বাকশালের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন : প্রধানমন্ত্রী

 

- Advertisement -

প্রিয় সংবাদ ডেস্ক:: বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গড়ার মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বলে মন্তব্য করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ছাত্রলীগ আয়োজিত এই সভায় সংগঠনটির নেতাকর্মীদের নীতি ও আদর্শ মেনে ত্যাগের মনোভাব নিয়ে দেশের মানুষের জন্য রাজনীতি করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘বাকশাল গড়ার মাধ্যমে তিনি (বঙ্গবন্ধু) সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। বাকশালের কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন হলে অনেক আগেই বিশ্বে মর্যাদার আসনে থাকতো বাংলাদেশ।’

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধের পরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখনও চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র থেমে যায়নি। নানাভাবে চক্রান্ত চলছিল এই স্বাধীনতাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য। এই বিজয়কে নস্যাৎ করবার জন্য। কারণ, এটা ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বা আমাদের সংগ্রামের পথে অনেক দালাল ছিল, অনেক লোকই ছিল যারা ওই পাকিস্তানিপ্রেমীই ছিল। তারা কখনো বাংলাদেশকে ভালবাসেনি, বাংলার মানুষকে ভালোবাসেনি, বাংলার মানুষের কল্যাণ চায়নি। আর মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তাদের ভূমিকা সকলেরই জানা। তারাই যুদ্ধাপরাধী, তারাই এ দেশের স্বাধীনতাবিরোধী। যাদের বিচারটাও জাতির পিতা শুরু করেছিল। কাজেই জাতির পিতা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতার ১০ বছরের মধ্যে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ একটা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠত।’

আলোচিত বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের সাত সাতজন সংসদ সদস্যসহ নেতাকর্মীকে হত্যা করা হলো। একটার পর একটা ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু হলো। পাটের গুদামে আগুণ, থানা লুটপাট থেকে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত চক্রান্ত করে দুর্ভিক্ষ ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করে বঙ্গবন্ধুর পুরো কাজগুলোকে বাধাগ্রস্ত করা এবং স্বাধীনতার ভিশনটাকে যখন ধ্বংস করার চেষ্টা করা হলো, তখন তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দিলেন।’

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে অনেক সময় শোনা যায়, এই বাকশাল, বাকশাল বলে গালি দেয়। এই বাকশালটা কী ছিল? এটা ছিল বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। এই বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষি প্রধান। এই কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাদ্য উৎপাদন করে। এই শ্রমিকের শ্রমের মূল্য দিয়ে এ দেশের অর্থনীতি গড়ে ওঠে। কাজেই কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ গড়ার মাধ্যমে তিনি সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের দেশের ১৯টা জেলা ছিল।

এই ১৯ জেলাকে ভাগ করে তিনি ৬০টি জেলায় রূপান্তর করেন। অর্থাৎ প্রত্যেকটি মহকুমাকে তিনি পর্যায়ক্রমে জেলায় রূপান্তর করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের একেকটি কেন্দ্র হিসেবে সেগুলোকে গড়ে তুলে নিয়ে সমস্ত অর্থনৈতিক সুফল যেন তৃণমূল মানুষ অর্থাৎ গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছায় সেই পদক্ষেপটাই তিনি নিয়েছিলেন। গণতন্ত্র এবং ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে একদম তৃণমূল পর্যন্ত সেই গণতান্ত্রিক ধারাটা যাতে পৌঁছে যায়, একজন সাধারণ মানুষ তারও যেন বলার সুযোগ থাকে সেই পদ্ধতিটা তিনি বেছে নিয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের চাষাবাদের জমি কো-অপারেটিভের মাধ্যমে চাষাবাদ করে যারা শ্রম দেবে তারা একটা অংশ পাবে উৎপাদিত পর্ণ্যের, যারা জমির মালিক তারা একটা অংশ পাবে এবং কো-অপারেটিভ বা সরকারের কাছে একটা অংশ আসবে। যেন কখনো কেউ বঞ্চিত না হয়, অন্ততপক্ষে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে তারা যেন ন্যায্য মূল্য পায়, তারা যেন ভালভাবে বাঁচতে পারে। আমাদের কৃষিপদ্ধতি যেন যান্ত্রিকীকরণ করে আধুনিকীকরণ করার কথা তিনি বলেছিলেন।

সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাকে তিনি সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। প্রাইমারি শিক্ষা তিনি অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য তিনি বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। চিকিৎসাসেবা মানুষের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। জাতির পিতার এই কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হতো। যখন তিনি এই কর্মসূচি দিলেন একদিকে যেমন এর বিরুদ্ধে অপঃপ্রচার এবং সেই সাথে সাথে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো।’

আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ত্যাগের আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। ছাত্রলীগের কর্মী হিসেবেই আমার রাজনীতির হাতেখড়ি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা। কাজেই আমি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের এটুকুই বলব, চাওয়া-পাওয়ার ঊর্ধ্বে উঠে, ত্যাগের মনোভাব নিয়ে, আদর্শের সঙ্গে, ছাত্রলীগের নীতি-আদর্শ মেনে নিজেকে গড়ে তুলবে, দেশের মানুষকে কিছু দিয়ে যাবে। যেন জাতির পিতার আত্মা শান্তি পায়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম জড়িত রয়েছে। প্রতিটি সংগ্রামে যে মানুষগুলো আত্মত্যাগ করেছে, আমরা যদি সেই শহীদের তালিকা বের করি সেখানেও দেখবো ছাত্রলীগের অগণিত নেতাকর্মী আত্মাহুতি দিয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মিছিলের অনেক সাথী জীবন দিয়েছেন। আবার পরবর্তীতে স্বাধীনতার পর তারা বিভ্রান্তিতে পড়ে আদর্শচ্যুতও হয়েছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুর্ভাগ্য।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘একটা আদর্শ ও নীতি না থাকলে কখনো নেতা হওয়া যায় না। সাময়িক নেতা হওয়া যায়, কিন্তু সেই নেতৃত্ব দেশ বা জাতিকে কিছু দিতে পারে না। মানুষের ভালোবাসা এবং আস্থা অর্জন করতে পারাটাই একজন রাজনৈতিক নেতার জীবনের একমাত্র অর্জন।’

বক্তব্যের একেবারে শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই দেশকে আজকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবে, জাতির পিতা নিজের সব কিছু ত্যাগ করেছে দেশের মানুষের কল্যাণে। সেই মানুষের কল্যাণে আমরা কতটুকু কাজ করতে পারলাম সেই হিসেবটাই আমাদের করতে হবে। আমরা কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই একজন রাজনৈতিক কর্মীর সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা।’

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। আরও বক্তব্য দেন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিৎ চন্দ্র দাস, সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন, দক্ষিণের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রমুখ।

আলোচনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বক্তব্যের আগে তার হাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, শেখ রাসেলের প্রতিকৃতি তুলে দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের প্রতিকৃতি উপহার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের প্রকাশনা মাতৃভূমির মোড়ক উন্মোচন করেন শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ