spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সন্দ্বীপ চ্যানেলে লালবোট থেকে পড়ে যাত্রী নিখোঁজ, কতৃপক্ষের তালবাহানা

spot_img

ইশতিয়াক আহমেদ মেহরাজ: চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ চ্যানেলে যাত্রীবাহি সার্ভিস বোট থেকে লালবোটে নামার সময় এক যাত্রী সাগরে পড়ে নিখোঁজ হয়েছেন । শুক্রবার (১৯ আগস্ট) বেলা পৌনে ১১টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া উপকূলে সার্ভিস বোটটি পৌঁছালে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

- Advertisement -

ধারণা করা হচ্ছে, নিখোঁজ যাত্রীর নাম আব্দুল মন্নান । তানভীর মাহমুদ নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক যাত্রীর মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও ও স্থীরচিত্র দেখে আব্দুল মন্নানের পরিচয় নিশ্চিত করে স্বজনরা ।

আব্দুল মন্নানের স্ত্রী শেফা বেগম জানান, সকালে বোটে উঠে আমার স্বামী আমার এক আত্মীয়কে ফোন করেছেন । এরপর সন্দ্বীপের কুলে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমি ঘাটে যাই, কিন্তু কোন খোঁজ পাইনি ।

প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী তানভীর মাহমুদ বলেন, কুমিরা নৌঘাট থেকে সকাল ৯ টার দিকে একটি সার্ভিস ট্রলার যাত্রী নিয়ে সন্দ্বীপের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। সকাল সাড়ে দশটা দিকে সার্ভিস বোটটি সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। সন্দ্বীপ চ্যানেল খুবই উত্তাল ছিল। প্রচন্ড বাতাস হয়েছিল। ‌ সার্ভিস বোটটি উপকূলের বাইরে নোঙ্গর করে। এ সময় যাত্রী নামানোর জন্য একটি লাল বোট পৌঁছানোর পর দুটি লাল বোটে যাত্রী উপকূলে পৌঁছায়। তৃতীয় লাল বোটে প্রথমে তারা চারজন যাত্রী নামেন এরপর একজন ৫০ থেকে ৬০ বয়সী ব্যক্তি নামার সময় লাল বোটটি ঢেউয়ের কারণে সার্ভিস ট্রলার থেকে কিছুটা দূরে সরে যায়। এতে তিনি সাগরে পড়ে যান।

তিনি বলেন, কিন্তু সার্ভিস ট্রলার কিংবা লাল বোটে থাকা যাত্রীরা সাগরে পড়ে যাওয়া যাত্রীকে উদ্ধারে চিৎকার করলেও লাল বোটের শ্রমিকেরা উদ্ধারে এগিয়ে আসেনি। ফলে লোকটি ডুবে যায়। অনেকক্ষণ পর লাল বোটে থাকা যাত্রীদের নিয়ে নিখোঁজ লোকটিকে খুঁজতে শুরু করে। তিনি সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ঘাটে ছিলেন তখনও উদ্ধার হয়নি।

এদিকে ঘাট কতৃপক্ষের দাবি, এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি, যিনি নদীতে পড়ে গেছেন তিনি উঠে বাড়িও চলে গেছেন। যদিও এর স্বপক্ষে এখন পর্যন্ত কোন প্রমাণ তারা উপস্থাপন করেন নি। ফোন করে ঘাট ইজারাদার আনোয়ার হোসেন কে পাওয়া না গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করার অভিযোগ করছেন অনেকেই ।

এবিষয়ে খবর সংগ্রহ করতে দুজন সংবাদকর্মী মগধরা ১ নং ওয়ার্ডে নিখোঁজ আব্দুল মন্নানের বাড়িতে গেলে সেখানে প্রভাবশালী কিছু লোক তাদের বিভিন্নভাবে বাধা দেয়ারও অভিযোগ করছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন সংবাদকর্মী । তারা বলেন, রাত ১০ টা নাগাদ আমরা ভুক্তভোগীর বাড়ির সামনে গেলে কিছু লোক আমাদের সেখানে বাধা প্রদান করে, এসময় তারা নিখোঁজ মান্নানের স্ত্রী শেফা আক্তারকে ধমকের সুরে কথা বলছিলো ।

এদিকে সর্বশেষ মধ্যরাতে নিখোঁজ মন্নানের পুত্র সাগর আলী জানান, এখনো কোন খোঁজ মেলেনি বাবার, ঘাট ইজারাদার আনোয়ার হোসেনের কাছে গেলে তিনি আমার মাকে বলেছেন, আজ রাতটা দেখুন কাল সকালের মধ্যে না পেলে থানায় জিডি করবেন ।

উল্লেখ্য, কয়েকবছর আগে আজকের পত্রিকার সন্দ্বীপ প্রতিনিধী মিজানুর রহমানের জেঠাতো ভাই ভুট্টো চৌধুরী একই কায়দায় নিখোঁজ হয়েছিলেন। তিনি সরকারি চাকরি পেয়েছিলেন। চাকরী পাওয়ার পর তিনি ঢাকা থেকে সন্দ্বীপ আসছিলেন। ঘাটে এসেও উনার মায়ের সাথে উনার কথা হয়েছিল। এরপর আর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে পরিবার জানতে পারে বৈরি আবহাওয়ার কারণে তিনি বোট থেকে পড়ে গেছেন। বিষয়টি নিয়ে ভুট্টো চৌধুরীর স্বজনরা ঘাট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে ঘাট কর্তৃপক্ষ তাদের বলেছিল কোন যাত্রী নয় মালের বোঝা নদীতে পড়েছিল। কিন্তু ভুট্টো চৌধুরীকে আর কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য পরিবার ছাড়া অন্য কারও পক্ষ থেকে তাকে খোঁজাও হয়নি।

২০১৭ সালে স্টিমার থেকে নেমে লাল বোটে করে যাত্রীরা তীরে যাওয়ার সময় সেটি ডুবে যায়। এতে নারী শিশুসহ ১৮ জন প্রাণ হারান।

লালবোট থেকে কেন বারবার যাত্রী দুর্ঘটনার শিকার হয় এটা জানতে ঘাট ইজারাদারকে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি ।

ইএএম/পিএস/সিটিজি

spot_imgspot_img
spot_imgspot_img

সর্বশেষ