনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর সবচেয়ে পাওয়ারফুল মানুষের মধ্যেও একজন। শুনতে খুবই সুন্দর, কিন্তু এ বিষয়টি একটি জাতির জন্য দুঃসংবাদ। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান যদি খুব বেশি শক্তিমান হয়ে ওঠেন, তাহলে তাঁর জবাবদিহিতা থাকে না। বিশে^র শক্তিমান রাষ্ট্রের যত উদাহরণ সব এমনই।

নিউ এইজ সম্পাদক বলেন, ইতিহাসের প্রতিষ্ঠিত সত্য যে, স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষপর্বের সবচেয়ে বড় নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালন করার জন্য তাঁর দলকেই এভাবেই ক্ষমতায় থাকতে হবে, এটা তাঁকে অপমান করার শামিল। এটা রাজনৈতিক হিনমন্যতার পরিচয়।

সর্বশেষ