৫৭ লাখ টাকার সংস্কার, মেরামতের ১ মাস না যেতেই কালুরঘাট সেতুর বেহাল দশা

ইব্রাহিম নূর সায়েমঃ- বোয়ালখালী প্রতিনিধি  :: কালুরঘাট সেতু মেরামতের এক মাস যেতে না যেতেই পুনরায় বেহাল দশা সৃষ্টি হয়েছে। ৫৭ লাখ টাকার মেরামত করেও কিন্তু এরইমধ্যে কালুরঘাট সেতুতে আবারও বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। উঠে গেছে কাঠের পাটাতন, ভেঙে গেছে রেলিং। অথচ ১০ দিন যান চলাচল বন্ধ করে সংস্কার করা হয় সেতুটি। প্রশ্ন উঠেছে, ঐ ১০ দিন তাহলে কী কাজ করেছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান?এর আগে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ১৩ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিন সংস্কার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ জন্য প্রতিদিন রাত ১০টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু এই আদেশ ছিলো নামে মাত্র! উক্ত ১০ দিনে রাতে অনায়াসে চলেছে যানবাহন। কাজ তো দূরের কথা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১৪ টনের যানবাহন  ও চলেছে এই সেতুর উপর দিয়ে।এর উপর উঠেছে দূর্নীতির অভিযোগ, এই দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে।৫৭ লক্ষ টাকার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গত ২১ শে জুলাই বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্ব অঞ্চলের জিএমকে লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করেন চট্টগ্রাম জজ কোর্টের আইনজীবী সেলিম চৌধুরী। নোটিশ সূত্রে মতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রেলের দৃশ্যমান কোন সংস্কার কাজ হয়নি। বরাদ্দকৃত টাকাগুলো ঠিকদারী প্রতিষ্ঠান ও রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারী আত্মসাত অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন।বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই খবর প্রচারিত হলে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবি কনস্ট্রাকশন। তিনি জানান, রেলের দূর্নীতি কিছু হয়নি। কাজের দৃশ্যমানের বিষয় জানতে চাইলে তারা বলেন, সংস্কারের অধিকাংশ কাজ হল লোহার গাডারের।প্রতিদিন ৫ ঘন্টা গাড়ি বন্ধ রাখার মাধ্যমে দৃশ্যমান কাজ সম্পূর্ণ সম্ভব হয়নি।
কিন্তু স্থানীয়দের দাবি,বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে সংস্কারের জন্য ৫-৭ লাখ টাকা খরচ করে বাকি টাকা রেলওয়ে প্রকৌশল বিভাগ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে আত্মসাৎ করার চেষ্টা চলছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কালুরঘাট সেতুতে আগের মতোই বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পাটাতন উঠে গেছে। আগের গর্তগুলোতে বিটুমিন দিয়ে ভরাট করা হলেও সেগুলো উঠে গেছে। কয়েকটি জায়গায় রেলিং ভেঙে গেছে। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেল প্রজেক্ট প্রিপারেটরি ফ্যাসিলিটি প্রকল্পের অধীনে কালুরঘাটে পুরনো রেল সেতুর স্থানে নতুন ‘রেলওয়ে কাম রোড সেতু’ নির্মাণের নকশা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে শুধু রেল সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়ায় প্রকল্পটির কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। পরবর্তীতে স্থানীয় পর্যায়ে সড়ক ও রেল সেতু নির্মাণের দাবি উঠলে পুরনো নকশায় সেতুটি নির্মাণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোরিয়ার সঙ্গে চুক্তি করে। প্রস্তাবিত নকশায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা ধরা হয়েছে ৭.২ মিটার। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ বলছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সেতুর উচ্চতা হতে হবে ১২.২ মিটার। এতে সেতুর বর্তমান নকশা তৈরি নিয়ে দ্বিধায় পড়েছে রেলওয়ের সেতু বিভাগ।এই বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ চট্টগ্রাম ৮ আসনের মাননীয় এমপি মোছলেম উদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, কোরিয়া সরকারের অর্থায়নে খুব শীঘ্রই কালুরঘাট নতুন সেতুর বাস্তবায়ন হবে।এই বিষয়ে তিনি উচ্চ পর্যায়ে কথা বলেছেন।

সর্বশেষ