spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

জাতীয় পতাকা অবমাননা করেননি শিক্ষক-কর্মকর্তারা, মামলা থেকে অব্যাহতি।

spot_img

আব্দুল কাইয়ুম বাবুঃ জাতীয় পতাকা অবমাননা করার মতো কোনো উপাদান না থাকায় এ বিষয়ে দায়ের করা মামলা থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন করেছেন আদালত।

- Advertisement -

গত ২৫ জুলাই রংপুরের অতিরিক্ত জেলা বিচারক মো. তারিখ হোসেন ওই শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গঠিত চার্জ বাতিল করে মামলা হতে তাদের অব্যাহতি দেন।

গত রবিবার এ বিষয়ে প্রকাশিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ একটি কপি দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের হাতে এসেছে। জানা যায়, ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা জাতীয় পতাকাসদৃশ ব্যানার হাতে স্বাধীনতা স্মারক চত্বরে ছবি তোলেন। ওই ছবি গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করলে তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিষয়টি নিয়ে বেশ সমালোচনা শুরু হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানকে প্রধান আসামি করে ১৯ জনের বিরুদ্ধে তাজহাট থানায় দু’টি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহামুদুল হক ও মশিউর রহমান এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম আরিফ।

এরপর রংপুর মেন্ট্রোপলিটন আদালত-৩ এটি এনজিআর মামলা হিসেবে রেকর্ড করে এবং গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে বিভিন্ন বিভাগের ১৮ জন শিক্ষক ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। উক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তারা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মোরশেদ হোসেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. পরিমল চন্দ্র বর্মণ, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান ও প্রভাষক মো. রহমতুল্লাহ, ফাইন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. নুর আলম সিদ্দিক, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. ছদরুল ইসলাম সরকার। কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রদীপ কুমার সরকার, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. কামরুজ্জামান ও প্রভাষক আবু সায়েদ, পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ শাহজামান, ড. মো. রশীদুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক চালর্স ডারউইন ও কর্মকর্তা শুভংকর চন্দ্র সরকার, মার্কেটিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ মাসুদ-উল-হাসান, ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোহাত আলী, রসায়ন বিভাগের প্রভাষক মোস্তফা কাইউম শারাফাত, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাম প্রসাদ বর্মণ এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক প্রভাষক মো. শামীম হোসেন।

বিচারিক আদালতের গঠন করা উক্ত চার্জকে চ্যালেঞ্জ করে অভিযুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তার পক্ষ থেকে রংপুর জজকোর্টে রিভিশন মামলা দায়ের করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী রাষ্ট্র উক্ত ফৌজাদারী মামলার বাদী হলেও বেরোবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক মাহামুদুল হক এবং গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মশিউর রহমান মামলায় পক্ষ হওয়ার জন্য আবেদন করেন।

রংপুর জেলাজজ তাঁদের আবেদন নামঞ্জুর করলে তাঁরা এবিষয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন এবং সেখানেও পরপর দুটি বেঞ্চ তাদের আবেদন না মঞ্জুর করেন। এর ফলে দীর্ঘদিন রিভিশন মামলার শুনানী ব্যহত হয়।

এরপর গত ২৫ জুলাই তারিখে দীর্ঘ শুনানি শেষে বিচারিক আদালতের চার্জশিট বাতিল করে মামলা থেকে আসামীদের অব্যাহতি দিয়েছেন রংপুর জজকোর্টের ২য় আদালতের বিচারক মো. তারিখ হোসেন।

এ রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন মামলার নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামীগণ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেননি। তারা ব্যানার আকারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ ব্যানার ব্যবহার করেছিলেন। তারা সরাসরি বিকৃত করে জাতীয় পতাকা কোন অফিস বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করেননি।

এছাড়াও আসামীগণকে স্বাধীনতাবিরোধী দলের সমর্থক মর্মে জিডিতে উল্লেখ করা হলেও প্রসিকিউশন রিপোর্টে তা পাওয়া যায়নি। বরং আসামীদের সকলেই সরকার দলীয় (স্বাধীনতার পক্ষের) শিক্ষক দলের সমর্থক। কাজেই তারা ইচ্ছাকৃতভাবে জাতীয় পতাকা অবমাননা করেছেন বলে বিশ্বাস করা যায় না।

বিচারক তার রায়ে আরও বলেন, ফৌজদারী অপরাধের প্রাথমিক ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে মিনস রিয়া (আসল উদ্দেশ্য), কিন্তু আসামীদের ফেসবুক স্ট্যাটাস ও পরবর্তী আচরণ হতে প্রতীয়মান হয় যে, জাতীয় পতাকা অবমাননা করার ইচ্ছা ও অভিপ্রায়ে তারা জাতীয় পতাকা নয় বরং ব্যানারে জাতীয় পতাকার অনুরূপ আকৃতি ব্যবহার করেছিলেন।

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ