খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে স্থগিত করতে নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে সরকার ‘নীল নকশা’ করছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে অবিলম্বে খুলনার ডিআইজি ও মহানগর পুলিশ কমিশনারের প্রত্যাহারের দাবিও জানিয়েছে তারা। রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ ও দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, খুলনার মানুষ অত্যন্ত আতঙ্ক ও আশঙ্কার সঙ্গে ভাবছে যে, এই সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা। যেটা আলামত ইতিমধ্যে উঠেছে নির্বাচনে সরকার প্রভাব বিন্তার করার জন্য যা যা অপকর্ম করা দরকার, সবই করছে। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে সরকার এই নির্বাচন বাতিল বা নির্বাচন স্থগিত করার জন্য নীলনকশা করছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই- এই ধরণের নির্বাচন শুধু প্রহসন, এই ধরণের নির্বাচন শুধু খেলা হবে। আমরা মনে করি এই নির্বাচন সঠিক ও নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করার যোগ্যতা নির্বাচন কমিশনের নেই। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করে নির্বাচনের প্রচার কাজে বাধা দিচ্ছে সরকার। প্রচার বন্ধ করে দিচ্ছে। দেশের মানুষের ভোটের যে অধিকার, সেটি থেকে তারা জনগনকে বঞ্চিত করছে। তিনি বলেন, আমরা জোরের সঙ্গে দাবি করছিÑ অবিলম্বে খুলনা থেকে ডিআইজিকে প্রত্যাহার করতে হবে। পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা মনে করি, এসব বিষয়ে অত্যন্ত জরুরীভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেয়া উচিত। অন্যথায় সেখানে নির্বাচন খুব দুরূহ হয়ে যাবে। খুলনা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিপুল ভোটে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিজয়ী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশনে যে দাবি জানিয়ে এসেছে তাকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, তারা ইসিতে গিয়ে বলেছে খুলনাতে নাকি নির্বাচনের অনুকুল পরিবেশ নেই, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তাদের জন্য নাকি সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তারা রির্টানিং অফিসারকে অভিযুক্ত করেছেন। মির্জা আলমগীর বলেন, সরকার পুলিশ দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে। হুমকি দিচ্ছে। আমাদের কমিশনার প্রার্থীদের ডেকে নিয়ে বলেছে, তোমরা ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইতে পারবে না। তারা (সরকারি দল) এটাও বলছে সেখানে নাকি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। এই নির্বাচনটা প্রহসনের পরিণত হয়েছে। এই ধরণের নির্বাচন করার অর্থ কী জানি না? খুলনা রিটার্নিং অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল বিভাগীয় কমিশনারকে দিয়ে তদারিক যে টিম করার বিষয় নির্বাচন কমিশনের কাছে প্রস্তাব করেছে সে বিষয়ে মির্জা আলমগীর বলেন, এটা নির্বাচন বিধি ও সংবিধান বিরোধী। এখন আমরা শুনছি, ঢাকা থেকে একজন কর্মকর্তাকে পাঠানো হচ্ছে তদারিক করার জন্য এটা সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। কোনো মতেই এটা গ্রহনযোগ্য নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলের অনুগত বলে অভিযোগও করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, সরকারের পরিকল্পনাতেই স্থগিত হয়েছে গাজীপুরের নির্বাচন। আদালতের নিষ্পত্তি সাপেক্ষে দ্রুত গাজীপুরের নির্বাচন অনুষ্ঠানে তফসিল ঘোষণার দাবিও করেন তিনি। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, নজরুল ইসলাম খান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।