আমাজনের রহস্যময় ‘গর্তমানব’ অধ্যায়ের সমাপ্তি

শেষ হলো ব্রাজিলের আমাজন বনাঞ্চলে বাস করা রহস্যময় এক ‘গর্তমানব’ অধ্যায়। একটি উপজাতি সম্প্রদায়ের শেষ ব্যক্তি ছিলেন তিনি, তাকে বলা হতো পৃথিবীর সবচেয়ে নিঃসঙ্গতম মানুষ।

- Advertisement -

আদিবাসী সংস্থা ফুনাইয়ের বরাতে সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে সোমবার তার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে।

দীর্ঘ ২৬ বছর আগে বলিভিয়া সীমান্তের কাছে আমাজনের গভীরে ব্রাজিলের রন্ডোনিয়া রাজ্যে গর্ত খুঁড়ে থাকতে শুরু করেন এই রহস্যমানব। তার নাম ও ভাষা কিছুই জানা যায়নি।

প্রাণীদের ফাঁদে ফেলা এবং লুকিয়ে রাখার জন্য গভীর গর্ত তৈরি করার অভ্যাস ছিল এই ব্যক্তির। এ জন্য তাকে বলা হতো গর্তমানব। গত ২৩ আগস্ট তাকে তার কুঁড়েঘরে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

সব ধরনের যোাগযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলেও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তির ওপর নজরদারি অব্যাহত রাখছিল। মাঝেমধ্যে তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে যাওয়া হতো।

গার্ডিয়ান বলছে, বাড়িঘরে হামলার পরই বাসস্থান ছেড়ে জঙ্গলে পাড়ি জমান এই রহস্যমানব। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। তার গোষ্ঠীর আর কেউই বেঁচে নেই এখন।

রহস্যময় এই ব্যক্তি সম্পর্কে খুব বেশি জানা নেই ব্রাজিল সরকারের। তেমন একটা তথ্য জোগাড় করতে পারেনি উপজাতিদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোও। তা সত্ত্বেও ব্রাজিলসহ সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি।

ফুনাইয়ের কর্মী মারসেলো দস সান্তোস বলেন, উপজাতি নয় এমন বাসিন্দাদের কাছ থেকে খুব বাজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছিল এই ব্যক্তির। এ জন্যই তিনি সবকিছু থেকে দূরে ছিলেন।

কুঁড়েঘরে একটি ঝুপড়ির মধ্যে পড়ে থাকা ওই ব্যক্তির মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন মেলেনি এবং ওই এলাকায় অন্য কোনো মানুষের উপস্থিতিও পাওয়া যায়নি।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাকৃতিক কারণে মারা গেছেন এই রহস্যমানব। ফেডারেল পুলিশ তার মরদেহের ফরেনসিক পরীক্ষা করবে।

এর আগে ২০০৯ সালের শেষ দিকে এই ব্যক্তি বন্দুকধারীদের গুলিতে আহত হয়েছিলেন বলে তথ্য দিয়েছে আদিবাসী অধিকার গোষ্ঠী সারভাইভাল ইন্টারন্যাশনাল।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ড্রোন ও ত্রিমাত্রিক স্ক্যানার ব্যবহার করে ওই উপজাতির ব্যাপারে জঙ্গলে পর্যবেক্ষণ করে একই রকম আরও ৫৩টি কুঁড়েঘর চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিটি ঘরের ভেতরে পাওয়া গেছে একটি করে গর্ত।

ব্রাজিলের এই আমাজান বনাঞ্চলে যোগাযোগ এড়িয়ে বিচ্ছিন্নভাবে বসবাস করা এমন অন্তত ১১৪ জন আদিবাসীকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে আমাজনে প্রথমবারের মতো রহস্যমানবকে দেখতে পান তারা। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পর আবার তাকে দেখা যায় ২০১৯ সালে। তার বয়স পঞ্চাশের আশপাশে।

কখনও জঙ্গলের বাইরে না আসায় এই ব্যক্তির ছবি তোলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে অনেকবার। তবে একবার জঙ্গলে রেখে আসা ক্যামেরায় এক ভিডিওচিত্রে ধরা দিয়েছিলেন তিনি।

আমাজনের বুকে বহু বছর ধরে বাস করে আসা এক আদিম উপজাতির শেষ প্রতিনিধি এই রহস্যমানব। ১৯৯৫ সালে তার উপজাতির জীবিত পাঁচজন মারা যান আধুনিক পৃথিবীর বাসিন্দাদের আক্রমণে।

ফুনাইয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, ঘাস দিয়ে বানানো কুঁড়েঘরের চারদিকে ভুট্টা ও পেঁপের চাষ করতেন এই ব্যক্তি। শরীরে থাকত পশুর ছাল। সুড়ঙ্গ খোঁড়া, শিকারে যাওয়া আর মাছ ধরার জন্য তিনি ব্যবহার করতেন আদিম ধারালো যন্ত্র।

সর্বশেষ