অগ্রণী ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের প্রধান আব্দুস সালাম মোল্লাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আনীত দুর্নীতির অভিযোগ পুনরায় অনুসন্ধান প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে অনুসন্ধান ও অভিযোগ থেকে ওই তিনজনকে অব্যাহতি দেওয়া সংক্রান্ত দুদকের নথি তলব করেছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ ও সঞ্চয় মণ্ডল। অন্যদিকে দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহীন আহমদ।
শুনানিতে বাদীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকে জনগণের রক্ষিত অর্থ কিছু অসাধু কর্মচারী আইন-কানুন না মেনে শত শত কোটি টাকা বিভিন্নভাবে প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয় এবং এ থেকে কমিশন নিয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকা স্বত্বেও শুধু নামমাত্র অনুসন্ধান পরিচালনা করা হয়েছে, যা দুদক ম্যানুয়াল-২০১৮ অনুযায়ী হয়নি। দুদক আইনে নির্দেশনা আছে— সম্পত্তি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কিন্তু এইক্ষেত্রে তা না করেই অনুসন্ধান কর্মকর্তার সুপারিশ অনুসারে দুদক সংশ্লিষ্টদের দায়মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দুদকের সার্কুলার অনুসরণ করে বিবাদীদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান না করে অনুসন্ধান কার্যক্রম সমাপ্তি ঘোষণার সিদ্ধান্তকে কেন অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং ২০১৯ সালের ১ আগস্ট পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগের বিষয়ে পুনরায় তদন্ত করার কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালত অপর এক আদেশে দুদকের চেয়ারম্যান ও সচিবকে অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট নথি আগামী ৩ নভেম্বরের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়ে ৬ নভেম্বর পরবর্তী আদেশের তারিখ নির্ধারণ করেছেন।
এর আগে অগ্রণী ব্যাংকের ক্রেডিট ডিভিশনের প্রধান আব্দুস সালাম মোল্লার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে ৬/৭ শ কোটি টাকা ঋণ বরাদ্দ করে তার মাধ্যমে অবৈধভাবে কমিশন আদায় করে বসুন্ধরা, গুলশান ও ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন জায়গায় অনেক অবৈধ সম্পত্তি অর্জন করার বিষয়ে ব্যাংকের কর্মচারীরা দুদকে আবেদন করেন। ওই আবেদনের ওপর ভিত্তি করে দুদক অনুসন্ধান করে।
অনুসন্ধানকালে সংশ্লিষ্ট আব্দুস সালাম মোল্লা ও তার সহযোগী আবুল কাশেম ও রাকিবুল ইসলামের সম্পদ দুদকের ম্যানুয়াল অনুসারে অনুসন্ধান না করে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান জাবের ও জুবায়ের গ্রুপ, ডলি কনসট্রাকশন, জজ মিয়া গ্রুপ এবং সোনালী টেক্সটাইলের সম্পদের হিসাব অনুসন্ধান না করে তাদেরকে দায়মুক্তি দিয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
পরে কমিশনের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে জনস্বার্থে গত ২৯ আগস্ট হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিটটি দায়ের করেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব, দুদকের চেয়ারম্যান ও সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টিলিজিন্সের প্রধান, অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মো. আব্দুস সালাম মোল্লা, মো. আবুল কাশেম এবং মো. রাকিবুল ইসলামকে রিটে বিবাদী করা হয়।