spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

হে বীর আপনাদের আদর্শে আমরা আদর্শিত হতে চাই!

spot_img

 

- Advertisement -

মুহাম্মদ মহরম হোসাইন::

করোনা ভাইরাস! বহুল আলোচিত কোভিড-১৯ এর মহামারীতে থরথর করে কাঁপছে গোটাপৃথিবী। বাদ পড়েনি আমাদের দেশও। এ ভাইরাস সংক্রামকটি ছোঁয়াছে। তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে কেউ আসতে চাই না। কারো শরীলে Covid-19 এর নমুনা ধরা পড়া মাত্রই মুর্হুতের মধ্যে ঐরোগীর স্ত্রী, পুত্র-কন্যা ও আত্মীয়-স্বজনসহ চেনা মানুষগুলো হয়ে যায় অচেনা। কারণ এ রোগ মানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে স্বয়ং জমদূতকে আলিঙ্গন করা। এ করোনার কারণে এখন আমরা ক্রমশ মনুষ্যের স্তর থেকে নেমে নির্দয় নির্বোধ মানুষে পরিণত হচ্ছি। এই বিবর্তনের একটাই কারণ তাহলো করোনা।

করোনার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে নিদারুন মর্মহিত ঘটনা। এতদিন যার গিটারের সুরে শিহরিত হতো মানুষ, আজ তাঁর লাশ পড়ে থাকে রাস্তায়। মৃত ভাইয়ের দাফনের জন্য জুটেনা একটি খাটিয়া ও জানাজায় একজন মুসল্লি। মৃত্যুভয়ে আদরের সন্তান আসে না তার পিতার লাশের কাছে। সামান্য হাঁচি-কাশি সর্দি-জ্বর দেখে মমতাময়ী গর্ভধারনী মাকে জঙ্গলে রেখে আসেন সন্তানরা। শুধু কি তাই? করোনা আক্রান্ত প্রতিবেশীকে রোগ ছড়ানোর অভিযোগে গৃহবন্দী ও মারধর, মৃতের কবরস্থো বাধার ঘটনাও ঘটছে শুধু নিজে বেঁচে থাকার অদম্য বাসনায়। অদৃশ্য করোনা ভয়ে ভীতি হয়ে আমরা প্রতিনিয়তো পায়ে মাড়িয়ে যাচ্ছি মনুষ্যত্ব। ভুলে যাচ্ছি একটি কথা “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।” করোনায় ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক এসব ঘটনা হতবিহ্বল ও বাকরুদ্ধ হওয়ার মত। প্রচলিত কারো সামান্য সর্দি, জ্বর- কাশি দেখলেই করোনা ভয়ে মানুষ একে অপর থেকে পালিয়ে যাচ্ছেন। অসুস্থতায় কাতর মানুষগুলো চিকিৎসা সেবার জন্য কি আকুলতা! খানিকটা অক্সিজেনের জন্য দু’চোখে অশ্রু ভরা ব্যথাতুর মিনতি! তার বেঁচে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে আমরা রূদ্ধশ্বাসে পলায়ন মনোবৃত্তিত্বে ব্যস্ত। এতটুকু মানবতা নেই। নেই দয়া কিংবা মমতা। এমন কেন হচ্ছে? এরজন্যই কি আমাদের পূর্বপুরুষরা ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশপ্রেমে উদ্ভধ্য হয়ে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এদেশটা স্বাধীন করেছিলো? হয়তো না। এত হতাশা, বেদনার মাঝেও মর্মত্বোবোধ মানবিক কিছু সাহসী মানুষের কারণে এ অন্ধাকারের মধ্যেও আলো ফুটে উঠছে। যা দেখে মনে সাহস ও শক্তি সঞ্চার হচ্ছে। যখন দেখি এ করোনার দূর্যোগে মৃত্যু হবে জেনেও কিছু দেশপ্রেমিক মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে সদা তৎপর।

মানবসেবায় ব্রত হয়ে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন সেসব বীর চিকিৎসক ও নার্সরা। তাদের সাথে অকাতরে মাঠে ময়দানে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন আমাদের গর্ব বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তারাও। এরমধ্যে করোনা যুদ্ধে চিকিৎসা সেবায় নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া প্রথম আত্মত্যাগকারী শহীদ অধ্যাপক ডাঃ মঈন উদ্দীন ও দ্বিতীয় শহীদ ডাঃ জ্যোতি জয়ন্ত চক্রবর্তী আমাদের ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন। সেবা দিতে আসা সেনাবাহিনীর গাড়ি উল্টে সেনাসদস্য নিহত হন। এসকল মানবসেবী বীরেরা জীবন দিয়ে মাতা-পিতাকে পুত্র হারা, সন্তানদের পিতৃহীন, স্ত্রীকে করেছেন বিধবা। তারা মানব সেবায় নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করেছেন প্রয়াত শহীদের দেশপ্রেম, অাত্মত্যাগ ও রক্ত বৃথা যেতে পারে না। তারা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গেছেন কিভাবে দেশকে ভালোবাসতে হয়। প্রকৃত বাঙালি কখনো কাপুরুষ হত পারে না। যারা সেবায় ব্রত হয়ে দেশ ও জনগণের জন্য শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন এবং বর্তমানেও করে যাচ্ছেন তারাই আমাদের জাতীয় বীর। আমরা তোমাদের ভুলবো না। ভুলতে পারি না। এবং সেই সাথে বলতে চাই, “হে বীর আপনাদের আদর্শে আমরা আদর্শিত হতে চাই”! তাইতো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই! নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান- ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই!”

লেখকঃ সংবাদকর্মী/সংগঠক নিবার্হী সদস্য, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন(সিইউজে)

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ