spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

করোনাকাল! পুলিশের মানবিকতা

spot_img

 

- Advertisement -

মুহাম্মদ মহরম হোসাইন::

পুলিশ! শব্দটি শুনলে অধিকাংশ মানুষ হঠাৎ ভয়ে অতকে উঠেন। কারণ তাদের বিরুদ্ধে মানুষের রয়েছে বিস্তর অভিযোগের ঢালি। যেমন, মানুষ পেটানো, শারিরীক নির্যাতন, মিথ্যা মামলায় হয়রানী, থানা হাজতে আঁটকিয়ে রাখা, অসৌজন্যমূলক আচরণ, যত্রতত্র ক্ষমতার অপব্যবহার ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ বাহিনী ‘দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের পালনে’ যাযা করা প্রয়োজন তাই করতে পারবে এমনটাই রাষ্ট্রের সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। কাগজে কলমে এটা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন মাত্র। একক ব্যক্তি, গোষ্ঠী, শ্রেণী বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তাদের ব্যক্তিগত কোন বৈরিতা বা শক্রুতা থাকার প্রশ্নই উঠে না। তারপরও যদি কেহ এধরনের ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন তাহলে তিনিও আইনে উর্ধ্বে নয়। কারণ আইন সবার জন্য সমান। পুলিশ সদস্যরা কোন বিন্নগ্রহের মানুষ নয়। তারা আপনার আমার সন্তান, ভাই-বোন ও বন্ধু-বান্ধব। পুলিশ সদস্যদের একটি বিপুল অংশ গ্রাম বাংলার খেটে খাওয়া সাধারণ পরিবারের সন্তান। প্রতিটি পুলিশ সদস্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের পরিবার, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা বা বৃদ্ধ বাবা-মা। জড়িয়ে আছে তাদের পারিবারিক সম্মান যার সব কিছু মনের আড়াল করে তারা রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার শপথ নিয়ে অতন্দ্র প্রহরী হয়ে কাজ করছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, নৌডুবি, সড়ক দুর্ঘটনা, সন্ত্রাস ও ডাকাত দলের হাত থেকে জানমাল রক্ষা, রাজনৈতিক হিংসা এবং দলাদলির সহিংস পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বত্রই পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। বাংলাদেশে পুলিশের ভূমিকা গৌরবের। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাবলী ছাড়া পুলিশের মূল অংশ জনসাধারণের পাশে থেকেছে এমন উদাহরণই বেশি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এ বাহিনীর সদস্যদের আত্মত্যাগ ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। সাম্প্রতি দেশব্যাপী মহামারী করোনার ক্রান্তিকালে সবাই যখন করোনা ভাইরাসের সংক্রামন থেকে বাঁচার জন্য দিশেহারা। তখন করোনার এ সঙ্কটে বাংলাদেশ পুলিশ সদস্যদের ত্যাগ স্বীকার আবারও মানবসমাজে অন্যতম নজির স্থাপন করেছে। সকল নিয়ম প্রথা ভেঙ্গে সরকারী নির্দেশের বাইরেও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সর্বক্ষণ অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পুলিশ নামের মানুষগুলো। একজন সন্মুখ সারির অন্যতম যোদ্ধা হিসেবে বাড়িতে খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী পৌঁছে দেবার দুরুহ কাজটি করে যাচ্ছেন তারা। আবার কখনো একজন সমাজকর্মীর মতো মানুষের পাশে গিয়ে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এ যেন মানুষের জন্য তাদের এক অন্যরকম সহানুভূতি। প্রতিনিয়ত প্রস্ফুটিত হচ্ছে পুলিশের মানবিক গুণাবলি। মানুষ, মানবিকতা ও দেশ এ তিনটি মন্ত্রে যেন তারা এখন দীক্ষিত। পত্রিকার পাতায় পুলিশকে নিয়ে ভালো খবর দেখলে আমাদের মন আন্দোলিত হয়। যখন দেখি লক ডাউনের মধ্যে রাতের আধারে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষের বাড়িতে নিজে কাঁধে করে খাবার পৌঁছানো, জরুরী ওষুধ কিনে এনে কারও হাতে তুলে দেওয়া, রাস্তায় হাজার হাজার ভাসমান, ভবঘুরে ক্ষুর্ধাত মানুষের মুখে রাম্না করা খাবার বিতরণ, আবার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে উদ্দেশ্য বের হওয়া রোগীকে নিজের গাড়িতে করে গন্তব্য নিয়ে যাওয়া, সন্তান সম্ভবা বিপন্ন মাকে কাঁধে করে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিছবি আমাদের ঘুমন্ত হৃদয়কে জাগ্রত করে। তখন বজ্রকন্ঠে বুক চাঁপড়িয়ে বলতে ইচ্ছা করে, দেখ! আমার দেশের পুলিশ বাহিনী, যাকে নিয়ে আমরা গর্ব ও অহংকার করতে পারি। আমাদের সন্তানরা তাদের পিতা মাতার শিখানো নীতি-আদর্শ এবং মর্মত্ববোধ বির্সজন দেননি। ভুলে যাননি এ মাটির ঋণ। দেশ ও জনগণের জন্য তারা জীবন বাজি রেখে হাঁসতে হাঁসতে মরতে পারে। পুলিশ করোনা সঙ্কটের শুরু থেকে ব্যাপকভাবে প্রকাশ্যে মানুষের সঙ্গে মিশে তার পেশাগত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। মানুষের সংস্পর্শে থাকা পুলিশের কর্মরত সদস্যরা সমাবেশ ও লোকসমাগমে আইনি ব্যবস্থা, খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরী সেবা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা, অপরাধ দমন, মজুদদারি, মুনাফখোর ও কালোবাজারি রোধ, সরকারী ত্রাণ ও টিসিবির পণ্য বিতরণে সহযোগিতা, সামাজিক দূরত্ব বাস্তবায়ন, খোলা স্থানে বাজার স্থানান্তর ও ব্যবস্থাপনাসহ নানা কার্যক্রম চালাচ্ছে পুলিশ। এতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি কিন্তু এসব উপেক্ষা করেও তারা সর্বক্ষন মানুষকে ভালো রাখতে করে যাচ্ছে। আর এর ফলে দুর্ভাগ্যবশত পুলিশের অনেক সদস্য ইতিমধ্যে নিজের অজান্তেই করোনায় ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এমনকি মৃত্যুবরণও করেছেন। এত কিছুর পরও কিন্তু একমুর্হুতের জন্য থেমে নেই তাদের দায়িত্ব পালন। তাদের সঙ্গে এ যুদ্ধে মাঠে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রতিদিন স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যনুযায়ী দেখা যাচ্ছে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে চলছে। এভাবে বাড়তে থাকলে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। সরকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক পুলিশের আক্রান্ত সীমিত পর্যায়ে না থাকলে আমাদের যুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন হবে পড়বে। যদিও গণমাধ্যমে তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত পুলিশের ১২০০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর নিহতের সংখ্যা ৬ জন। আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাধীন আছেন ৫২৮ জন। আইসিইউতে আছে ৭ জন। তাছাড়া অফিসিয়াল কোয়ারেন্টাইনে আছেন ১৭৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদস্যগনই বেশি। এভাবে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সদস্য যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে দেশে আপনার-আমার বিপদের দিনে পাশে দাঁড়াবার কেউ থাকবে না। তাই আমাদের সকলের কর্তব্য হবে পুলিশ যেন আমাদের পাশে থেকে তার মানবিক সেবা নিশ্চিত করতে পারে তার জন্য তাদের সহায়তা করা। তবেই আমরা জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ।

লেখকঃ সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক। নিবার্হী সদস্য, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে)।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ