_কামাল পারভেজ
: সমগ্র জাতি ক্রান্তিলগ্নে সময় পার করছে।মনে হয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধকে হার মানিয়ে দিয়েছে কোভিড -১৯ নামক যন্ত্রটি। সারা পৃথিবী এক রকম লকডাউন শব্দটির মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছে। যুদ্ধবাজ দেশগুলোকেও নিমিষেই নিস্তব নিরবতা পালনে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বময় আজ বিশ্বমাতার কোলে ঢলে পড়েছে। মানবতা নামক শব্দটি কারো বিবেকে নাড়া দিয়েছে আবার কারো বিবেক মুড়িয়ে নিয়েছে। আজ অনেক অর্থ বিত্তশালীদের কাছে বিবেক নামক শব্দটি চিড়িয়াখানার খাচার ভেতর বসবাস করছে, সবাই ঘুমিয়ে পড়লেও একটি পেশার মানুষ সবসময় জাতির পাশে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর সেটাই হলো মিডিয়া।
দেশ, সমাজ ও জাতির স্বার্থে সাংবাদিক পিছু হটেনি, বরং সবসময় অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছে। আজও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে জাতির দারপ্রান্তে খবর পৌঁছে দিচ্ছে। বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে। তারপরও থেমে থাকেনি একজন সাংবাদিকের পেশাদারিত্ব। দেশ ও সমাজের ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলোকে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্ধকার থেকে সূর্যের মতো আলোয় আলোকিত গড়ে তুলতে ছুটে চলেছে কলম সৈনিকেরা। থেমে থাকেনি জীবন যুদ্ধ, কঠিন সময়ে ইতিবাচক ভূমিকা হিমালয়ের চূড়ায়। তবে আজ অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনেক বিবেকবানরাই এগিয়ে এসেছে, আবার নেতারাও এগিয়ে এসেছে সাথে রয়েছে বড় বড় ক্যামেরার ঝাঁক। কেউ কেউ সত্যিকার ভাবেই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আবার কেউ কেউ লোক দেখানো ফটোসেশন আর পত্রিকায় সংবাদ প্রচারে এসেছেন। যারা ফটোসেশন আর পত্রিকায় নিজেকে প্রচার করতেই সাংবাদিকদের ডেকেছেন অথবা প্রেস বিজ্ঞপ্তি পত্রিকার ইমেইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা একবারও মনের অজান্তেই সাংবাদিকদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন কি?
এখন পর্যন্ত কোনো নেতাকর্মী নেত্রীর পক্ষ থেকে বিশজন সাংবাদিকের বাসায় উপহার সামগ্রী নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে সেরকম তথ্য পাওয়া যায়নি। বর্তমান সময়টি গরিব ও মধ্যবিত্তদের দূর সময় যাচ্ছে। ঠিক তেমনিভাবে সাংবাদিকরাও চক্ষু লজ্জায় বাস্তবতার মুখামুখিতে দাঁড়িয়েছে আজ। তৃণমূল পর্যায়ের সাংবাদিকরাতো আরও নিমজ্জিত ভাষায় ডুকরে কাঁদছে। কে কার কথা শুনে, অসহায় সাংবাদিকদের দু’টি কথা শুনার মুরোদ নেই কারো। পত্রিকার মালিকরাতো একটি স্বার্থাম্বেষি মহল তৈরি করে তৃণমূল সাংবাদিকদের জিম্মি করে রেখেছে। ইচ্ছে মতো পরিচালিত করছে সাংবাদিকদের।মাঝখানে ফায়দা লুটে নিচ্ছে সাংবাদিক নামধারী নেতারা। সংগঠনের দোহাই দিয়ে রাজনৈতিক আবাল মার্কা নেতাদের কাছ থেকে এবং বড় বড় কোম্পানির কাছ থেকে সুযোগ সুবিধা ভোগ করে নিচ্ছেন। বঞ্চিত হচ্ছে তৃনমূল সাংবাদিকরা, বঞ্চিত হচ্ছে মূলধারার সাংবাদিকতা পেশার সাংবাদিকরা।
সাংবাদিকরা নাকি জাতির বিবেক, জাতির দর্পন। কিন্তু আজ সাংবাদিকদের মাঝে অনঐক্যতা বেশি দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক গ্যারাজালে দু-ভাগে বিভক্ত হয়ে একাংশের নামকরণ করেছে যা আজ সাংবাদিক পেশাটাকে কলঙ্কিত রূপরেখা তৈরির মূল হোতা হচ্ছে ঐসব স্বার্থবাদী নেতারা। জাতির কাছে লজ্জিত সাংবাদিক পেশাটা। পূর্বে অনেক দূস্বময় গিয়েছে সাংবাদিকদের কিন্তু ততটা ভেঙ্গে পড়েনি তৃনমূল সাংবাদিকরা। কিন্তু সারা পৃথিবী যখন কোভিড -১৯ মুখোমুখিতে দাঁড়িয়েও অসহায় হয়ে পড়েছে সেখানে সিঙ্গাপুর, কানাডার মতো ডিজিটালের স্লোগানের মধ্য আয়ের বাংলাদেশে কিইবা করার আছে মিডিয়া কর্মীদের। যখন জাতির দূস্বময়ে জাতির ক্রান্তিলগ্নে দৌড়ঝাঁপ চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে কিছু সংবাদ পত্রের মালিক তাদের আখের গুছিয়ে পত্রিকা বন্ধ করে দিচ্ছে নতুবা সাংবাদিক ছাঁটাই চলছে। আবার কয়েক পত্রিকার সম্পাদক -প্রকাশক সুকৌশলে বলে দিচ্ছে ৩/৪ মাস বেতন দিতে পারবেনা যার ইচ্ছে হয় থাকো নয়তো যেখানে ভালো লাগে সেখানেই যেতে পারো। আবার ঐসব সম্পাদকরা টিভি চ্যানেলের টকশোতে গিয়ে প্রণোদনার কথা বলে পত্রিকার হকার বাঁচানোর জন্য তাদের পাশে দাঁড়াতে সরকারের সহযোগিতা চায়। মুখোশের আড়ালে ওদের চাটুকারিতা দেখতে খুব ভালোই লাগে।সরকারও তাদের সাথে বাহবা দিতে মতের দ্বিমত করেনা, তার মানে হচ্ছে সরকারও হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলো পত্রিকাকে।
সত্যি কথা বলতে, ডিএফপি তালিকা ভুক্ত ১-২০ সিরিয়ালে যেসব পত্রিকা আছে ঐসব পত্রিকার মালিক ও সম্পাদকরা কতোজন সাংবাদিককে বেতন দিচ্ছে, তার মধ্যে ওয়েজ বোর্ড অনুসারে বেতন কতজন পাচ্ছেন সেটারও দেখার বিষয়। (২০ সিরিয়ালের পরের পত্রিকা গুলোর কার্যকলাপ নাই বা বললাম) জেলা উপজেলা পর্যায়ে যাদেরকে মফস্বল সাংবাদিক বলে থাকি তাদেরতো বেতন পাওয়া দূরের কথা, সম্মানিও দেয়া হয়না। বিজ্ঞাপন কমিশনে চলতে হয়।
♦২)…
অনেকে মনে করেন সাংবাদিক মানেই বিশাল কিছু। কিন্তু লজ্জাকর বিষয়, এই দূস্বময়ে যখন গরিব, মধ্যবিত্তসহ ত্রাণ পাওয়ার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী প্রথম ধাপে ৭২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা পাশ করিয়ে দিলেন সেখানে সাংবাদিক নামক শব্দটি হারিয়ে গিয়েছে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক) যখন তোলপাড়, তখন দ্বিতীয় ধাপে ৭২ থেকে ১ লক্ষ কোটি টাকার প্রণোদনা পাশ করিয়ে দিলেন সেখানে বললেন সবাই পাবে , সাংবাদিকরাও পাবে। ঠিক তখনি শুরু হয়ে গেলো সাংবাদিক নামক নেতাদের রাজনীতি। বর্তমান সরকারের ছায়া পন্তি একাংশের তালিকা তৈরি হয়ে গেলো। ১৯ এপ্রিল, ২০২০ বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃক প্রণোদনার বিষয়ে চিঠি ইস্যু করে ২০ এপ্রিল একাংশের নেতারা তথ্যমন্ত্রীর কাছে ৪১৮১ জন সংগঠনের, এবং সংগঠনের বাহিরে প্রতি জেলা থেকে ৩০ জন করে ৫৬ জেলার ১৫৯০ জন সর্বমোট ৫৭৭১ জনের তালিকা হাতে ধরিয়ে দিলেন। বিষয়টি হচ্ছে এমনি, এ তালিকার বাহিরে আর কোনো সাংবাদিক নেই। আমার প্রশ্ন হচ্ছে সাংবাদিক আগে নাকি সংগঠন আগে। আবারও যখন এ তালিকা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় (ফেসবুক) তোলপাড় তখনি ২১ এপ্রিল বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ পূর্বের ইস্যুকৃত চিঠি প্রত্যাহার করে নেয়।
একজন সাংবাদিকের পরিচয় ঘটে পত্রিকা দিয়ে তার পেশাদারিত্ব কর্মস্থল পত্রিকা অফিস, সংগঠন নয়। পত্রিকার পরিচয় পত্র দিয়ে সংগঠনের সদস্য হওয়া। সংগঠন, ক্লাব হচ্ছে ঐক্য ও বিনোদনের জায়গা, সাংবাদিকদের রাজনীতি করার জায়গা নয়। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে সংগঠনকে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরি করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধ ফায়দা লুটিয়ে নিচ্ছে ( এখানে কারো পৌষ মাস কারো সর্বনাশ)। আবার চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু সাংবাদিক আছেন তারা প্রেসক্লাব বা ইউনিয়নের সদস্য না হলে অন্যকে মূলধারার সাংবাদিক বলেন না, নিজেকেই মূলধারার সাংবাদিক হিসেবে জাহির করেন। তাদের মধ্যে অনেকে কোনো পত্র পত্রিকায় কর্মরত নেই। বাহিরে ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। তাহলে তারা কিভাবে নিজেকে মূলধারার সাংবাদিক দাবী করেন?
আবারও আমার প্রশ্ন আগে সাংবাদিক নাকি আগে সংগঠন?
যাই হোক, সংগঠনের যে তালিকা জমা দিয়েছেন প্রণোদনা পাওয়ার জন্য সেখানে দেখা যাচ্ছে তৃনমূল মাঠপর্যায়ে যারা কাজ করে যাচ্ছে তারা সাংবাদিক নয় একাংশ ইউনিয়নের সদস্যরাই সাংবাদিক। তৃণমূলের সাংবাদিকরা সবসময় বৈষম্যের স্বীকার। যেখানে দেশ ও জাতি ক্রান্তিলগ্নে অতিবাহিত হচ্ছে, পুরো জাতি আজ দূর সময়ে দিন পার করছে সেখানে তৃণমূল সাংবাদিকরাও ভালো নেই,কঠিন বাস্তবতায় অসহায় হয়ে পড়েছে। এই দূর সময়ে বৈষম্য তৈরি না করে পত্রিকায়, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ও গ্রহণযোগ্য অনলাইন পোর্টালে চলমান কর্মরত সাংবাদিক এবং প্রকৃত সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সাংবাদিক নেতা ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
লেখক : ব্যুরো প্রধান, চট্টগ্রাম।
“দৈনিক আমাদের নতুন সময়”