প্রিয় সংবাদ ডেস্ক :: নতুন করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ এলাকা আবার মৃত্যুকূপে পরিণত হচ্ছে। গত সপ্তাহে আলাবামা, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিসিসিপি, সাউথ ডাকোটা, টিনেসি এবং টেক্সাসে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সুপরিচিত পিপল ম্যাগাজিনের অনলাইন সংস্করণে এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ২৪ ঘন্টা বা একদিনে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওয়েস্ট কোস্ট, দক্ষিণে আলাবামা, পূর্ব উপকূলে নিউ জার্সি এবং মধ্যপশ্চিমের সাউথ ডাকোটা পর্যন্ত ২২টি রাজ্যে নতুন করে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের ডাটাবেজ অনুযায়ী, গত সপ্তাহে একদিনের মৃত্যুতে নিজেদের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে সাতটি রাজ্য- আলাবামা, অ্যারিজোনা, ফ্লোরিডা, মিসিসিপি, সাউথ ডাকোটা, টিনেসি এবং টেক্সাস। এ ছাড়া দেশজুড়ে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
১০ই জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে সর্বোচ্চ নতুন সংক্রমণ রেকর্ড করা হয় ৬৮,২৪১।
ওদিকে রোববার ফ্লোরিডা তার আগের রেকর্ড ভঙ্গ করে। এদিন সেখানে ১৫,৩০০ জন সংক্রমিত হয়েছেন। ৪ঠা এপ্রিলে নিউ ইয়র্কে এই রেকর্ড ছিল ১২,২৭৪। ৯ই জুলাই একদিনে মৃত্যুর রেকর্ড ভঙ্গ করে ফ্লোরিডা। ওইদিন সেখানে মারা যান ১২০ জন। সোমবার সকাল পর্যন্ত এই রাজ্যে মারা গেছেন কমপক্ষে ৪২৪১ জন।
রিপোর্টে আরো বলা হয়, এপ্রিলের পর প্রথমবারের মতো আবার যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মৃত্যুহার উপরের দিকে উঠছে। এপ্রিল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের হাসপাতাল রোগীতে উপচে পড়ছিল। সেখানে স্থান সংকুলান হচ্ছিল না। প্রতিক্ষণ পাওয়া যাচ্ছিল মৃত্যুর খবর। বর্তমানে আবার যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোর শতকরা ৬৭ ভাগ বেডেই রোগীতে ভরা। এ তথ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের। অন্যদিকে কিছুরাজ্য মারাত্মক বেড সঙ্কটে ভুগছে।
ডিপার্টমেন্ট অব হেলথের মতে, অ্যারিজোনা রাজ্যে বর্তমানে শতকরা ৯০ ভাগ আইসিইউ বেডে রোগী রয়েছেন। টেক্সাসে হাসপাতালের সক্ষমতা বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করবেন না কর্মকর্তারা। তবে হিউজটনের হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ইউনিটে বেড সঙ্কটের কারণে ইমার্জেন্সি রুমগুলোতে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ওদিকে ফ্লোরিডায় ৫৬টি হাসপাতাল তার আইসিইউয়ের সর্বোচ্চ সক্ষমতায় পৌঁছেছে মঙ্গলবার। বাড়তি ৩৫টি হাসপাতালে আইসিইউতে শতকরা ১০ ভাগ বা তারও কম সক্ষমতা আছে এখন।
পিপল লিখেছে, এ অবস্থায় গত ৬ই জুলাই প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ভুলভাবে বর্ণনা করেছেন যে, বিশ্বে সবচেয়ে কম মৃত্যুহার যুক্তরাষ্ট্রে। মঙ্গলবার জাতীয় সংক্রামক রোগ বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফসি বলেছেন, এমন দাবি করা ভুল। মৃত্যুহার কমে এসেছে বলে স্বস্তি বোধ করা একটি ভুল বর্ণনা।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেহেতু করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আবার দ্রুতগতিতে বাড়ছে, ফলে মৃত্যুহারও আবার বৃদ্ধি পাবে। ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার সেন্টার পর ইনফেকশিয়াস ডিজিজ রিসার্স এন্ড পলিসির মহামারি বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক ড. মাইকেল ওসটারহোম পিপল ম্যাগাজিনকে ২রা জুলাই বলেছেন, করোনা চিকিৎসায় যুক্তরাষ্ট্র ভাল করেছে। এর ফলে মৃত্যুহার কমে আসা উচিত। তবে তিনি আশঙ্কা করেন, সামনের কয়েক সপ্তাহে এই মৃত্যুহার বৃদ্ধি পাবে। উল্লেখ্য, সোমবার সকাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি হিসেবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ ১৮ হাজার ৩০০। এ সময়ে মারা গেছেন কমপক্ষে এক লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৬ জন।