জ্বালানি তেলের দাম কমায় কমবে মূল্যস্ফীতি। সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। তেলের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন ভাড়াও কমার আশা করা হচ্ছে। এ জন্য কঠোর মনিটরিংয়ের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অপরদিকে বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে আবারও দাম সমন্বয় করা হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলে লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে দাম কমিয়েছে সরকার। সোমবার (২৯ আগস্ট) জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে নতুন এই দাম নির্ধারণ করা হয়। রাত ১২টার পর এই দাম কার্যকর হবে।
ফলে লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম ১১৪ টাকা থেকে কমে ১০৯ টাকা, কেরোসিনের দাম ১১৪ টাকা থেকে ১০৯ টাকা, অকটেনের দাম ১৩৫ টাকা থেকে ১৩০ টাকা এবং পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা থেকে কমে ১২৫ টাকা হলো।
এর আগে গত ৫ আগস্ট রাত ১২টার পর সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে সরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশেও তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়। কিন্তু দেশে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। সব পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এখন সেখানে কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমরা সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে কমিয়েছি। এর আগে রবিবার (২৮ আগস্ট) ডিজেলের আগাম কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। কিছুটা কর কমানোয় জ্বালানি তেলের মূল্যে সমন্বয় করা হলো। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে আবারও সমন্বয় করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সবদিক বিবেচনা করে দাম কমানোর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।’
এদিকে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন বলেন, ‘এত অল্প কমানোতে সাধারণ মানুষ কোনও সুবিধা পাবে কিনা সেটা বোঝা কঠিন। কারণ, এত অল্প কমালে পরিবহন ব্যয় কমবে বলে মনে হচ্ছে না। আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করে ১০ শতাংশের মতো কমানো গেলে সবার জন্য ভালো হতো।’
অপর জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিম বলেন, ‘তেলের দাম ৫ টাকার কমানোর ফলে পণ্যের দাম বা পরিবহন ভাড়া কমবে কিনা, তার ওপর নির্ভর করছে সাধারণ মানুষের সুবিধা। যদি সরকার এই দাম কমানোর পাশাপাশি এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি করতে পারে, তাহলে লাভ হতে পারে। না হলে এই টাকা ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যাবে।’
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের একাংশের সভাপতি নাজমুল হক বলেন, ‘আমরাও জানতে পেরেছি সরকার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম লিটারপ্রতি ৫ টাকা করে কমিয়েছে, যা আজ রাত থেকে কার্যকর হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। সাধারণ মানুষের কথা সরকার বিবেচনা করেছে, এটা অনেক বড় বিষয়।’
প্রসঙ্গত, রবিবার (২৮ আগস্ট) ডিজেলের আগাম কর অব্যাহতি ও আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এরপর সোমবার দুপুরে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তেলের দাম কমানোর ইঙ্গিত দেন।
দাম কমানোর ঘোষণার পর একজন মোটরসাইকেল চালক জানান, দিনে তার ২ লিটার তেলের প্রয়োজন হয়, সেই হিসাবে প্রতিদিন তার ১০ টাকা সাশ্রয় হবে। একইভাবে একজন প্রাইভেট গাড়ির মালিক জানান, দিনে গড়ে তার তেল প্রয়োজন হয় ৫ লিটার। দাম কমানোর পর এখন তার প্রতিদিন ২৫ টাকা সাশ্রয় হবে। তবে দূরপাল্লার পরিবহন বা গাড়িতে সাশ্রয় আরও বেশি হবে বলে জানা যায়।