প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছেন ৮৮৭ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ। মৃতের সংখ্যা অনেক আগেই দুইশো ছাড়িয়েছে।
মার্চের ০৮ তারিখ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শণাক্ত হবার পর গত বুধবার প্রথম শণাক্তের ৬০তম দিন পূর্ণ করেছে বাংলাদেশ। আর এই সময়ে বাংলাদেশ করোনায় ভয়াবহভাবে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী ভারতকে আক্রান্ত ও মৃত দুইদিকেই ছাড়িয়ে গেছে!
প্রথম ৬০ দিনে বাংলাদেশে ১১,৭১৯ জন শণাক্ত হন। যুক্তরাষ্ট্রে ৯,৪১৫ এবং ভারতে ৯৭৯। প্রথম ৬০ দিনে বাংলাদেশে মারা গেছেন ১৮৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রে ১৫০ এবং ভারতে ২৫ (সূত্রঃ নিউ এইজ)।
এই যখন অবস্থা তখন বাংলাদেশের মসজিদগুলোতে হাজার হাজার মুসল্লি গত শুক্রবার জুম্মার নামাযের জন্য জমায়েত হয়েছেন।যেহেতু বাংলাদেশে ভাইরাসটির সংক্রমণ কমার কোন লক্ষণতো দেখাই যাচ্ছেনা, উল্টো বেড়ে চলেছে সেহেতু সরকার কর্তৃক নামাযের জন্য জমায়েতের অনুমতি দেয়া ছিল সচেতন মহলের কাছে বিস্ময়কর।
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এবং ঢাকার আরও কিছু মসজিদে করোনা সংক্রমন রোধে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হলেও, মূল ধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের প্রায় সব মসজিদেই এ ধরনের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি (সূত্রঃ আনাদলু এজেন্সী)।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার শর্তসাপেক্ষে বাংলাদেশে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হলেও সেই শর্তগুলো দেশের সব মসজিদের সব মুসল্লী মেনে চলতে পারবেন বা চলবেন, এমনটা মনে করেন না কেউ-ই। তাছাড়া পরিবেশ-পরিস্থিতি বিবেচনায় সব মসজিদের পক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করাও অসম্ভব।
অনেকে অবশ্য বলছেন, সরকার যেহেতু ঈদের জন্য শপিং মল খোলার অনুমতি দিয়েছে সুতরাং মসজিদ খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তও ঠিক আছে।
কিন্তু পত্রিকার খবর- সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রবিবার থেকে দেশের সব দোকানপাট খোলা থাকার কথা থাকলেও ঈদের আগে বিপণিবিতান, শপিংমলসহ বিভিন্ন মার্কেট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন খোদ ব্যবসায়ীরাই। রাজধানীসহ দেশের বড়, মাঝারি ও ছোট শপিংমল, বিপণিবিতান ও দোকানপাটের মালিকরা নিজেরাই ৯৫ শতাংশের বেশি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন (সূত্রঃ দেশ রূপান্তর)।
ব্যবসায়ীদের নেয়া এ সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক মনে করছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিরা। তাদের মতে, যেভাবে প্রতিদিন করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে তাতে দোকানপাট খোলা থাকলে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হবে না।
অনেকেই বলছেন শপিং মল খুললেও মানুষ এবার তেমন কেউই ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করতে যাবেন না। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের নিজেদেরও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থাকছে। সব মিলিয়েই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এমন ইতিবাচক সিদ্ধান্ত এসেছে।
এদিকে মানবজমিনের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে শনিবার চিঠি পাঠিয়েছেন বঙ্গীয় ইমাম এসোসিয়েশন। মমতার কাছে ইমাম, মৌলভীদের আর্জি- ঈদেও জারি থাকুক লকডাউন।
উল্লেখ্য পুরো ভারতের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও চলছে তৃতীয় দফার লকডাউন যার মেয়াদ শেষ হবে ১৭ মে। তারপর লকডাউন বাড়বে কিনা তা নিয়ে কেউই নিশ্চিত নন। আবেদন লেখা হয়েছে, রাজ্যের স্বার্থে লকডাউন অন্তত ৩০মে পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হোক। মানুষ আগে বাঁচুক, পরে উৎসব।
এদিকে কলকাতার বৃহত্তম নাখোদা মসজিদের ইমাম শফিক কাশেমি সাধারণ মুসলিমদের অনুরোধ করে বলেছেন, আপনারা এতদিন কষ্ট করেছেন। আরও কয়েকটি দিন দেশের স্বার্থে কষ্ট করে বাড়িতে থাকুন।